প্রায় চার বছর আগে চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক শিকদারের মা রওশন আরা মারা গেছেন। চিকিৎসকের অবহেলার কারণে মায়ের মৃত্যু হয়েছে, এমনই অভিযোগ করেন তিনি। এ ছাড়াও অপারেশনের নামে কিডনি চুরির অভিযোগও তুলেন এই নির্মাতা।
রোববার (৭ আগস্ট) চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট চত্বরে মামলার ফাইল হাতে তোলা একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন রফিক শিকদার। তিনি লিখেছেন, মা হত্যার বিচারের দাবিতে এখনও ঘুরছি আদালত থেকে আদালতে। অপারেশনের নামে কিডনি চুরির মাধ্যমে মাকে হত্যা করা ঘাতক ডাক্তারদের সর্বোচ্চ বিচার হবে, ইনশাআল্লাহ।
রফিক শিকদার জানান, সম্প্রতি ডিবির তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে তা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। একজন জেলা ও দায়রা জজের নেতৃত্বে হওয়া জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি যে তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল তার সঙ্গে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের ওসি মাহবুবের করা তদন্ত প্রতিবেদনের অসঙ্গতি স্পষ্ট! কোনো মিল নেই! মূলত ডিবির ওসি মাহবুব মেডিকেল সায়েন্সের পরিপন্থিমূলক তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের মাধ্যমে অভিযুক্ত ডাক্তারদেরকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। অবাক করার বিষয় হচ্ছে, তদন্ত চলাকালীন সময়ে এজাহারভুক্ত সাক্ষীদের জবানবন্দি নেওয়া হয়নি এবং তাদেরকে সাক্ষী হিসেবেও রাখা হয়নি দাখিলকৃত প্রতিবেদনে। এখানে যাদেরকে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই পেশাগত চিকিৎসক এবং তাদের বেশীরভাগেরই কর্মঠিকানা অভিযুক্ত অধ্যাপক হাবিবুর রহমান দুলালের নিয়ন্ত্রণাধীন বিএসএমএমইউ হাসপাতাল।
নির্মাতা আরও জানান, সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হচ্ছে, প্রতিবেদনটিতে মায়ের কিডনি জোড়া লাগানো ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ অপারেশনের পূর্বের সিটিস্ক্যান, আল্ট্রাসনোগ্রাম, এমআরআই, ডিটিপিএ রেনোগ্রাম রিপোর্টে মায়ের দুটো কিডনিই আলাদা এবং দুটো কিডনিরই আকৃতি, বৈশিষ্ট্য বা ফাংশনাল অবস্থার নিখুঁতভাবে বর্ণনা করা আছে। হর্ষসেপ কিডনির ক্ষেত্রে মেডিকেল রিপোর্টে লেফ্ট অ্যান্ড রাইট কিডনি কথাটি লেখা থাকে না। এক্ষেত্রে উল্লেখিত স্থানে লেফ্ট অ্যান্ড রাইট কিডনি লেখার বদলে হর্ষসেফ কিডনি কথাটিই লেখা থাকে। এছাড়াও স্বাভাবিক কিডনির চেয়ে এমন বিরল প্রকৃতির কিডনির আকৃতি বা গঠনপ্রণালীও ভিন্ন রকম; যা সাধারণ মেডিকেল পরীক্ষাতেই স্পষ্ট বোঝা যায়।
আমিও দেখতে চাই, মোড়লের জোর কোথায়! আজ আদালতে হাজির হয়ে ডিবির করা তদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে নারাজি পিটিশন দায়ের করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করে এসেছি। মাননীয় আদালত আগামী ১৭/০৮/ ২০২২ তারিখে নারাজি পিটিশন শুনানির দিন ধার্য করেছেন। সবার দোয়া চাই।’
রফিক শিকদারের অভিযোগ, স্বাভাবিক কিডনি ভুল করে অপসারণ করে তার মাকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (বিএসএমএমইউ) চার চিকিৎসক। ২০১৮ সাল থেকে অভিযোগ করলেও দুই বছর পর মামলা নিয়েছে পুলিশ। ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর রাজধানীর শাহবাগ থানায় এ বিষয়ে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
কিডনি জটিলতার কারণে ২০১৮ বিএসএমএমইউ-তে ভর্তি হন রফিক শিকদারের মা রওশন আরা। চিকিৎসকরা তাকে সুস্থ করে তুলতে তার বাম কিডনি কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন। ২০১৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বিএসএমএমইউ হাসপাতালে রফিক শিকদারের মায়ের অস্ত্রোপচার করেন কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগের প্রধান হাবিবুর রহমান দুলাল। কিন্তু বাম কিডনির সঙ্গে কেটে ফেলা হয় ডান কিডনিও।
এর কিছুদিন পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে রওশন আরাকে রাজধানীর একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরীক্ষার পর দেখা যায়, তার দুটি কিডনির একটিও নেই। এর দুই মাস পর রওশন আরার মৃত্যু হয়।
এ প্রসঙ্গে বিএসএমএমইউ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ওই রোগীর জন্মগতভাবে কিডনি কমপ্লিকেশন (জটিলতা) ছিল। তাছাড়া অপারেশনে রক্তক্ষরণ ও ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ায় বাম কিডনি অপসারণ জরুরি হয়ে পড়েছিল। কিন্তু রোগীর কিডনি দুটি নিম্নমুখী ও সংযুক্ত বা জোড়া লাগানো ছিল; যাকে বলা হয় হর্ষ কিডনি। একটা ফেলতে গেলে আরেকটাও বেরিয়ে আসে। যেটা ডাক্তার দুর্ভাগ্যক্রমে ও অনিচ্ছাকৃতভাবে ফেলে দিয়েছিলেন। কারণ আলট্রাসনোগ্রাম ও সিটি স্ক্যানে বিষয়টি ধরা পড়েনি।