ইনসাইড থট

ই-কমার্স-টা ফটকাবাজদের হাত থেকে পরিত্রাণের উপায় কি?


প্রকাশ: 30/07/2022


Thumbnail

‘ট্রান্সকম’ থেকে বাসার স্যামসাং স্মার্ট টিভি কেনার ৪ বছরের মাথায় নষ্ট হয়ে গেলে অভিযোগ জানাবার নয়দিন পরে তাদের সার্ভিস থেকে লোক এসে বলে গেল প্যানেল পাল্টাতে হবে আর খরচ পড়বে চল্লিশ হাজার টাকার মতো। এই টাকায় আর কিছু ভরে একটা নতুন টিভি-ই কেনা যায়। কিছুদিন এই-উই করে চালিয়ে শেষে এই কোরবানী ঈদের আগেরদিন (৯ জুলাই) অনলাইনে ট্রান্সকম ডিজিটাল থেকে একটা নতুন উন্নতমানের টিভি কিনলাম। দুপুরে ডেলিভারী দেবার কথা থাকলেও তা এসে পৌছালো সন্ধ্যায়।

ডেলিভারীম্যান বক্সে ভরা টিভি রেখে দিয়ে জানিয়ে দিয়ে গেল একজন এসে সেট করে দিয়ে যাবে। সেই লোক আর আসেনি। ঈদ গেলো। নানা তদবিরের পর ঈদের পরেরদিন দুপুরের দিকে একজন এসে জানিয়ে গেলো এই টিভি ভালো না, সাউন্ডে সমস্যা আছে। অনলাইনের সেই সেলস মেয়েটিকে জানানো হলো; কিন্তু কোন রা নেই! শেষে ছোট খাটো নালিশের পরে সে পাল্টে দেবে বলে জানালো। ১৪ তারিখে একজন এসে আর একটা টিভি রেখে আগেরটা নিয়ে চলে গেল। সেট আপ করতে গত দুই সপ্তাহে কোন লোক আসেনি। আমি নিজেই টিভি রেকে রেখে, আকাশ স্যাটেলাইটের লোক ডেকে গুছিয়ে নিয়ে টিভি দেখছি। গত দুইদিন যাবৎ লক্ষ্য করছি টিভির ছবি মাঝে মধ্যে মধ্যেই কেঁপে উঠে। আমি ট্রান্সকম-কে জানালে তারা স্যামসাং-কে জানাতে বলল। স্যামসাং আরও দুইদিন পরে লোক পাঠালো, আজ (৩০ জুলাই) সকালে এসে বলে গেলো- এরকম হলে ছবি তুলে রাখবেন ও আমাদের কাছে পাঠাবেন। তার মানে হলো আমি টিভি দেখতে বসে সামনে ক্যামেরা সেট করে রাখবো!

টিভি-টা কেনা হয়েছে ‘ট্রান্সকম’ থেকে কিন্তু তাদের কোন দায় নেই। তাদের কল সেন্টারে ফোন দিলে নানারকম অপশন আসে ও শেষতক কারও দেখা মিলেছে তো এক কথায় শেষ, আমরা জানিয়ে দিচ্ছি। কাকে, কখন কি জানাবে কোন খবর নেই! স্যামসাং থেকে ফোন করে বারবার একই প্রশ্ন ‘টিভি-তে কী সমস্যা হয়’? গত দুইদিনে অন্তত বার দশেক এই প্রশ্নের উত্তর আমি দিয়েছি। যা হোক, স্যামসাং থেকে যে লোক আজ দেখতে এলো তিনি আমার কাছে ওয়ারেন্টি পেপার ও ক্রয় রশিদ চাইলেন। আমি একটা কাগজ অনলাইন থেকে ডাউনলোড করে নিয়েছিলাম সেটার সাথে এই টিভি-র সিরিয়াল নাম্বার ও অন্যান্য সূত্র মিলছে না! আমি তৎক্ষণাৎ ট্রান্সকমের সেই সেলস মেয়েটিকে খুদে বার্তায় লিখলাম তা যেন আমাকে দ্রুত পাঠানো হয়। আজ সারাদিনে তিনি তা আমাকে দেননি, ফোনও ধরেননি। আমি কল সেন্টারে ফোন দিলাম তারা উপযুক্ত স্থানে জানিয়ে দেবে বলে আমাকে আশ্বস্ত করলো এই বলে যে আমি মেইলে কিছুক্ষণের মধ্যেই পেয়ে যাবো। এই লেখার রচনাকাল সন্ধ্যা। কোন কাগজ আসেনি। ফলে আমি স্যামসাং থেকে সেবা বঞ্চিত হলাম ভদ্রলোক ছবি আবার খারাপ এলে আমাকে ক্যামেরায় তুলে তাঁকে পাঠাবার পরামর্শ দিলেন তবে সেবা নিতে ওই কাগজটা লাগবে জানিয়ে গেলেন।

এখন আমার প্রশ্ন এসবে নয় কারণ আমরা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের এসব কাজে নিয়োজিত করেছি কিন্তু উপযুক্ত প্রশিক্ষণ তাদের দেইনি। দেইনি কারণ কি? কারণ একটাই- চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে যেন তেন প্রকারে পণ্য বেঁচে বাজার থেকে আমার মুনাফা বের করে আনা। ‘কাস্টমার কেয়ার’ বলে এসব বাজারে যে কথা চালু আছে তার ধারে কাছেও ট্রান্সকম, স্যামসাং এরা নেই। যা হোক, কিছুদিন আগে ই-কমার্সের দৈন্যদশা দেখে একটা জাতীয় দৈনিকে লেখা লিখেছিলাম এই বাজার ফটকাবাজদের হাতে গেলো কেমন করে, এখন নিজের দুর্দশায় মনে আসছে, এই ফটকাবাজি থেকে ই-কমার্স বের করে আনার উপায় কি? 

‘ট্রান্সকম’ লতিফুর রহমান সাহেবের প্রতিষ্ঠান। আমরা তাঁকে সম্মান করতাম তাঁর উদ্যোগী বৈশিষ্ট্যের জন্যে। এখন কি তিনি ওপার থেকে কিছু দেখতে পান? বেঁচে থাকলে তিনি ডেকে নিয়ে একটা সমাধানের উপায় করে দিতেন, ব্যবসায়ের সেই নীতি-নৈতিক চেতনার পরিচয় আমরা নানা সময়ে তাঁর কাছ থেকে পেয়েছি কিন্তু কোথায় যেন এখন একটা কর্পোরেট সুগন্ধি এসে ই-কমার্স শিল্পকে বিতর্কিত করে সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তোলাকেই চ্যালেঞ্জ করছে বলে মনে হচ্ছে। এই নিয়ে এখুনি ভাবা দরকার ও সতর্ক থাকা দরকার।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭