ইনসাইড গ্রাউন্ড

কমনওয়েলথ গেমস: জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বজুড়ে বদলে দিচ্ছে জীবন


প্রকাশ: 09/08/2022


Thumbnail

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে আলেকজান্ডার স্টেডিয়ামের পুনর্নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছিল, যখন কিনা সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় এই অঞ্চলে। কমনওয়েলথ গেমসের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা এই স্টেডিয়ামের চূড়ান্ত কাজ শেষ হয় চলতি বছরের জুলাইয়ে, ঠিক এমন এক সময় যখন যুক্তরাজ্যের তাপমাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিলো অতীতের সব রেকর্ড।

জলবায়ু পরিবর্তন বিদ্যমান। শুধু এখানে না, অন্য সব দেশেই। আর এই পরিবর্তন বেশ ভালো ভাবেই অনুভব করেছেন বার্মিংহামে আয়োজিত এই আসরের কয়েকজন প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ।

আগামীতে খেলাধুলা, মানবতা এবং পৃথিবীর ভবিষ্যত নিয়ে তাদের ভয় এবং আশার কথা ব্যক্ত জানিয়েছেন তিনজন কমনওয়েলথ ক্রীড়াবিদ।

এলিউড কিপচোগে (কেনিয়া, অ্যাথলেটিক্স)

"আমি কেনিয়ার যে গ্রামাঞ্চলে থাকি এবং প্রশিক্ষণ করি, সেইখানআকার  জনসংখ্যার প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষক।

"মানুষ জানে যে আজ থেকে ৫ বছর আগেই যে পরিমাণ বৃষ্টিপাত হতো, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন আর সেই মাত্রায় হয়না। এটি বাস্তব একটি কথা। এটি ক্রীড়াবিদদের উপরও প্রভাব ফেলে। জলবায়ু পরিবর্তন কিছু দেশে কঠিন সমস্যার সৃষ্টি  করেছে। একটানা দুই, তিন ঘন্টা দৌড়ানো সম্ভব হয় না।"

"এটি ম্যারাথন দৌড়বিদ হিসাবে সত্যিই দুঃখজনক। গরম পরিবেশে দৌড়ানো খুবই কঠিন। এটা ভীতিকর যে, একটি সেশন বা রেস শেষে, আপনি কীভাবে অনুভব করেন যে আপনার সমস্ত শক্তি চলে গেছে।‘’

"আমরা দেখেছি কিভাবে ২০১৯ সালে দোহায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ম্যারাথন মধ্যরাতে শুরু করতে হয়েছিল যার একামত্র কারণ অত্যধিক গরম।

"আপনি যদি পারফর্ম করতে চান, আপনি যদি সত্যিই দৌড় উপভোগ করতে চান, আপনার অবশ্যই পরিষ্কার অক্সিজেন সহ একটি পরিচ্ছন্ন পরিবেশ থাকতে হবে।সুতরাং, পরিবেশের বিপর্যয় নিয়ে অবস্থান নেয়া এবং যার যার জায়গা থেকে জলবায়ু বাঁচানোর জন্য কথা বলা আমাদের জন্য সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ।"

"সোশ্যাল মিডিয়া কল্যাণে মানুষ  এখন দ্রুতই সকল খবর পেতে পারে। আপনি একজন বন্ধুকে বলতে পারেন যে এটি আমাদের দেশ, আমাদের মহাদেশ, আমাদের আবাসস্থল, আমাদের বাড়ি। আমাদের অন্য কেউ নেই।"

ইরোনি সাউ (ফিজি, রাগবি সেভেন)

"আমি যে দ্বীপগুলিতে বড় হয়েছি সেখানে বড় ধরণ এর একটি জতিলতা রয়েছে। সেখানে প্রতিদিন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট পরিবর্তনগুলি খালি চোখে দেখা যায়। যা আমাদের চোখের সামনে ঘটছে।‘’

"আমার মায়ের গ্রামে একটি রান্নাঘর এবং এক বাথরুমযুক্ত একটি বিল্ডিং ব্লক ছিল। আমি যখন ছোট ছিলাম তখন এটি সৈকত থেকে ১০ মিটার দূরে ছিল। কিন্তু এটি আর সেখানে নেই। আপনি চাইলে সমুদ্রতলে এর ভিত্তি স্থাপনা গুলো দেখতে পারবেন।"

" চার বছর বাইরে থাকার পরে সম্প্রতি বাড়িতে ফিরে গিয়েছিলাম। সেখানে একটি কবরস্থান রয়েছে যেখানে আমরা আমাদের দাদা-দাদি এবং পূর্বপুরুষদের কবর দিয়েছিলাম, কিন্তু এখন সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে লোকেরা মৃতদেহগুলিকে আরও অভ্যন্তরীণ বা পাহাড়ের কাছে সরানোর কথা বলছে।

"এটি সত্যিই আমাদের জীবনকে, এমনকি খেলাধুলাকেও প্রভাবিত করছে।

"ছোটবেলায় আমরা সৈকতে রাগবি খেলতে পছন্দ করতাম৷ আমরা সবসময় সৈকতের শীর্ষে বালির স্ট্রিপে খেলতাম, একদিকে সমুদ্র এবং অন্যদিকে নারকেল গাছ৷

"এখন যদিও জোয়ারের সময় সেই বালির স্ট্রিপ নেই, জল নারকেল গাছের পাশ দিয়ে উঠে আসে। আমাদের খেলার জন্য কোন সমুদ্র সৈকত, জায়গা নেই।

"যদিও এটি সত্যিই পুরো বিশ্বকে প্রভাবিত করছে। ফ্রান্সে, যেখানে আমি এখন রাগবি খেলি সেকাহ্নে আমার বাড়ি থেকে বেশী গরম অনুভূত হয়। আমি মার্সেইতে বিমান থেকে নামার সাথে সাথে অত্যধিক গরমের কারণে আমার মাথা ঘোরা শুরু করে। গ্রীষ্মে ফ্রান্সের দক্ষিনাঞ্চলে থাকা সাত্যি বেশ কঠিন"

মুবাল আজম (মালদ্বীপ, সাঁতারু)

"মালদ্বীপের অনেক দ্বীপে ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে, ভাঙ্গনের কারণে বিলীন হয়ে গেছে অনেকের সহায়-সম্বল।

"রাজধানী মালে, যেখানে আমি আমার জীবনের বেশিরভাগ সময় বসবাস করেছি, সেখানে জনগণের জন্য কৃত্রিম বিচ রয়েছে। তবে বালু ক্ষয়ের কারণে এখানকার সমগ্র ভৌগলিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে বলএ মনে হচ্ছে।‘’

"আমাদের প্রজন্মের ক্রীড়াবিদদের মধ্যে আমি ক্রমবর্ধমান পরিবেশ সচেতনতা দেখতে পাচ্ছি, যে্টা আমরা সরাসরি নিজেরা পেয়েছি।‘’

"আমি আমার দলের সাথে সাগরে প্রশিক্ষণ নিতাম। কিন্তু জল এত দূষিত ছিলো যে প্রায়ই অনুশীলন করা সম্ভব হতোনা।

"আমরা জানতাম যে আমাদের এটিতে অভ্যস্ত হতে হবে কারণ আমরা প্রয়োজনের সময়ে সচেতন হতে পারিনি৷ কিন্তু এটি আমাকে ভাবতে সাহায্য করেছে কীভাবে আমি আমাদের দেশসহ আরও টেকসই উন্নয়নের উদ্দেশশে সাহায্য করতে পারবো।‘’

তিনি মনে করেন ক্রীড়া সম্প্রদায়ের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা অনেক জরুরি। ক্যাননা তাদের মধ্যে সকলকে একিত্রিত করার শক্তি রয়েছে।

"আমি সমমনা অনেক লোকের সাথে দেখা করেছি। আমি মনে করি খেলাধুলা এই বিষোয়ে বিশেষ প্রভাব বিস্তার করতে হবে। কারণ নিজেরা বাচতে চাইলে আমাদের মাঝে পরিবেশ সচেতনতা গড়ে তুলতেই হবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭