ইনসাইড পলিটিক্স

রাজপথে আন্দোলনের পদধ্বনি


প্রকাশ: 06/08/2022


Thumbnail

জ্বালানি তেলের হঠাৎ করে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি রাজনৈতিক আন্দোলনের পটভূমি তৈরি করেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে যখন এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, লোডশেডিং এবং জনজীবনে নাভিশ্বাস অবস্থা ঠিক সেইসময় জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি আন্দোলনের মাঠে নতুন উপকরণ দেয়ার শামিল বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। জ্বালানি তেলের যেভাবে মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে এবং এর প্রভাব জনজীবনে যেভাবে পড়বে তাতে জনগণের কেউ কেউ রাজপথে নেমে আসতে পারে বলেও অনেকেই শঙ্কা প্রকাশ করছেন। এমনকি আওয়ামী লীগের নেতারাও বলছেন যে, সামনে আন্দোলনের শঙ্কা রয়েছে এবং আন্দোলন মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

গত কিছুদিন ধরেই বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের চেষ্টা করছে। কিন্তু নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যু নিয়ে আন্দোলনের ব্যাপারে জনগণের মধ্যে কোনো আগ্রহ লক্ষ্য করা যায়নি। এই সমস্ত আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচিতে শুধুমাত্র বিএনপি নেতাকর্মীদেরকে দেখা গেছে, সাধারণ মানুষ এসব থেকে নিজেদেরকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর দফায় দফায় জিনিসপত্রের দাম বাড়তে থাকে এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অদূরদর্শিতা এবং নানা রকম অপরিপক্ব সিদ্ধান্তের কারণে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সাম্প্রতিক সময়ে যেমন কাঁচা মরিচের বাজারে আগুন লেগেছে আড়াইশো টাকা কেজিতে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য জিনিসপত্রের দামও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে, চালের বাজার দীর্ঘদিন ধরেই ঊর্ধ্বগতি। এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের হতাশা এবং অস্বস্তি তৈরি হয়েছে। এই হতাশা অস্বস্তির মধ্যে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো নতুন করে রাজনৈতিক কর্মসূচি দেওয়া শুরু করে। বিশেষ করে ১৯ জুলাই থেকে লোডশেডিং শুরু হলে ঢাকার বাইরে জনজীবনে তীব্র প্রতিক্রিয়া পড়তে শুরু করেছে। আর এ কারণেই বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুকে আড়ালে রেখে লোডশেডিং, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ইত্যাদি বিষয় নিয়েই রাজপথ গরম করতে চাইছে। যদিও এই কর্মসূচিগুলোর সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বাম মোর্চা বা ইসলামী দলগুলো শরিক হয়নি। সাধারণ মানুষও এই সব আন্দোলন সমস্যার সমাধান নয় বিবেচনায় এসবের সঙ্গে নিজেদেরকে যুক্ত করেননি।

কিন্তু গতরাতে (শুক্রবার) যেভাবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করা হয়েছে তা অস্বাভাবিকই শুধু নয়, অবাস্তব বলেই সাধারণ মানুষ মনে করছে। এভাবে নজিরবিহীন মূল্যবৃদ্ধি বাংলাদেশে তো নয়ই, পার্শ্ববর্তী কোনো দেশেও হয়নি। ফলে এটি নিয়ে মানুষের মধ্যে অসন্তোষ বেড়েছে। খুব শীঘ্রই জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিবে এবং ভয়াবহভাবে অন্যান্য জিনিসের দাম বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে, যদি সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ না করতে পারে তাহলে নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা বাজার পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর রূপ নেবে। এটি আন্দোলনকে উস্কে দিতে পারে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো যেমন- বাম গণতান্ত্রিক জোট, জাতীয় পার্টিসহ আরও রাজনৈতিক দলগুলো আন্দোলনের জন্য নামতে পারে বলে জানা গেছে। তাছাড়া সাধারণ মানুষেরও পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাবে এবং তখন সাধারণ মানুষও প্রতিবাদ করার জন্য রাজপথে আসতে পারেন। ফলে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে রাজনীতির আকাশের শঙ্কার মেঘ দানা বেঁধেছে এবং সরকারবিরোধী আন্দোলনের একটা শঙ্কা তৈরি হয়েছে, রাজপথে আন্দোলনের পদধ্বনি শোনা যাচ্ছে। সামনের কয়েকটিদিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই সময় বোঝা যাবে সরকার মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি জনগণকে বুঝাতে পারে কিনা, দ্রব্যমূল্যের বাজারে অস্থিরতা কমাতে পারে কিনা এবং জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে লোডশেডিং কমিয়ে ফেলতে পারে কি না। এটি যদি না করে তাহলে সরকারকে বড় ধরনের আন্দোলন মোকাবেলা করতে হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই কদিন আগেই ভারতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু হয়েছে। ভারতের মতো বাংলাদেশে শক্তিশালী বিরোধী দল নেই কিন্তু জনগণের জীবনযাত্রার যে অস্থির অবস্থা, সে কারণে জনগণ যদি এখন দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি কিংবা জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে রাজপথে নামে তাহলে অবাক হবার কিছুই থাকবে না।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭