ইনসাইড বাংলাদেশ

তিন লক্ষাধিক কর্মসংস্থান ও উন্নয়ন হুমকির মুখে


প্রকাশ: 03/08/2022


Thumbnail

ষড়যন্ত্রের কারণে কর্মসংস্থান হারানোর শঙ্কায় তিন লাখ লক্ষাধিক মানুষ। হুমকির মুখে বাংলাদেশের উন্নয়ন। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। একের পর এক বড় উন্নয়ন বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ এক গর্বিত নাম। পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হয়েছে, কর্ণফুলী টানেলের কাজ শেষ পর্যায়ে। বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলো আস্তে আস্তে দৃশ্যমান হচ্ছে। এই মেগা প্রকল্প গুলো বদলে দিচ্ছে বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। সারা বাংলাদেশ জুড়ে আজ  অবকাঠামোগত উন্নয়ন হচ্ছে। এই অবকাঠামোগত উন্নয়ন যে শুধু সরকারই করছে তা না, বেসরকারি উদ্যোগেও হচ্ছে ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন। এই অবকাঠামোগত উন্নয়নের দরকার উপযোগী পরিবেশ এবং আনুষাঙ্গিক ব্যবস্থাপনা। যে কোন অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য উপকরণ জরুরি বিষয়। অবকাঠামো উপকরণ যদি সঠিকভাবে এবং সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে না পাওয়া যায়, তাহলে অবকাঠামো উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর উন্নয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলাদেশ। যেকোন দেশের অবকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে বালু একটি অপরিহার্য অনুষঙ্গ। অবকাঠামো উন্নয়নে বালুর ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে বালু নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়েছে। বালু উত্তোলন নিয়ে নানা রকম অপপ্রচার, বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানো হচ্ছে বিভিন্ন মহলে। বালুর ইজারা নিয়ে প্রতিনিয়ত কিছু কিছু গণমাধ্যমে এমন সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে যে, বালু উত্তোলন একটা অপরাধ। এর ফলে এক ধরনের  বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। অনেকে মনে করছেন যে, বালু উত্তোলন মানেই হলো পরিবেশ ধ্বংস, বালু উত্তোলন মানেই ক্ষতিকর বিষয়। কিন্তু ১৩'শত নদীটির এই বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত প্রচুর পরিমাণে পলি মাটি জমে, নদীগুলো ভরাট হয়ে যায়। বাংলাদেশ জোয়ার-ভাটার দেশ। এখানে বর্ষায় বন্যা হয় এবং বন্যার পর প্রচুর পলি মাটি জন্মে। নদীগুলো ভরাট হয়ে যায়। আর এ কারণেই নদীর ড্রেজিং একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। নিয়মিত বালু উত্তোলন জরুরী। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে নদী খনন এবং ড্রেজিং এর উপর গুরুত্ব দিচ্ছে। ড্রেজিং খাতে সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে শত কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে। বালু উত্তোলন এবং ড্রেজিং-এ সরকারী ও বেসরকারী প্রায় তিন লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর দুটি ড্রেজিং কিনেছিলেন, তারপর আর কোন সরকার নদী খননের উপর কোন গুরুত্ব দেয়নি। ফলে পলি জমে নদীগুলো নাব্যতা হারিয়েছে। এখন বালু নিয়ে ষড়যন্ত্রের দলে বিপুল বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়েছে। বালু উত্তোলন বন্ধের কথা যারা বলছেন, তারা আসলে বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। দেশের কর্মসংস্থান বন্ধ করতে চায়। কর্মসংস্থান বন্ধ হলে মানুষ রাস্তায় নামবে- এমন পরিকল্পনা থেকেই বালু উত্তোলন বন্ধের নীলনকশা বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন।



প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে নদীগুলোকে খনন করা এবং নদীগুলোকে নৌ পরিবহন উপযোগী করার জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয়। ড্রেজিং করা শুরু হয়, সৃষ্টি হয় কর্মসংস্থান। ড্রেজিং এর মাধ্যমে বালু উত্তোলন করা হলো নদী সুরক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। আর এ কারণেই দুটির সমন্বয় প্রয়োজন। একদিকে যেমন অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য বালু দরকার, অন্যদিকে তেমনি আমাদের নদীগুলোকে সুরক্ষার জন্য নিয়মিত ড্রেজিং দরকার। আর বর্তমান এ কারণেই সরকার ‌‌‌‌বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ প্রণয়ন করেন। এই আইনের মাধ্যমে বালু উত্তোলন এবং নদী খননের সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এবং কার্যক্রম প্রণয়ন করা হয়েছে। সরকারের প্রণিত যে বালুমহাল এবং মাটি ব্যবস্থাপনা আইনে তাতে যে জায়গা থেকে বালু উত্তোলন করবে তাকে বালু মহাল ঘোষণা করার কথা বলা হয়েছে এ ব্যাপারে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। যে কমিটির প্রধান হলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। এছাড়াও এ কমিটিতে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সচিব, পরিবেশ মন্ত্রণালয় সচিব, নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্টদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই জাতীয় কমিটির মাধ্যমে বালু উত্তোলন কার্যক্রম সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার কথা কিন্তু এটি অকার্যকর। আবার অন্যদিকে জেলা পর্যায়ে বালু উত্তোলনের জন্য জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই জেলা কমিটিকে বালু উত্তোলনের জন্য সুনির্দিষ্ট ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, জেলা কমিটি বালু মহাল চিহ্নিত করবেন এবং বালুমহল চিহ্নিত করে সুনির্দিষ্ট টেন্ডারের মাধ্যমে ইজারা দিবেন। ইজারাদার নিয়োগ করে বালু উত্তোলন করবে এবং এই বালু উত্তোলনের ক্ষেত্রে সরকার কি টাকা পাবে, কিভাবে বালু উত্তোলন করবে তার বিস্তারিত বিশদ বিবরণ এই আইনে দেওয়া আছে। কিন্তু দুভাগ্যের বিষয় হলো যে, ২০১০ সালের এই আইনটি অকার্যকর অবস্থায় পড়ে আছে। যার ফলে বালু উত্তোলন নিয়ে এক ধরনের নেতিবাচক প্রচারণা জাঁকিয়ে বসেছে বাংলাদেশে। এই আইনটি সারাদেশে যথাযথভাবে কার্যকর করা জরুরী। না হলে এই খাতে বিপুল বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান হুমকির মুখে পড়বে।

সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে যে, বিভিন্ন নদীতে বালু উত্তোলন নিয়ে বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রচার করা হচ্ছে। আবার জাতীয় কমিটি, জেলায় পর্যায় কমিটি যথাথভাবে কাজ না করার ফলে বিভিন্ন মহল অপশক্তি প্রয়োগ করে এবং ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে যত্রতত্র বালু উত্তোলন করছেন। অথচ দেশে একটি চমৎকার আইন রয়েছে। যে আইনটি প্রয়োগ করা হলে সুনির্দিষ্ট জায়গাকে বালু মহাল ঘোষণা করে সেখান থেকে বালু উত্তোলন করা যাবে এবং যেটি দিয়ে আমাদের উন্নয়ন চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। সেটি না করার ফলে কেউ কেউ বাঁধ সংলগ্ন  এলাকায় বালু উত্তোলন করছেন। কেউ কেউ ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় বালু উত্তোলন করছেন। এই যথেচ্ছার ফলে বালু উত্তোলন নিয়ে এ ধরনের নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হচ্ছে। কিছু কিছু গণমাধ্যমে ধারণা দেওয়া হচ্ছে যে, বালু উত্তোলন মানেই হলো খারাপ। কিন্তু বিষয়টি তা না। আমাদের ভূ-প্রাকৃতিক ভারমাস্য রক্ষার জন্য, আমাদের পরিবেশ রক্ষার জন্য, বন্যার হাত থেকে আমাদের দেশকে রক্ষার জন্য বালু উত্তোলন করা যেমন জরুরী, তেমনি উন্নয়ন কাজ অব্যাহত রাখার জন্য বালু উত্তোলন অন্তত জরুরী। তাই সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, আমাদের যে নদীগুলোে রয়েছে, সেই নদীগুলোকে আইন অনুযায়ী সুনির্দিষ্টভাবে বালু মহাল চিহ্নিত করা এবং বালু মহাল চিহ্নিত করে সেগুলো সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এবং প্রতিযোগিতামূলক দরপত্রের মাধ্যমে ইজারা দেওয়া দরকার। যা ২০১০ সালের আইনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। ইজারার মাধ্যমে যদি বালু উত্তোলন করা যায় তাহলে সরকার প্রচুর রাজস্ব আয় করতে পারবে, তেমনি সরকারি বেসরকারি উন্নয়ন কর্মকাণ্ড গুলো অব্যবাহত থাকতে পারবে। একটি সুষ্ঠু নিয়ম নীতিমালা মেনে বালু উত্তোলন করে আমরা যেমন চাহিদা মিটাতে পারবো, তেমনি রপ্তানি করে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারবো। তাই আইনকে অকার্যকর করে নেতিবাচক প্রচারণার মাধ্যমে বালু নিয়ে যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে তা দূর করার জন্য এখনই সরকারি উদ্যোগ জরুরী বলে সংশিষ্টরা মনে করেন। তা না হলে রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ উন্নয়ন বন্ধ হয়ে যাবে। তিন লাখ মানুষ বেকার হবে। মুখ থুবড়ে পড়বে শত কোটি টাকার বিনিয়োগ।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭