হঠাৎ হৃদপিণ্ড কাজ করা বন্ধ করে দিলে তাকে বলে হার্ট ফেইলিওর যা বেশ জটিল একটি সমস্যা। হার্ট অকার্যকর হলে হৃৎপিন্ড সংকোচনের মাধ্যমে রক্ত চলাচল করতে পারে না ফলে ফুসফুস, পা এবং পেটে জমে যায় পানি। এই হার্ট ফেইলিওর হতে পারে হঠাৎ কিংবা ধীরে ধীরে হৃদরোগের কারণে।
অনেকেরই ধারণা যে তরুনরা সাধারণত হৃদরোগে আক্রান্ত হয় না যা একটি ভুল ধারনা। বরং বর্তমান সময়ে তরুনরাই বেশি হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আর এই হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ হলো অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা।
অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা সব থেকে বেশি দেখা যায় তরুনদের মধ্যেই। অনেকেই সঠিক সময়ে ঘুম, খাওয়া দাওয়া সময় মত করেন না৷ বাইরের স্ট্রিটফুড ও ফাস্টফুডের প্রতি তাদের আকর্ষণ বেশি৷ আর বাইরের এ খাবারগুলোই বাড়ায় হৃদরোগের ঝুঁকি৷ আর এই খাবারগুলোর কারণেই স্থুলতা ও উচ্চ রকতচাপ বৃদ্ধি পায় যার ফলে বর্তমানে ৩৫-৪০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যেও হৃদরোগের প্রবণতা দেখা দিচ্ছে।
হার্ভার্ড হেলথ রিপোর্টের মতে হার্ট অ্যাটাক করোনারি আর্টারি অ্যানাটমির জন্মগত অস্বাভাবিকতার কারণে প্রায় ৪ শতাংশ তরুণ প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে হয়। এছাড়া ড্রাগের অপব্যবহার, ধূমপান ও অন্যান্য অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসের কারণে ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
শরীরের অতিরিক্ত ওজনও কিন্তু হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতাকে বাধাগ্রস্ত করে। স্থূলতা ও কার্ডিওভাসকুলার রোগের বিকাশের মধ্যে একটি যোগসূত্র রয়েছে। স্থূলতা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়াতে বিশেষ অবদান রাখে। তাই হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে অবশ্যই সঠিক ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা প্রয়োজন।
২০২১ সালের আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বের জনসংখ্যার ৩৯-৪৯ শতাংশ বা ২.৮-৩.৫ বিলিয়ন মানুষ অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতায় ভুগছে। প্রতিবেদনে থেকে আরও জানা যায়, স্থূলতার কারণে ২০১৫ সালে ৪ মিলিয়ন মৃত্যুর মধ্যে হৃদরোগজনিত মৃত্যুর দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি।
হৃদরোগের আরও একটি অন্যতম কারণ হলো শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা। শরীরচর্চা না করা ধূমপান ও উচ্চ রক্তচাপের মতোই ক্ষতিকর হৃদযন্ত্রের জন্য। হৃদরোগের ৩৫ শতাংশ ঘটনাই ঘটে শারীরিক নিষ্ক্রিয়তার কারণে। শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা হার্টকে সঠিকভাবে সচল রাখে।
তাই হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সপ্তাহে তিনবার ৩০-৬০ মিনিট অ্যারোবিক ব্যায়াম করা উচিত। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন কমপক্ষে ৩০ মিনিটের মাঝারি কার্যকলাপে নিজেকে নিযুক্ত করা উচিত। এর পাশাপাশি শারীরিকভাবেও হতে হবে বেশ পরিশ্রমী । একটানা বেশিক্ষণ বসে বা শুয়ে থাকা শরীরকে অলস করে।
হৃদরোগের যেসব লক্ষণে সতর্ক হতে হবে-
> স্বাভাবিক শারীরিক ক্রিয়াকলাপগুলো চালিয়ে যেতে অসুবিধা বোধ করলে
> বয়সের তুলনায় নিজেকে বেশি ক্লান্ত মনে করা
> শ্বাসকষ্ট অনুভব করা
> মাথা ঘোরা
> বুক ধড়ফড় করা
> প্রায়ই অজ্ঞান হয়ে পড়া
> শরীরের নির্দিষ্ট কোনো অংশে একনাগাড়ে ব্যথা অনুভব করা ইত্যাদি।
এসব লক্ষণ দেখলে অবশ্যই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা জরুরি।