ইনসাইড বাংলাদেশ

আমলারা সরকারকে ভুল পথে নিচ্ছে?


প্রকাশ: 07/08/2022


Thumbnail

বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ বিভিন্ন সমস্যার পেছনে আমলাদের ভুল সিদ্ধান্ত এবং তথ্য গোপন দায়ী বলে অনেকে মনে করছেন। আমলাদের নিয়ন্ত্রণের কারণেই সরকার ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে বলে কেউ কেউ মন্তব্য করছেন। বর্তমান সরকার অনেকটাই আমলা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। মন্ত্রীদের চেয়ে, এমপিদের চেয়ে আমলারা এখন অনেক বেশি ক্ষমতাবান, প্রভাবশালী। আমলাদের এই প্রভাব এবং ক্ষমতার কারণে রাজনৈতিক সরকারের চরিত্র আমলাতান্ত্রিক হয়ে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে এবং আমলারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ করছে। সাম্প্রতিক সময়ে যে আইএমএফের ঋণ গ্রহণ, এটির পেছনে আমলাদের ভূমিকাই গুরুত্বপূর্ণ বলে সরকারের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

যখন আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন, তখন তিনি অর্থনীতির সবকিছু দেখভাল করতেন এবং সরাসরি তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা বলে দেশের ভালো-মন্দের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতেন। ২০০৯ সালে যখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে তখন আইএমএফ ঋণ সহায়তার প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলো। সেই সময় সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা ছিলো, বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ছিলো। কিন্তু আবুল মাল মুহিত সেই ঋণ প্রস্তাব নাকচ করে দেন। কিন্তু এবার সেই ঋণ প্রস্তাব গ্রহণ করা হলো। বর্তমানে যিনি অর্থ সচিব হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তিনি এর আগে ইআরডিতে ছিলেন। অর্থাৎ বহি:সম্পদ বিভাগের দায়িত্বে ছিলেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের যে বিভাগটি বৈদেশিক ঋণ এবং অর্থ বিষয়টি দেখভাল করেন। নতুন অর্থ সচিবের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর মিলেই সরকারকে এই ঋণ গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে বলে জানা গেছে। মুহিত যেমন অর্থ মন্ত্রণালয়ের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন তেমনটি নয় আ হ ম মোস্তফা কামালের ক্ষেত্রে। বরং এখানে আমলারাই বেশি নিয়ন্ত্রণ করে এবং গত কয়েক বছর ধরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলোই বর্তমান বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার নিতেন বলে সরকারের বিভিন্ন সূত্রগুলো জানিয়েছে।

সরকারের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে যে, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদায়ী গভর্নর হিসবে সাবেক আমলা ফজলে কবির অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার এবং বর্তমান সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, এরাই সরকারকে অর্থনীতির বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ দেন। এই পরামর্শগুলো কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভুল এবং অযৌক্তিক বলে মনে করা হয়। কিন্তু যেহেতু এখানে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয় নয় এবং রাজনৈতিক নেতারা অন্ধকারে থাকেন সেজন্য আমলারা সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন বলে বিভিন্ন মহল মনে করেন। যেমন- ফজলে কবির যখন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন, তখন বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সম্পর্কে যে তথ্য দেয়া হয়েছিল তার সত্যতা নিয়ে অনেকের মধ্যে এখন সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে আইএমএফের প্রতিনিধি দল যখন এসেছিল, তখন তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।

সরকারের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমলারা সংকটের গভীরে যান না, দীর্ঘমেয়াদি চিন্তাও করেন না, তারা তাৎক্ষণিকভাবে সংকট সমাধানের চেষ্টা করেন। যেহেতু আব্দুর রউফ তালুকদার এক সময় অর্থ সচিব ছিলেন, তিনি বর্তমান সঙ্কটের সহজ সমাধান হিসেবে আইএমএফ-বিশ্ব ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ গ্রহণকে যৌক্তিক-সঙ্গত মনে করেছেন এবং এজন্যই তিনি এভাবেই সরকারকে তিনি পরামর্শ দিয়েছেন। তবে এর সুদূরপ্রসারী তাৎপর্য, রাজনৈতিক প্রভাব ইত্যাদি বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়নি। আর যে কারণে অনেকে মনে করছেন যে, সরকার অতিমাত্রায় আমলা নির্ভর হওয়ার কারণে ভুল পথে পরিচালিত হচ্ছে। অবশ্য সরকারি নীতিনির্ধারকরা মনে করেন যে, আমলাদের কথাই চূড়ান্ত নয়। সব সিদ্ধান্ত রাজনৈতিকভাবেই নেয়া হচ্ছে। কাজেই আমলারা যে পরামর্শ দিচ্ছেন তাই যে সরকার গ্রহণ করছে, এমনটি নয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭