ইনসাইড ইকোনমি

আবারও শর্তের জালে বাংলাদেশ


প্রকাশ: 06/08/2022


Thumbnail

অনেক কিছুতেই ভর্তুকি প্রত্যাহার হবে। শেষ পর্যন্ত আইএমএফের শর্ত মেনে নিলো সরকার। জ্বালানি খাতে ২৩ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকিকে অবাস্তব বলেছিলো আইএমএফ এবং এই ভর্তুকি কমানোর জন্য শর্ত দিয়েছিলো। আইএমএফের ঋণ পেতেই জ্বালানি তেলের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। শুধু জ্বালানি খাতে নয়, অন্যান্য বিভিন্ন খাতে যেখানে যেখানে সরকার ভর্তুকি দিচ্ছে সেই ভর্তুকি কমানোর শর্ত আইএমএফ দিয়েছে এবং সরকার যদি আইএমএফের ঋণ পেতে চায় তাহলে পর্যায়ক্রমে এই শর্তগুলো মানতে হবে। এর ফলে বিভিন্ন খাতে সরকারকে ব্যাপক ভর্তুকি কমাতে হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আর এইসব ভর্তুকি কমালে সরকারের ওপর বড় ধরনের চাপ পড়বে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। জ্বালানি তেলের উপর ভর্তুকি কমানোর কারণেই এই রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে বলে সরকারের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

ইতিমধ্যে সরকার ইউরিয়া সারের উপর ভর্তুকি কমিয়েছে এবং আরো কিছু ক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রত্যাহারের কথা ভাবছে। বাংলাদেশ কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক পরিমাণে ভর্তুকি দেয়। এই ভর্তুকির পরিমাণ ৫০ হাজার কোটি টাকার কিছুটা বেশি। এই ভর্তুকি কমানোর জন্য উদ্যোগ নেয়া হবে। এর ফলে ন্যায্যমূল্যে বীজ, কম দামে ডিজেলসহ যে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা কৃষকরা পেত তা কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও খাদ্যের উপর ভর্তুকি কমানো হবে। ফলে খাদ্য পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি অনিবার্য হয়ে উঠেছে বলে জানা গেছে।

সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, যেহেতু ডিজেল এবং পেট্রোলের দাম বৃদ্ধি হলো সেক্ষেত্রে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি এখন অনিবার্য হয়ে উঠেছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির সাথে সাথে এবার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাবে বলেও সরকারের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। কারণ, আমাদের বিদ্যুৎ খাত ডিজেল নির্ভর। এ কারণেই সরকারকে এখন বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে। ফলে সামগ্রিকভাবে ভর্তুকি কমানোর প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়। সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, আগামী এক মাসের মধ্যে বিদ্যুৎ, পানি এবং গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করতেই হবে, এর কোনো বিকল্প নেই। এই মূল্যবৃদ্ধি হলো ভর্তুকি কমানোর জন্য। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সমন্বয় করে এই মূল্যবৃদ্ধি গুলো হবে। এই সবই করা হচ্ছে আইএমএফের শর্তের কারণে। শুধু আইএমএফ না, বিশ্বব্যাংক এবং এডিবিও একই শর্তেই বাংলাদেশকে ঋণ দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিশ্বব্যাংক কৃষিক্ষেত্রে ভর্তুকি বন্ধের সুপারিশ দিয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সে সময় বিশ্বব্যাংকের সুপারিশ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং কৃষিতে ভর্তুকি দিয়েছিলে। এর আগে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার বিশ্বব্যাংকের পরামর্শের কারণেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভর্তুকি প্রত্যাহার করেছিলো। বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শেই বিএনপি-জামায়াত জোট আদমজী বন্ধ করে দিয়েছিলো। এখন আইএমএফ যে নতুন করে শর্তগুলো দিচ্ছে সেই শর্তের ফলে বাংলাদেশ আবার বিদেশি শর্তের জালে চলে গেল কিনা সেটাই দেখার বিষয়। কারণ, বর্তমান সরকার যে গণমুখী নীতি এবং কৌশল গ্রহণ করেছিলো, সেই গণমুখী কৌশলের অংশ হিসেবে বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দিয়ে দেওয়া হতো যেন সাধারণ মানুষের জীবনে কষ্ট না হয়। কিন্তু এখন অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় আবার বিদেশিদের শর্ত মেনে নিতে হচ্ছে সরকারকে। কিন্তু এই শর্ত মানার রাজনৈতিক প্রভাব কি হবে, সেটিও হিসেব-নিকেশ করে দেখা প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭