ইনসাইড পলিটিক্স

৩ শর্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে আসতে পারে বিএনপি


প্রকাশ: 01/08/2022


Thumbnail

বিএনপি এখন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সোচ্চার। এই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে তারা বিভিন্ন রকম কর্মসূচি গ্রহণ করছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ সংকটসহ বিভিন্ন ইস্যুতে তারা কর্মসূচি শুরু করেছে। এই কর্মসূচি ক্রমশ সহিংস হয়ে উঠেছে। গতকাল ভোলায় বিএনপির প্রতিবাদ সমাবেশে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। সেখানে একজন মারা যায়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছে যে, বিএনপি ইচ্ছে করেই রাজনীতিকে উত্তপ্ত করতে চাচ্ছে। বিদ্যুৎ সংকটসহ বিভিন্ন ইস্যুকে সামনে নিয়ে এসে আসলে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে হাসিল করতে চায়। আর এ লক্ষ্যেই তারা আস্তে আস্তে রাজপথকে উত্তপ্ত করতে চাচ্ছে। তবে বিভিন্ন দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, কূটনীতিকদের সাথে আলাপ-আলোচনায় বিএনপি অন্য মনোভাব দেখিয়েছে। বরং বিএনপি বলেছে যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে তারা কিছু শর্তসাপেক্ষে সরে আসতে পারে। বিএনপি বলছে তাদের লক্ষ্য হলো একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। যে নির্বাচনে জনগণের মনোভাবের প্রতিফলন ঘটবে এবং জনগণ যাকে ভোট দেবে তারাই নির্বাচিত হবে। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য বিএনপি আসলে কিছু শর্তের বিষয় কূটনীতিকদের সাথে আলোচনা করছে। একাধিক কূটনীতিক সূত্র বলছে যে, বিএনপি মোটামুটি তিনটি শর্ত পূরণ হলে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে আসতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে,

১. ইভিএম থেকে সরে আসার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা: বিএনপি মনে করছে যে, ইভিএমের মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে না। ইভিএমে ভোট হলে শেষ পর্যন্ত এই ভোটে কারচুপির শঙ্কা রয়েছে বলে বিএনপি নেতাদের বিশ্বাস। আর এ কারণেই তারা ইভিএমবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করেছে। কূটনীতিকদের কাছেও তারা ইভিএমের আপত্তির কথা জানিয়েছে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের বড় শর্ত যে, নির্বাচন কমিশন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইভিএমে করবে না।

২. আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক এবং জাতিসংঘের তত্ত্বাবধান: বিএনপি বলছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের একটি প্রধান বিকল্প হতে পারে যে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক মহলের উপস্থিতি এবং জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। নির্বাচনে যে সরকারই ক্ষমতায় থাকুক না কেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ এবং তদারকি করবে জাতিসংঘ। সম্প্রতি জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির সাথে বৈঠকেও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন এবং এ ব্যাপারে তারা একটি সুনির্দিষ্ট লিখিত প্রস্তাবও দিয়েছেন বলে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। বিএনপি নেতারা মনে করছে যদি নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ তদারকি করে তাহলে সরকারের জন্য নির্বাচনে কারচুপি করা সহজ হবে না। এই বাস্তবতায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প হিসেবে এটিকেও একটি পথ বলে মনে করছে।

৩. নির্বাচনকালীন সরকারে বিএনপি'র প্রতিনিধিত্ব: বিএনপি কার্যত ২০১৪ এর যে প্রস্তাব সেই প্রস্তাবটিকে পুনঃ উচ্চারণ করতে চাইছে। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন যে, সকল দলের সম্মিলিত অংশগ্রহণে একটি নির্বাচনকালীন সরকার। এই শর্তে তিনি বিএনপিকে গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ারও প্রস্তাব করেছিলেন এবং এজন্য তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে চায়ের দাওয়াতও দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করে এবং বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকারে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানায়। বিএনপির অনেক নেতাই মনে করেন যে, তখন এই সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল। এখন বিএনপি বলছে যে, ইভিএম থেকে সরে আসা এবং আন্তর্জাতিক তদারকির পাশাপাশি যদি নির্বাচনকালীন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে বিএনপি'র অংশগ্রহণ থাকে তাহলে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি থেকে সরে আসতে পারে। তবে বিএনপি বলছে যে, এটি এখনই প্রকাশ করতে রাজি নয় তারা। আগে নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের বাস্তবতা তারা বুঝতে চায় এবং বিএনপি মনে করে যে, আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে দাতা সংস্থাগুলোর যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। এই বাস্তবতায় বিএনপিকে উপেক্ষা করা সরকারের জন্য খুব সহজ হবে না।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭