ইনসাইড থট

"বিএনপির হাতে হারিকেন, দেখে হাসে জনগণ"


প্রকাশ: 03/08/2022


Thumbnail

টানা প্রায় আড়াই বছর করোনা মহামারীতে সমগ্র বিশ্বব্যাপী জিডিপি হ্রাস, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি এবং আমদানি ও রফতানি বিঘ্নজনিত কারনে অর্থনৈতিক সংকট যখন চরমে পৌঁছেছে; এমন সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সংকটের আগুনে যেন ঘি ঢেলে দিয়েছে। রাশিয়ার উপর আমেরিকার অর্থনৈতিক অবরোধ যেমন অনেক দেশে খাদ্য সংকট তৈরি করেছে, তেমনি ইউরোপের দেশগুলোতে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের সংকট তীব্র করেছে। কারন এসব দেশের জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মোট চাহিদার তিন ভাগের এক ভাগের ও বেশি আসে পাইপ লাইনের মাধ্যমে রাশিয়া থেকে, যা এখন বন্ধ।

করোনা মহামারি ও রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে ইতালি চরম অর্থনৈতিক সংকট পড়েছে। মূল্যস্ফীতি সহ নানামুখী চ্যালেঞ্জে থাকা দেশটির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাগি অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিতে না পেরে পদত্যাগ করেছে। এর ফলে দেশটিতে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। শুধু ইতালি নয়, খাদের কিনারায় দাঁড়িয়ে যুক্তরাজ্য এবং জার্মানিসহ পুরো ইউরোপের অর্থনীতি। মূল্যস্ফীতির ধারাবাহিক বৃদ্ধি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন বৃদ্ধিতে বেশ বিপাকে পড়েছে জার্মানির নিম্ন আয়ের মানুষ। জার্মানির মতো দেশে অভাব অনটনে পড়া মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। দেশটির বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও সেবামূলক সংগঠনগুলো চাপে আছে। সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় খাবার ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের খোঁজে তাদের কাছে ভিড় জমাচ্ছে অভাবগ্রস্থ সাধারন মানুষ। 

রাশিয়া- ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে জ্বালানি সংকটের কারণে দেশটির শিল্প কারখানাসহ সাধারণ মানুষের বসতবাড়িতে ব্যবহৃত তেল ও গ্যাসের সরবরাহ কমে যাওয়ায় সামাজিক সংকট ঘনীভূত হয়েছে। এই অবস্থা পুরো ইউরোপ জুড়েই বিরাজমান। শ্রীলঙ্কার জিডিপি, রিজার্ভ, মাথাপিছু আয় সহ সকল অর্থনৈতিক সূচক ছিল ইতিবাচক। অথচ হঠাৎ করেই দেশটি দেউলিয়া হয়ে গেছে। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা ও অনেকটাই খাদের কিনারায়। দেশটি যেকোনো সময় শ্রীলঙ্কার মত অর্থনৈতিক সংকটে পড়তে পারে বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির সদ্য সাবেক প্রধান ইমরান খান। 

যুক্তরাজ্যের মূল্যস্ফীতি গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং জার্মানিতে মূল্যস্ফীতি গত তিন যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। খাদ্যের ব্যয় কমাতে যুক্তরাজ্যে মানুষ একবেলা কম খাচ্ছে বলেও বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৭ শতাংশ। যা গত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। মূল্যস্ফীতির চাপে পড়েছে বাংলাদেশও। গত ১১ বছরের মধ্যে  সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির মুখোমুখি দেশ। মূল্যস্ফীতি বর্তমানে ৭.৫ এর কাছাকাছি। জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় লন্ডনে বিক্ষোভ করেছে মানুষ। গত ২০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি রাশিয়ায়। এশিয়ার দেশগুলোতেও একই পরিস্থিতি। জাপানের শূন্যের নিচে থাকা মূল্যস্ফীতি এখন বেড়ে ধনাত্মকে ঠেকেছে। পাকিস্তানের মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্ক ছাড়িয়েছে বেশ আগেই। ভারতেও টানা কয়েক মাস ধরে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েই চলেছে।বাংলাদেশের সংকট অতটা প্রকট না হলেও সীমিত আয়ের মানুষ হিমশিম খাচ্ছে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে। 

গ্লোবাল ইকোনমিক ক্রাইসিস এর ঢেউ কিছুটা বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও লেগেছে। আমাদের রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে বেশ খানিকটা কমে ৪০ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। দ্রব্যমূল্য বেশ কিছুদিন ধরে উর্ধ্বমুখী। খাদ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্য বেড়েছে। তবে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেলের দাম কমায় বাংলাদেশেও দাম কিছুটা কমেছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম অনেক বেশি হওয়ায় বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত এলএনজির দাম ৫ ডলার থেকে বেড়ে ৩৫-৪০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। এ কারনে জার্মানি, ইতালি এমনকি জাপানের মত উন্নত দেশেও লোডশেডিং হচ্ছে।

উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সরকার তার রিজার্ভের উপর চাপ কমাতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বনের অংশ হিসেবে ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে জ্বালানি তেল আমদানি কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমাতে জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতে আপাতত বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রেখেছে। অন্যদিকে গ্যাস সংকটের কারনে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোতেও উৎপাদন কমেছে। এই পরিস্থিতিতে দেশের প্রধানমন্ত্রী বারবার দেশের জনগণকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে অনুরোধ করছেন যাতে লোডশেডিং কমিয়ে আনা যায়। 

সরকার সারাদেশে শিডিউল ভিত্তিক ১-২ ঘন্টা লোডশেডিং করার ঘোষণা দিয়েছে। দীর্ঘ ৫-৭ বছর পরে হঠাৎ করে লোডশেডিং হওয়াতে মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছে। সচেতন দেশপ্রেমিক নাগরিকরা সাময়িক কষ্ট মেনে নিলেও বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বাংলাদেশ অচিরেই শ্রীলঙ্কার মত দেউলিয়া হয়ে যাবে বলে বিভিন্ন সভা, সমাবেশে বক্তব্য দিচ্ছেন। তাদের মধ্যে এক ধরনের উৎফুল্ল ভাব। বাংলাদেশ দেউলিয়া হলে যেন তারা মহা খুশি! কারন সরকারের পতন হবে! রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হওয়ার স্বপ্ন দেখা দলটির এই হল দেশপ্রেমের নমুনা। অথচ অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের চাইতে সকল সূচকে ভালো অবস্থানে আছে। মুদ্রাস্ফীতি  বৃদ্ধিকে বৈশ্বিক সমস্যা বলে মনে করেন তারা।

শেখ হাসিনার সরকার ২০০৯ সালের শুরুতে যখন রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করে তখন দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছিল মাত্র ৪৯৪২ মেগাওয়াট। অথচ আজ সাড়ে ১৩ বছরের মাথায় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫,৭০০ মেগাওয়াটে। ১৬ ই এপ্রিল ২০২২ এ বিদ্যুতের সর্বোচ্চ উৎপাদন ছিল ১৪,৭৮২ মেগাওয়াট। অথচ বিএনপি আমলের শেষ বছর ২০০৬ সালে সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন ছিল ৩২৬৮ মেগাওয়াট! তখন দেশে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল মাত্র ৪২০০ মেগাওয়াট! অথচ সেই সামান্য চাহিদাটুকু পূরনে সম্পুর্নরুপে ব্যর্থ হয়েছে সে সময়ের সরকার। ৫ বছরে বিদ্যুৎ খাতে ২১,০০০ কোটি টাকা খরচ করে ঐ সরকার মাত্র ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ও উৎপাদন করতে পারে নি। ১৯০১ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত ১০৮ বছরে দেশের বিদ্যুৎ খাতের যে অর্জন, শেখ হাসিনা সরকারের টানা তিন মেয়াদের সাড়ে ১৩ বছরে অর্জন তার পাঁচ গুনের ও বেশি।

বিএনপি আমলে গড়ে প্রতিদিন ৬-৮ ঘন্টা লোডশেডিং হত। গ্রামাঞ্চলে লোডশেডিং পরিস্থিতি ছিল আরো ভয়াবহ। মাসের পর মাস লোডশেডিং ভোগ করতে করতে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠা মানুষ বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলন করলে সে সময় গুলি করে মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করার মত ঘটনা ঘটে। তখন বিদ্যুতের দাবিতে বিভিন্ন উপকেন্দ্রে হামলা, আগুন, ভাংচুরের ঘটনা ছিল নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনা। বিএনপি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন থাকা অবস্থায় ৫ বছরে একদিন ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে নি, দেশকে একদিনের জন্যও লোডশেডিং মুক্ত করতে পারে নি। তখন সন্ধ্যা হলেই মানুষের একমাত্র অবলম্বন ছিল হারিকেন এবং মোমবাতি। বছরের পর বছর দেশকে লোডশেডিং উপহার দেওয়া বিএনপি বৈশ্বিক জ্বালানি সংকট ও জ্বালানীর উচ্চমূল্য পরিস্থিতিতে চলমান দেশের সাময়িক লোডশেডিংয়ে হারিকেন হাতে মাঠে নেমেছে। মানুষ এখন তাদের হাতে হারিকেন দেখে হাসে। ৫ বছর দেশকে অন্ধকারে রাখা বিএনপি কি দেশকে আবার ১৬ বছর আগের তাদের সেই হারিকেন যুগে নিতে চায়? এই প্রশ্ন এখন দেশের সকল সচেতন মানুষের মনে। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭