ইনসাইড আর্টিকেল

তরুণদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধির কারণ


প্রকাশ: 31/07/2022


Thumbnail

বর্তমানে দেশে গড়ে ৩৫ জন মানুষ আত্মহত্যা করে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার এক সমীক্ষা অনুযায়ী, বিশ্বে বছরে আট লক্ষ মানুষ আত্মহত্যা করে মারা যান। দৈনিক ১১৯ জন এবং লাখে ১৬ জন। কয়েকবছর আগেও এই সংখ্যা এতটা বাড়তি ছিল না। তবে গত দুইবছরে দেশে আত্মহত্যা প্রবণতা এবং আত্মহত্যার সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। বয়সীমার ভিত্তিতে দেখা যায় আত্মহত্যায় মৃত্যু হওয়ার সংখ্যা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বেশি। গতবছরে দেশে ১০১ জন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। 

ইদানীং সোশ্যাল মিডিয়ায় লাইভে এসে আত্মহত্যা করার উদাহরণও অনেক বেড়েছে। এর পিছনে মনোবিজ্ঞানীরা অনেক কারণ একসাথে দায়ি করেছেন। একাকীত্ব, বিষন্নতা, নিসঙ্গতা ইত্যাদি নানা কারণ থেকেই মানুষ এমন কাজ করতে পারে। তবে কোনো রকম ভার্চুয়াল সাইটে এই কাজগুলোর নেতিবাচক প্রভাব সকলের মধ্যেই কম বেশি পরে। অনেকেই তখন লাইভে বা ভার্জুয়াল জগৎে সকলে দেখিয়ে আত্মহত্যা করার পক্ষে যুক্তি খুঁজে পান। আবার কেউ কেউ  এই ধরণের কাজকে "বীরত্ব" ভেবে থাকেন।

বিবিসি এর এক জরিপে দেখা গেছে, দেশে গত বছরে প্রায় ২০ হাজার মানুষ ফাঁসিতে ঝুলে কিংবা বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংখ্যায় তুলনামূলক বেশি। জরিপ মতে, করোনাকালীন সময়ে আত্মহত্যার পরিমাণ বেড়েছে ১৭ দশমিক ৩৬ শতাংশ। যা বিগত বছর গুলোর তুলনায় বেশি। আত্মহত্যা ঘটনার মামলা দায়ের হয়েছে ১৬৬ টি ২০২০-২০২১ সালের ৩১ সেপ্টেম্বর অবদি। কিন্তু এর বাইরেও অনেক ঘটনা রয়ে গেছে যা প্রকাশ্যে আসেনি। তবে বিগত কয়েকবছরে এই হার বা মান এতটাই বেড়েছে এবং শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যা উদ্যোগের কারণে প্রাণহানির সংখ্যাও যে হারে বৃদ্ধি পেয়েছে তা খুবই দুশ্চিন্তাজনক। 

শহরাঞ্চলে আত্মহত্যার সংখ্যা বেশি। উন্নয়নশীলতা প্রক্রিয়া যত দ্রুত বৃদ্ধি ততই যেন জীবন মানের ক্ষয় হওয়াতে মানুষ মৃত্যুর পথ বেছে নিছে। অর্থাৎ সম্পূর্ণ বিষটার উপর যেমন একটা যোগসূত্র জীবনযাত্রার মানের সাথে আছে, তেমনি এই মানের উপর নির্ভর করছে আত্মহত্যা সংখ্যা ঊর্ধ্ব বা নিম্ন গতি। 

সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে "অ্যানথ্রপলজি" বিভাগে অধ্যায়নরত একজন শিক্ষার্থী,  ১৬ তলা বহুতল ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তাছাড়া করোনাকালীন সময়ের শুরু থেকে  বর্তমান দিন অবদি বহু শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যা করেছেন। কেন দৃষ্টিকটুভাবে বিগত বছর গুলোতে আত্মহত্যার সংখ্যা এবং এতে মৃত্যুহার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশি তা নিয়ে বাংলা ইনসাইডার কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মতামত জানতে চেয়েছে। আত্মহত্যার এমন আকস্মিক বৃদ্ধি হার সম্পর্কে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থীরা জানান, "প্রযুক্তির উপর দৈনিক নির্ভরশীলতা মানুষের সামাজিক জীবনে যোগাযোগহীনতা বাড়িয়ে তুলছে, এতে করে মানুষের মধ্যে একাকীত্ব,  বিষন্নতা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে তেমনি প্রতিহিংসা, প্রতিযোগিতা মূলক মনোভাব তৈরি করছে নানা মানসিক জটিলতার। এতে মানুষ একা অনুভব করে বা নানা চাপ অনুভব করে যারই পরিণাম আত্মহত্যা।" 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী মাইদুল ইসলামের কাছে এই প্রসঙ্গে মতামত জানতে চাইলে জানান, "বর্তমানে করোনা অতিমারির দুই বছর অতিক্রম করার পর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর পড়াশোনা কেন্দ্রিক নানা মানসিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে পিছিয়ে পরার কারণে, ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা মূল বিষন্নতার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাছাড়া পারিবারিক বোঝাপড়ার অভাব অন্যতম বড় কারণ এই ক্ষেত্রে।" তিনি আরো জানান, অনেক সময় বন্ধুবান্ধব রা "কি ভাববে" অথবা যথাযথ বুঝবে না এই মনোভাবের জন্যও অনেকে অসুবিধার কথা প্রকাশ করতে চান না, এতে নিজেদের দূর্বলতা প্রকাশ পেয়ে যাবে সেই অস্বস্তিতে। আগে যৌথ পরিবারে বেড়ে উঠার সুযোগ ছিল বেশি। নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির সংখ্যা আর পরিবারের সদস্যদের ব্যস্ততা যত বাড়ছে ততই টেকনোলজি দিয়ে অনেকে নিজেদের সাময়িকভাবে ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করলেও এতে শেষ অবদি বিষন্নতা বা জটিলতা বাড়ে, কমে না। 

আঁচল ফাউন্ডেশন ২০২১ সালের মার্চ মাসে এক প্রতিবেদনে জানায়, করোনাকালে এক বছরে সারা বাংলাদেশে ১৪ হাজার ৪৩৬ জন আত্মহত্যা করেছেন৷ ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৩টি জাতীয় পত্রিকা, ১৯টি স্থানীয় পত্রিকা, হাসপাতাল ও থানা থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। 

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের সাংবাদিকতা বিভাগের আরো একজন শিক্ষার্থী থেকে মানসিক স্বাস্থ্য ও আত্মহত্যার হার বৃদ্ধি সম্পর্কে আলোচনা করলে তিনি বাংলা ইনসাইডারকে জানান, "বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের  যে ধরণের আর্থ-সামাজিক চাপের সম্মুখীন হতে হয় তা কঠিন। কর্মসংস্থানে যথাযথভাবে সুযোগ পাওয়া,  কিংবা কারিকুলাম এক্টিভিটির সিস্টেম অনেক সময় চাপের কারণ হয়ে দাঁড়াই। তাছাড়া মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের অর্থনৈতিক টানাপোড়েন একটা বড় কারণ। পারিবারিক, নিজস্ব এবং পারিপার্শ্বিক জীবনের প্রভাব তো আছেই যা মানুষের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে যায়,  কিন্তু সেসব সমস্যা নিয়ে আলোচনা করার মত সঙ্গ সব সময় গড়ে না উঠার কারণেই এই সমস্যা বাড়তে থাকে নিজেদের মধ্যে যার ভয়ংকর ফলাফল হয়ে দাঁড়ায় আত্মহত্যা। "

ইতোমধ্যে সরকারি ও বেসরকারি অনেক সংস্থা মানসিক স্বাস্থ্য কল্যাণ সম্পর্কিত বিভিন্ন সচেতনা বৃদ্ধি উদ্দেশ্যে বেশ কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নানা জরিপ, পরীক্ষার উপর ভিত্তি করে মানসিক স্বাস্থ্য সচেতনা মূলক এইসব কর্মসূচির কাজ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। 

মানসিক স্বাস্থ্যও যে শারীরিক স্বাস্থ্যের মতই গুরুত্বপূর্ণ তা অনেকেই বুঝতে পারেন না৷ পৃথিবীতে  নগরাঞ্চলেই আত্মহত্যার ঘটনা বেশি ঘটে। বাংলাদেশেও তার প্রভাব পড়ছে৷ প্রযুক্তি মানুষকে যেমন সচেতন করে তেমনি আত্মহত্যাপ্রবণ করে৷ তাই প্রযুক্তির ব্যবহার, যথাযথ যোগাযোগ, বোঝাপড়া এবং সহমর্মিতা হতে পারে কোনো তরুণ প্রাণ অকালে ঝরে না যাওয়ার প্রতিষেধক।  


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭