ইনসাইড আর্টিকেল

ও বন্ধু তোকে মিস করছি ভীষণ!


প্রকাশ: 07/08/2022


Thumbnail

একলা ঘর, ধূলো জমা গীটার

পড়ে আছে লেলিন, পড়ে আছে শেক্সপিয়ার

টিশার্ট জিন্সগুলো দেরাজে আছে

শুধু মানুষটা তুই নেইতো, নেইরে কাছে

ও বন্ধু তোকে মিস করছি ভীষণ

তোকে ছাড়া কিছুই আর জমেনা এখন

এই গানটার মতই আমরা ফেলে আসা বন্ধুদের মিস করতে থাকি আজীবন। বন্ধু এমন একটা সম্পর্ক যার কোন বয়স হয় না। একদম ছোট্ট পায়ে চলতে শুরু করা থেকে লাঠি হাতে বৃদ্ধ বয়েসেও আমরা যাদের সাথে নির্দ্বিধায় মনের সমস্ত কিছু খুলে বলতে পারি, যার সামনে অনায়াসে হাসতে পারি, কাঁদতে পারি সেই হল বন্ধু। আগস্ট মাসের প্রথম রবিবার পালিত হয় বন্ধু দিবস। এই দিনে সবাই সবার বন্ধুদের কাছাকাছি থাকতে চায়। কিন্তু যাদের বন্ধুরা অনেক দূরে চলে গেছে দীর্ঘদিন যোগাযোগ নেই অভিমান কিংবা রাগ করে দূরে সরে আছে অথবা এতটাই দূরে সরে গেছে যেখান থেকে আর কখনোই ফিরে আসা যায় না তাদের কাছে বন্ধু দিবসটা আসলে কেমন?  

তানভীর ( ছদ্মনাম) বলছিলেন তার বন্ধু মেহেদীর কথা। একই এলাকায় বড় হয়েছেন, দুজন দুই স্কুলে পড়লেও স্কুল ছুটির সাথে সাথে দৌড়ে একজন আরেকজনের কাছে চলে যেতেন। তারা একসাথে ফুটবল, ক্রিকেট খেলতেন মাঠে, রাত অবধি একসাথে আড্ডা দিয়ে বাসায় ফিরতেন। হুট করেই একদিন তানভীর জানতে পারেন মেহেদীর যক্ষা হয়েছে। মেহেদীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বন্ধুকে একবার দুবার দেখতে গিয়েছিলেন হাসপাতালে ভেবেছিলেন সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু হুট করেই একদিন খবর পান মেহেদী আর এই পৃথিবীতে নেই। তানভীর সেদিন যেমন এই খবরটা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না আজও পারেন না। তার এখন মাঝে মাঝে ভীষন অপরাধবোধ কাজ করে। কেন বন্ধুকে আরেকটু সময় দিলেন না ? কেন রোজ হাসপাতালে দেখা করতে গেলেন না । এই অপরাধবোধ এখনো যন্ত্রনা দেয় তানভীরকে।

রেহমান সাহেব (ছদ্মনাম) বয়স এখন প্রায় ৭৫ বছর। কিছুদিন আগেই হারিয়েছেন প্রিয় বন্ধু গিয়াস কে। গিয়াস তার ছেলেবেলার বন্ধু। তার সকল সুখ দুঃখের সঙ্গী ছিল গিয়াস। একবার দুজনে মিলে সাঁতরে পার হয়েছিলেন কালীগঙ্গা নদী। মাঝ নদীতে তিনি খেই হারিয়ে ফেললে টেনে পাড়ে নিয়ে গিয়েছিল গিয়াস। তার পালিয়ে বিয়ে করার সাক্ষীও ছিলেন প্রিয় বন্ধু গিয়াস। তারা একসাথে বুড়ো হয়েছেন। কিন্তু গত বছর করোনা কেড়ে নিয়েছে তার প্রিয় বন্ধুকে। শেষ দেখাও দেখতে পারেননি প্রিয় বন্ধুর মুখ। তিনি এখনো সকাল হলেই গিয়াসের বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।  এই হয়তো তার প্রিয় বন্ধু চা হাতে রাস্তায় এসে দাঁড়াবে।

শিলা (ছদ্মনাম) এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে। রোকেয়া হলে থাকে। তার হলে প্রথমে উঠেই যে মেয়েটার সাথে পরিচয় হয় তার নাম নিশা। একই রুমে থাকত তারা। নিশা তাকে আপন বোনের মতন করে আগলে রাখত। রান্না করতে পারত না শিলা। নিশা রোজ রাতে শিলার জন্য রান্না করে রাখত। দুজনে মিলে বৃষ্টির দিনে টিএসসিতে ভিজত। রিকশা নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস ঘুরে বেড়াত। বছর খানেক আগে ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছিল দুজনে। একই দিনে হল থেকে বের হয়ে একজন সায়দাবাদ আরেকজন গাবতলির দিকে আলাদা হয়ে যায়। সিলেটগামী শিলা সিলেট পৌছানোর আগেই জানতে পারে তার প্রিয় বন্ধু আর নেই। বাস দুর্ঘটনায় ঘটনা স্থলেই মৃত্যু হয় তার। সেবার চোখের জলেই ঈদ হয়েছিল শিলার। এখন শিলা আর সেই রুমে থাকেন না। মাঝে মাঝেই তার মনে হয় ৩১৮ নং রুম থেকে কে যেন তাকে ডাকছে শিলা শিলা বলে।

এইসব হারিয়ে যাওয়া বন্ধুরা আমাদের সবটা জুড়ে থাকে। আমরা চাইলেও তাদের ভুলতে পারি না। তাদের অস্তিত্ব আমাদের বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয় জীবনভর। হারিয়ে যাওয়া সেইসব মানুষের বন্ধুরা ভলো থাকুক।  

 

 

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭