স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসেব অনুযায়ী, দেশে তৃতীয় লিঙ্গের সংখ্যা ১৩ হাজার। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে তাদের জন্য দেওয়া হয়েছে আরও সুযোগ সুবিধা। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের কর্মসংস্থান, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, সামাজিক ও অর্থনৈতিক আত্তীকরণের লক্ষ্যে বর্তমানে চালু করা বিশেষ কর প্রণোদনা আরও প্রসারিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কিন্তু তার পরও তারা সেই সুযোগ যথাযথ ভাবে কাজে লাগাচ্ছেন কিনা, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায় সাধারণ মানুষের মনে।
বর্তমান সমাজের প্রেক্ষাপট অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন মানুষের মনে তৃতীয় লিঙ্গ নিয়ে নানা ধরণের ট্যাবু আছে। যা আদিম কাল থেকেই মানুষ লালন করছে। নিজেদের মধ্যে এই সকল চিন্তাভাবনা পোষণ করার জন্য অনেক সময় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ বেড়ে যায়। যা তাদের কর্মক্ষেত্র থেকে বিমুখ করে তোলে এবং শেষমেশ নিজেদের পরিচিত পেশায় থাকতে বাধ্য হয়। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের সমাজ থেকে আলাদা করে দেখা না হলেই তাদের জীবন স্বাভাবিক হওয়া সম্ভব। তাদের আলাদা ভাবে দেখা হয় বলেই তাদের বাসস্থান, কর্মসংস্থান এমনি জীবনধারা পর্যন্ত একদম ভিন্নধর্মী। তাদের জীবিকার যেটুকু কাজ করা প্রয়োজন সেটুকুও তারা করার মতো যথেষ্ট সুযোগ পাই না বলে, চাঁদাবাজি কিংবা মানুষের থেকে খুঁজে তাদের জীবিকা চালাতে হয়।
তাদের বাসস্থান এবং সমাজ সম্পূর্ণ বিছিন্ন হওয়ার অন্যতম কারণ হলো সমাজ দ্বারা যথেষ্ট স্বীকৃতি না পাওয়া। সমাজ কর্তৃক যদি যথেষ্ট সহযোগিতা পাওয়া যায়, তবে তাদের জীবনের উন্নতি হওয়া সম্ভব। সমাজে পাঁচটি মৌলিক অধিকার যথাযথ পূরণ না হওয়ার কারণেই তাদের পুরাতন পেশা বেছে নিতে হয় বলে ধারণা অনেক বিশেষজ্ঞদের৷ তবে সমাজে অনেকেই এখন এসব ক্ষেত্রে সচেতন, নিজেদের মতো সহানুভূতি এবং সাহায্য তারা করতে এগিয়ে আসছেন। তবুও কমে আসছে না পুরাতন পেশার জন্য তাদের প্রীতি।
দেশের অনেক সংগঠন আছে যারা কেবলই তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করে থাকে। তাছাড়া সরকার কতৃক ভোটের অধিকার, পেশাগত স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে, করমুক্তির অনুমোদন পাশ এবং বিশেষ ঋণ গ্রহণের সুযোগও তৈরি হয়েছে দেশে। বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মিলে কাজ করছে তাদের স্বাস্থ্য উন্নয়ন, অধিকার, সরকাএই এবং রাজনৈতিক বিভিন্ন অধিকার আদায়ের উদ্দেশ্যে৷ সেক্ষেত্রে বেশিরভাগই ভালো উদ্যোগ এবং তাদের বাস্তবায়নের দৃষ্টান্ত। কিন্তু, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের মধ্যে শতকার ১৫ শতাংশ কেবল তাদের পুরাতন পেশা বাতিল করে অন্য দিকে মন দিতে পেরেছেন।
সাইকোলজিক্যাল টার্ম থেকে সাইকোলজিস্ট রা এর কারণ হিসেবে মনে করেন, তাদের প্রথাগত জীবনব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা নিয়ে তাদের ভেতর চলতে থাকা নানা ধরনের সংশয়ের কারণেই মুলত তারা আদিম জীবন ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। কারণ তাদের মধ্যে এই ভীতি কাজ করতে থাকে যে নানা ধরণের বৈষম্যের স্বীকার হতে হবে, যা তারা জন্মের পর থেকেই দেখে আসছে। সেক্ষেত্রে সরকারের আরো কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত যেখানে তাদের শিক্ষা বাধ্যতামূলক এবং কর্মসংস্থানে সমান সুযোগ দেওয়ার মতো উদ্যোগ থাকবে।
অনেকেই সাহস করে নিজেদের জীবনের চাকার চলন পরিবর্তন করার জন্য বেরিয়ে এসেছেন তাদের আদিম সমাজ এবং আদিম জীবন ধারা থেকে। নিজেদের পরিচয় গড়ে তুলেছেন শিক্ষা এবং নতুন কর্মসংস্থানের মাধ্যমে। কিন্তু অনেকেই শেকল ভাঙ্গার মতো সেই মানসিক দৃঢ়তা এখনো গড়ে তুলতে পারেননি। যা তাদের আষ্টেপৃষ্টে ধরে রেখেছেন তাদের পুরাতন জীবন ধারায়। তবে প্রদত্ত সুযোগ সুবিধা গুলোকে আতংক ঝেড়ে যদি কাজে লাগাতে পারে তবে জীবন পরিবর্তন এবং অধিকার আদায়ের দাবী করা সম্ভব বলে আআশাবাদী বিশেষজ্ঞরা।