ইনসাইড আর্টিকেল

বাড়তি বৈষম্য এবং প্রতিকার


প্রকাশ: 04/08/2022


Thumbnail

"বৈষম্য" বর্তমানে বৈশ্বিক ভাবে একটা বড় সংকটের নাম। পৃথিবী জুড়ে মানুষ নানা কারণে, নানা দিক থেকে বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত।  মানুষে মানুষে কলহ এবং বিবাদের অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় মানুষের অভ্যন্তরীণ বৈষম্যভিত্তিক চিন্তা চেতনাকে। বয়স, ধর্ম, সামাজিক, রাজনৈতিক,  ধর্মীয়, লিঙ্গ, বর্ণ নানা দিক থেকেই এই ভেদাভেদের রেশ চলেই আসছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে, লিঙ্গ এবং ধর্ম ভিত্তিক বৈষম্য বেশি বলে দাবি করছেন বিশেষজ্ঞ এবং নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো। 


লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যের জন্য দেশে নারীরা আজও পিছিয়ে আছেন। শিক্ষাগত বাধ্যকতার জন্য শিক্ষাহার তুলনামূলক বাড়লেও রাজনৈতিক এবং অন্যান্য কর্মক্ষেত্রে এখনো নারী অংশগ্রহণের হার কমের দিকেই। লিঙ্গ সমতার ক্ষেত্রে মানুষ আজও লিঙ্গ অন্ধত্বকেই বুঝে। অথচ সমতার বিষয়বস্তু মানব অধিকার অধিদপ্তর থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে সকল লিঙ্গের মানুষের সমান অধিকার এবং কাজ করার সুনিশ্চিত বাস্তবায়ন। 


সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, দেশে বৈষম্যের একটি প্রধান কারণ বৈষম্যের স্বীকার হওয়া মানুষদের তাদের অবস্থার বিষয়ে নিরপেক্ষতা।  বিভিন্ন সেক্টরে মানুষ অবস্থা পরিবর্তনের জন্য প্রতিবাদ বা প্রয়োজনীয় দাবি তুলে না ধরার জন্য তাদের অবস্থার সঠিক পরিবর্তন ঘটে না।  যার ফলস্বরূপ পর্যায়ক্রমে এই বৈষম্য চলতে থাকে। কিছু শ্রেনীর মানুষ তার বর্তমান সম্বল হারানোর ভয়ে অনেক সময় নিজেদের দাবির কথা উল্লেখ করে না। ফলে বৈষম্য চক্রকারে চলতেই থাকে। 


এই প্রেক্ষাপটে এক দশকের বেশি সময় ধরে নাগরিক সমাজ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বৈষম্যবিরোধী আইন করার দাবি করে আসছিল সরকারের কাছে। দেরি হলেও সরকার সেই দাবি মেনে নিয়ে ৫ এপ্রিল জাতীয় সংসদে বৈষম্যবিরোধী বিল ২০২২ উত্থাপন করেছে। পরে বিলটি পর্যালোচনার জন্য সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানো হয়েছে। বিলটিতে বলা হয়েছে, এ আইন অনুযায়ী এবং নীতিকরণ অনুসারে  একজন নাগরিক কোনো সরকারি বা বেসরকারি অফিস, জনসমাগম হয় এমন কোনো স্থান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেকোনো রকম বৈষম্যের শিকার হলে প্রতিকার চাইতে পারবেন৷ তবে এই আইনের সীমাবদ্ধতা পর্যালোচনা করেছেন অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকগণ। 


তাদের মতে দেশে বৈষম্য, হোক সেটা নারী ভিত্তিক কিংবা ধর্মীয়,  এটিকে অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। কেউ সামাজিক বা অন্য কোনো ক্ষেত্র বিশেষে যদি কোনো ধরণের বৈষম্যেএ স্বীকার হন তবে সেইক্ষেত্রে শাস্তির দাবি করতে পারেন। যেখানে শাস্তির কার্যকারিতা বাস্তবায়ন করতে হতে পারে বিলম্ব। অথচ দেশে গড়ে ১০ জনের মধ্যে ৪ জন নারী কোনো না কোনো ভাবে বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে কর্মক্ষেত্র এবং অন্যান্য সেক্টরে। আবার মূল জনগোষ্ঠীর প্রায় ৩৭ শতাংশ লোক নিয়মিত বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছেন কোনো না কোনো ভাবে। 


সম্প্রতি নেপালের বৈষম্য বিরোধি আইন পাশ হওয়ার সুবাদে রাজনৈতিক দিক থেকে বৈশ্বিক প্রশংসা লাভ করছে এই দেশটি। এই আইনে উল্লেখ করা হয়েছে বৈষম্য,  যেকোনো ধরনের বৈষম্য অপরাধ। এই ক্ষেত্রে যদি বৈষম্য ভিত্তিক কাজের সাথে কেউ সরাসরি কিংবা পরোক্ষাভাবে যুক্ত থাকে তাহলে অবশ্যই তাঁকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। 


নাগরিক সমাজ এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলো গুলো যে দাবি রাখছে তা হলো, দেশের বৈষম্য কমানোর জন্য অবশ্য সরকার এবং নাগরিকদের সচেতনা। যদি বৈষম্যকে অন্য দেশের মতো অপরাধের দৃষ্টিতে দেখা হয় এবং শাস্তি বাস্তবায়নের নিশ্চতকরণ করা যায় তাহলে এই বৈষম্যের হার নিম্নমুখী হবে। তাছাড়া,  কর্মক্ষেত্রে নারীদের যেকোনো বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে। ধর্মীয় বৈষম্য এবং যেকোনো ধরণের উগ্রবাদী ঘটনা রোধে সরকারি আইন পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের দিকে সচেষ্ট হতে হবে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় কমিটির। আঞ্চলিক এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ভিত্তিক যেসকল বৈষম্য দেশে তৈরি হয়, সেইসবের জন্যও প্রয়োজন আঞ্চলিক এবং জেলা প্রশাসন ভিত্তিক আইনি ব্যবস্থা পরিচালনা বিষয়ক উদ্যোগ।  শিক্ষা বৈষম্যের ক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি নারী শিক্ষা এবং অনৈতিক ভাবে দূর্বল মানুষদের শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য তহবিল এবং সরকারি আইন পাশ করার নিশ্চিতকরণ করাও প্রয়োজন। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭