ইনসাইড বাংলাদেশ

আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের শর্ত আগামী নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে?


প্রকাশ: 07/08/2022


Thumbnail

সরকার মুখে যাই বলুক না কেন, অর্থনীতিবিদরা মনে করেন যে আইএমএফ এর শর্ত মেটাতেই জ্বালানি তেলের এই অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটনা হয়েছে। সরকার ইতোমধ্যে আইএমএফ এর কাছ থেকে ৪.৭৫ বিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা চেয়েছে। এই অর্থ সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে আইএমএফ তিনটি শর্ত দিয়েছে বলে জানা গেছে। তার মধ্যে একটি হলো, সব ক্ষেত্রে ভর্তুকি কমানো। তাই আগামী কিছুদিনের মধ্যে কেবল জ্বালানি তেল নয়, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ আরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকার ভর্তুকি কমানোর উদ্যোগ নেবে। ফলে এসব ক্ষেত্রে মূল্যবৃদ্ধি অবশ্যম্ভাবী বলেই মনে করা হচ্ছে। সরকার আইএমএফ এর কাছে শুধু নয়, বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকেও আর্থিক সহায়তা চেয়েছে। সমাজতান্ত্রিক চেতনায় বিশ্বাসী অর্থনীতিবিদরা মনে করেন যে, আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত এবং দরিদ্র মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার একটি হাতিয়ার হিসেবে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংককে যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহার করে। বাংলাদেশই তার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী।

পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে যখন বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের চুক্তি স্বাক্ষরিত হলো, তখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবের কারণে বিশেষ করে হিলারি ক্লিনটনের প্রভাবের কারণেই বিশ্বব্যাংক সেই চুক্তি থেকে সরে এসেছিল। আর আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক সেই সমস্ত শর্ত দেয়, যে সমস্ত শর্তগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নির্ধারণ করে দেয়। অর্থাৎ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দাঁড়াই বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ নিয়ন্ত্রিত হয়। গত কিছুদিন ধরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে সুশাসন, আগামী নির্বাচন অর্থবহ করাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে চাপ প্রয়োগ করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের ব্যাপারে ৫টি বিষয় নিয়ে কথা বলছে। তার মধ্যে একটি হলো মানবাধিকার, দ্বিতীয় হলো সুশাসন, তৃতীয়টি হলো আগামী নির্বাচন, চতুর্থ হলো গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং পঞ্চম হলো গুম, খুন ইত্যাদি। ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‍্যাবের কয়েকজনের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এইসব বাস্তবতায় আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের যে ঋণে ফাঁদে বাংলাদেশ পড়লো, তার জন্য বাংলাদেশকে চরম মূল্য দিতে হতে পারে বলে অনেকে মনে করছে।

গতকাল আওয়ামী লীগ সরকারের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন বলেছেন যে, আইএমএফ এর শর্ত মেনে জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার বিষ গিললো। তিনি আরও বলেছেন যে, এই বিষয়ে এখন অর্থনীতির দেহে ছড়িয়ে রাজনীতি এবং সমাজে বিস্তৃত হবে। বিভিন্ন দেশে আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংকের শর্তগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, কেবলমাত্র যে অর্থনৈতিক সংস্কার বিষয়েই তারা শর্ত দেয় তেমনটি নয়, অনেক সময় রাজনৈতিক বিষয়ে তারা পরামর্শও দেয়। বিভিন্ন দেশে বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ সুশাসন, সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবাধিকার ইত্যাদি বিষয়ে শর্ত দেয়। আইএমএফ এ যে ঋণ সহায়তা সেটি কিন্তু একবারে বাংলাদেশ পাবে না, ধাপে ধাপে পাবে। প্রথম দফায় বাংলাদেশ ১.৫ বিলিয়ন কোটি ডলার পাবে। তারপর ধাপে ধাপে বাকি কিস্তিগুলো প্রদান করা হবে। এই সময়ে যদি আইএমএফ ঋণ সহায়তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে জিম্মি করে তাহলে কারো কিছু করার নেই। 

যেমন আইএমএফ যদি বলে যে, আগামী নির্বাচনকে অর্থবহ এবং জনগণের অংশগ্রহণমূলক হতে হবে। বিশ্বব্যাংক যদি তার ঋণের শর্তে বলে বাংলাদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে, দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে তাহলে সরকার কি করবে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, দেড় বছরের কম সময়ের মধ্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে এবং এই নির্বাচনের আগে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংক পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের একটা বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হবে এবং নির্বাচনের ব্যাপারে সরকারকে চাপ প্রয়োগের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। সেটি যদি হয়, তাহলে সামনের দিনগুলোতে অর্থনৈতিক সংকট রাজনৈতিক সংকটে রূপান্তরিত হবে বলে অনেকেই মনে করছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭