ইনসাইড বাংলাদেশ

প্রাণ ও প্রকৃতির শিল্পী এস এম সুলতানের জন্মদিন আজ


প্রকাশ: 10/08/2022


Thumbnail

বাংলাদেশের একজন বিখ্যাত চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান। পুরো নাম শেখ মোহাম্মদ সুলতান। তৎকালীন পূর্ব বাংলা, ব্রিটিশ ভারতের (বর্তমান বাংলাদেশ) নড়াইলের মাসিমদিয়া গ্রামে দরিদ্র কৃষক-পরিবারে তার জন্ম। শৈশবে পরিবারের সবাই তাকে লাল মিয়া বলে ডাকতো। 

এস এম সুলতানের ছোটবেলাটা বড় সুখের ছিল না। ১৯২৩ সালের ১০ আগস্ট তাঁর জন্ম। বর্তমান নড়াইল জেলার মাসিমদিয়া গ্রামে, চিত্রা নদীর পাড়ে। বাবা শেখ মোহাম্মদ মেসের আলীর মূল পেশা কৃষি। শুধু চাষবাস করে সংসার চলে না। তাই রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। মাঝে মাঝে ঘরামিগিরিও করেন। আগে গাঁয়ের বেশির ভাগ ঘর ছিল মাটির তৈরি। সেসব ঘরের ছাউনি দেওয়া হতো খড় দিয়ে। খড় দিয়ে ছাউনি দেওয়ার কাজটা সবাই পারত না। যিনি পারতেন, তাঁকে বলা হতো ঘরামি। রাজমিস্ত্রিদের কাজে পদে পদে শিল্পের ছোঁয়া। বাবা যখন লোকের দালানবাড়ি তৈরি করতেন, সেসবে কত কারুকাজ, নকশা করতে হয়। শিশু সুলতান যেতেন বাবার পিছু পিছু। বাবার কাজ মুগ্ধ হয়ে দেখতেন। বাবার সেই পেশাই সুলতানের ভেতরে শিল্পীসত্তার জন্ম দেয়।

দারিদ্র্যতার মাঝে বেড়ে ওঠা সুলতান ১৯২৮ সালে নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। স্কুলের অবসরে রাজমিস্ত্রি বাবাকে কাজে সহযোগিতা করতেন এবং মাঝে মাঝে ছবি আঁকতেন শিশু সুলতান। ১৯৩৩ সালে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রাবস্থায় জমিদার শ্যামাপ্রাসাদ মুখোপাধ্যায়ের ছবি এঁকে তাক লাগিয়ে দেন। মুগ্ধ হন শ্যামাপ্রাসাদসহ নড়াইলের তৎকালীন জমিদাররা। পড়ালেখা ছেড়ে ১৯৩৮ সালে চলে যান ভারতের কলকাতায়।

চিত্রসমালোচক শাহেদ সোহরাওয়ার্দীর সাথে তার (সুলতান) পরিচয় হয়। একাডেমিক যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও সোহরাওয়ার্দীর সুপারিশে ১৯৪১ সালে ভর্তি হন কলকাতা আর্ট স্কুলে। ১৯৪৩ মতান্তরে ১৯৪৪ সালে কলকাতা আর্ট স্কুল ত্যাগ করে ঘুরে বেড়ান এখানে-সেখানে। কিছুদিন কাশ্মীরের পাহাড়ে উপজাতিদের সাথে বসবাস এবং তাদের জীবন-জীবিকা ভিত্তিক ছবি আঁকেন সুলতান।

মহান এই শিল্পী ১৯৫৩ সালে দেশে ফিরে আসেন। কিছুদিন ঢাকা আর্ট কলেজের ছাত্রাবাসে অবস্থান করে ফিরে যান মাতৃভূমি নড়াইলে। ১৯৫৫ সালে নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাচুড়ি পুরুলিয়ায় নন্দন কানন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। শিল্পী ১৯৫৬ সালে পল্লী কবি জসিম উদ্দিনের সঙ্গে কয়েকদিন আবস্থান করেন। ১৯৬৮ সালে যশোর-খুলনা ক্লাবে তার একক চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। ১৯৬৯ সালের ১০ জুলাই সুলতানের মাছিমদিয়ার বাড়িতে দি ইনস্টিটিউট অফ ফাইন আটর্স উদ্বোধন করেন। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শিল্পী জেলার বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে-ঘুরে যুদ্ধের ছবি আঁকেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শিল্পী নিজ শহরে ঘুরে বেড়িয়েছেন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে। ১৯৭৬ সালে ঢাকায় শিল্পকলা একাডেমিতে তার একক চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। মুলত এই প্রদশর্নীর মাধ্যমে এ দেশের সুশীল সমাজের তার নতুন ভাবে পরিচয় ঘটে।

কালোর্ত্তীণ এই চিত্রশিল্পী ১৯৮২ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ম্যান অব এশিয়া পুরস্কার লাভ করেন। একই বছর তিনি একুশে পদক পান। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ সরকারের রেসিডেন্স আটির্স্ট হিসেবে স্বীকৃতি, ১৯৮৬ সালে চারুশিল্পী সংসদ সম্মাননা এবং ১৯৯৩ সালে স্বাধীনতা পদক পান এস এম সুলতান। 




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭