ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

শ্রীলঙ্কার পরিণতি বরণ করতে যাচ্ছে পাকিস্তান?


প্রকাশ: 02/08/2022


Thumbnail

কিছুদিন আগে ভিজুয়াল ক্যাপিটালিস্টের প্রকাশিত সবচেয়ে বেশি ডিফল্ট রিস্কে আছে এমন দেশগুলোর র‍্যাংকিংয়ে ৪ নম্বরে উঠে আসে পাকিস্তানের নাম। এই র‍্যাংকিংয়ে প্রথম ১০ এ থাকা পাকিস্তানই এশিয়ার একমাত্র দেশ। সেখানে দেখা যায়, পাকিস্তানের সরকারি ঋণের পরিমাণ তার জিডিপির ৭১.৩%, যা ডলারে ২৪৮.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান। জুলাই মাসে পাকিস্তানের মুদ্রাস্ফীতির হার বেড়ে দাড়ায় ২৪ দশমিক ৯৩ শতাংশে। বর্তমানে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকে বৈদেশিক রিজার্ভের পরিমাণ ৮.৫৭৫ বিলিয়ন ডলার, যা দিয়ে কেবলমাত্র ২ মাসের আমদানি খরচ বহন করা সম্ভব।

পরিসংখ্যান এবং বাস্তবতা, সবমিলিয়ে বোঝাই যাচ্ছে পরবর্তী শ্রীলঙ্কা হবার একদম দ্বারপ্রান্তে পাকিস্তান। যদিও এ নিয়ে দেশটির সরকারপ্রধানের নেই কোনো মাথাব্যথা। নেই এই ঘাটতি থেকে বেরিয়ে আসার কোনো দৃঢ় নীতি বা পরিকল্পনা। এসব উপেক্ষা করে তারা নিজেদের মধ্যে কাঁদা ছোড়াছুড়ির খেলায় মত্ত।

পাকিস্তানের জন্য অর্থনৈতিক সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি নতুন কিছু নয়। ভারত-পাকিস্তান আলাদা হবার পর থেকেই অর্থনৈতিক সংকট পাকিস্তানের গলায় বিষকাঁটার মত সবসময়ই লেগে ছিল। অর্থনৈতিক সংকটকে পাকিস্তান কখনোই পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ফলে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে এটি সবচেয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

পাকিস্তানের এমন সংকটের পেছনে বেশকিছু দীর্ঘমেয়াদী কারণ রয়েছে। সেই কারণগুলো হলো- 

রাজনৈতিক অস্থিরতা: একটি দেশের অর্থনৈতিক বিকাশের অন্যতম চাবিকাঠি হলো বৈদেশিক বিনিয়োগ। একটি দেশে যত বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়বে, দেশের অর্থনীতি ততই অগ্রসর হবে, চাকুরীর সুযোগ বৃদ্ধি পাবে, বেকারত্ব কমবে, জিডিপি বৃদ্ধি পাবে, জাতীয় রাজস্ব বৃদ্ধি পাবে। তবে পাকিস্তান কখনোই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারেনি। এর জন্য দায়ী দেশটি মধ্য আজন্ম চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের জন্মের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দেশটির কোন সরকার তার ৫ বছর মেয়াদ শেষ করতে পারেনি। প্রতিবার কোন না কোন ভাবে সরকার উচ্ছেদ হয়ে নতুন সরকার অথবা সামরিক সরকার ক্ষমতা দখল করে। এমন অস্থিতিশীল, অনিশ্চিত পরিবেশ কোন দেশ বা কোম্পানি বিনিয়োগ করতে চাইবে না এটাই স্বাভাবিক। 

বৈদেশিক ঋণ: বর্তমান অর্থনীতিতে বৈদেশিক দাতা সংস্থাগুলোর কাছ থেকে ঋণ নেয়া খারাপ কিছু না। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উন্নত দেশও ডিফল্ট এড়াতে কিংবা বাজেট ঘাটতি সমতা করতে বৈদেশিক ঋণ নিয়ে থাকে। কিন্তু পাকিস্তানের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি ভিন্ন ছিল। বৈদেশিক ঋণ নেয়া হয় সংকট মোকাবিলার জন্য, স্থায়ী কিছু উন্নয়নের জন্য যার মাধ্যমে দেশের সকলে উপকৃত হবে। কিন্তু পাকিস্তানের নেয়া বৈদেশিক ঋণ বেশিরভাগ সময়ই ব্যাবহার হয়েছে তাদের সামরিক খাতে। স্থায়ী এবং দীর্ঘমেয়াদি কোন পরিকল্পনা না নেয়ার ঋণ পরিশোধ করতে তাদেরকে আরও ঋণ নিতে হয়। এভাবে ঋণের পর ঋণ পাকিস্তানের অর্থনীতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দেয়। শুধুমাত্র আইএমএফ এর কাছ থেকে পাকিস্তান ঋণ নিয়েছে ২২ বার এবং সম্প্রতি আবারও আইএমএফ এর থেকে ৬ বিলিয়ন ডলার নিতে যাচ্ছে পাকিস্তান। এই ঋণের কারণে হয়ত আপাতত সামলে নিতে পারবে পাকিস্তান তবে। স্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণ না করলে শ্রীলঙ্কা হতে আর খুব দেরি হবে পাকিস্তানের। 

চীনের ঋণের ফাঁদ: যার কেউ নেই তার চীন আছে। পাকিস্তানের যখন এমন বেহাল অবস্থা। যখন ঋণ দেয়ার যখন আর কেউ নেই, তখনই পাকিস্তানের কাছে ঋণের হাত বাড়িয়ে দেয় চীন। চিনের ঋণের ফাঁদ কি, কিভাবে বড় বড় ঋণ দিয়ে চীন একটি দেশকে ফাঁদে ফেলে তা কারোই অজানা নয়। তবুও দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে চীনের কাছ থেকে ঋণ নেয় পাকিস্তান। বর্তমানে পাকিস্তানের চীনা ঋণের পরিমাণ আনুমানিক ৯০ বিলিয়নের কাছাকাছি। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলোর কাছে থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধের জন্য সময় দেয়া হয় ২৫-৩০ বছর এবং সুদের হারও খুব কম ধরা হয় (০.৬%-২%)। কিন্তু চীনের কাছ থেকে নেয়া ঋণ পরিশোধ করার সময়ও দেয়ায় হয় খুব কম এবং এর সুদের হারও থাকে অনেক বেশি। কোন কোন ক্ষেত্রে এ সুদের হার ৬% ও হয়ে থাকে। দেশের স্বার্থবিরোধী এমন ঋণচুক্তি দেশটির অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেয়।

বর্তমানে পাকিস্তান যে প্রতিকুল অবস্থানে রয়েছে তা আদতেও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব কিনা সেটি এখন সকলের প্রশ্ন। ইতিমধ্যে পাকিস্তানে জ্বালানি সংকট, বিদ্যুৎ সংকট ভয়াবহ রূপ নিতে শুরু করেছে। চা আমদানি কমাতে দেশের জনগণকে চা পান কমাতেও আনুরোধ করেছে দেশটির পরিকল্পনা মন্ত্রী এহসান ইকবাল। কাগজ আমদানি না করতে পারায় বই ছাপাতে পারছে না পাকিস্তান। তাই প্রশ্ন উঠেছে, শ্রীলঙ্কার পরিণতিই কি শেষ পর্যন্ত বরণ করতে যাচ্ছে পাকিস্তান?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭