ইনসাইড বাংলাদেশ

অর্থপাচার দুর্নীতিসহ সংকটের ৫ কারণ


প্রকাশ: 07/08/2022


Thumbnail

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে অর্থনৈতিক সংকট ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। সরকার মুখে যাই বলুক না কেন, অর্থনৈতিক সংকট যে বাড়ছে এবং সরকার যে অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে চিন্তিত তার প্রমাণ পাওয়া যায় জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে। আর এই অর্থনৈতিক সংকটের জন্য সরকার বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে মূলত চিহ্নিত করছে। সরকার বলছে যে, করোনা এবং করানোর পরপরই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব অস্থিতিশীল হয়ে উঠেছে এবং সে কারণেই বাংলাদেশও সংকট মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। এজন্যই সরকার লোডশেডিং দিয়েছে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি হচ্ছে এবং সর্বশেষ জ্বালানি তেলের রেকর্ড মূল্যবৃদ্ধি হলো।

তবে অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বৈশ্বিক পরিস্থিতি বর্তমান সঙ্কটের একমাত্র কারণ নয়। বরং দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে অব্যবস্থাপনা এবং অনিয়মগুলো হচ্ছে তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে সাম্প্রতিক সময়ের সংকটে। বর্তমানে বাংলাদেশে যে অর্থনৈতিক সঙ্কট তার পিছনে ৫টি কারণকে চিহ্নিত করছেন রাজনীতিবিদ এবং অর্থনীতিবিদরা। তার মধ্যে রয়েছে-

১. অর্থপাচার: গত ১২ বছরে বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার হয়েছে এবং সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের রক্ষিত অর্থ গত এক বছরে ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। তা এখন প্রায় ১০০ কোটি সুইস ফ্রাঙ্কের কাছাকাছি। বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের অর্থপাচার কি পরিমাণ হয়েছে তার কোনো আনুষ্ঠানিক হিসেব নেই এবং এটি প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থাও নেই। অর্থনীতিবিদরা বলছেন যে, সরকার যদি অর্থপাচার রোধ করতে না পারে তাহলে অর্থনৈতিক সংকটের এই শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে পারবে না। কারণ, বাংলাদেশের বিনিয়োগের একটি বিপুল অংশ পাচার হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ নিয়েছেন। কিন্তু সেই উদ্যোগ সফল হয়নি। অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, বাস্তবে এই উদ্যোগ সফল হওয়া সম্ভবও নয়।

২. দুর্নীতি: বাংলাদেশের অর্থনীতিকে কুঁড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে দুর্নীতি। দুর্নীতিগুলোর কোনো বিচারও হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতির মামলাগুলো পড়ে আছে। পিকে হালদার হাজার হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে পালিয়ে গেছে, তাকে আইনের আওতায় আনতে পারেনি। এরকম অনেক দুর্নীতির ঘটনারই শেষ পর্যন্ত কোনো যুক্তিসংগত বিচার হয়নি। ফলে দুর্নীতি আমাদের অর্থনীতিকে ক্ষয়িষ্ণু করে দিচ্ছে বলেও অর্থনীতিবিদরা মনে করেন।

৩. ব্যাংকিং খাতে লুটপাট: বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকটের একটি বড় কারণ হলো ব্যাংকিং খাতে বিপুল পরিমাণ লুটপাট হচ্ছে। হলমার্কের ঘটনা, বিসমিল্লাহ গ্রুপের ঘটনা, বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি; ব্যাংকিং খাতের এই সমস্ত কোনো অনিয়ম লুটপাটের বিচার হয়নি এবং এই টাকাগুলো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে সরকার এখন সংকটে পড়েছে। ব্যাংকিং খাতে যদি সু-ব্যবস্থাপনা হতো, ব্যাংকিং খাতে যদি লুটপাট বন্ধ হতো তাহলে পরিস্থিতি এখন অনেক ভালো থাকতো বলে অনেকেই মনে করেন।

৪. আমলাদের ভুল সিদ্ধান্ত: অনেকেই মনে করেন বাংলাদেশে একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে উন্নয়ন পরিকল্পনা নীতিতে এবং যে সমস্ত সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে আমলারা। এই সমস্ত ভুল সিদ্ধান্তের কারণে প্রকল্প ব্যয় বারবার করে বেড়েছে, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে এবং সেই সমস্ত প্রকল্পগুলোতে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির ঘটনা ঘটেছে। যেটি সরকারকে এখন সংকটের মধ্যে ঠেলেছে।

৫. একসাথে অনেকগুলো মেগা প্রকল্প গ্রহণ: সরকারের পক্ষ থেকে একসাথে অনেকগুলো মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। যদি একটির পর একটি মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হতো তাহলে হয়তো বাংলাদেশ এত চাপে পড়তো না। আগামী বছর থেকে বাংলাদেশকে মোটা অঙ্কের ঋণ পরিশোধ করতে হবে। একইসাথে বাংলাদেশ পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের মতো মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এই প্রকল্প গুলো একসাথে গ্রহণ করার ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটা চাপ পড়েছে বলে অনেকে মনে করেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭