ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প ভাবার পরামর্শ


প্রকাশ: 10/08/2022


Thumbnail

নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আন্তর্জাতিক সমর্থন পাচ্ছে না বিএনপি। বরং তাদেরকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প ভাবার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে বিএনপি বিভিন্ন কূটনৈতিক অঙ্গনে ধরনা দিচ্ছে, বিভিন্ন দূতাবাসের সঙ্গে বৈঠক করছে। বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আনুষ্ঠানিক আন্দোলন শুরুর আগে পশ্চিমা দেশগুলোর সহযোগিতা এবং সমর্থন চায়। আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপির অবস্থান হলো যে, তারা মনে করে যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। এজন্য তারা আন্তর্জাতিক মহলের কাছে দেন-দরবার করছে। পশ্চিমা দেশগুলো বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সম্মতি দেয় এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মাধ্যমেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিএনপির এই দাবির সমর্থন আসেনি। বরং পশ্চিমা দেশগুলো মনে করছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, বরং নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা, প্রশাসনকে দায়িত্বশীল করার মাধ্যমেই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব। আর এই বিষয়টি তারা বিএনপিকে জানিয়ে দিয়েছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো আগামী নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ করতে চায়। আর এই নিরপেক্ষ করার জন্য ইতোমধ্যে তারা বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা বলছে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ১৪টি দেশের কূটনীতিকরা একাধিকবার বৈঠক করেছে। এসব বৈঠকে সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে তাদের আগ্রহের কথা তারা বলেছে। আগামী নির্বাচন তারা পর্যবেক্ষণ করবে বলেও জানিয়েছে। এরকম বাস্তবতায় বিএনপি আশা করেছিল যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো হয়তো অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য একটি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির প্রতি সমর্থন দেবে। বিএনপি নেতারা মনে করছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলো যদি এই দাবি সমর্থন করে তাহলেই বিএনপির আন্দোলনের এক ধাপ বিজয় অর্জিত হয়। কারণ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের বাইরে গিয়ে এবার সরকার কোনো কিছু করতে পারবে না। কিন্তু সবগুলো দেশই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপারে তাদের নেতিবাচক অবস্থান বর্ণনা করেছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো মনে করে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের জন্য একটি সংবিধান সংশোধনী প্রয়োজন। যে সংবিধান সংশোধন জটিল, কঠিন, সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। যেটি এখন করা সম্ভব নয়। দ্বিতীয়ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য কূটনীতিক দেশগুলো তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে বলছে যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নিলে আরও জটিলতা তৈরি হয় এবং এই জটিলতা দেশে অস্থিতিশীল অবস্থা তৈরি করে। সেটি তারা চাচ্ছে না। তৃতীয়ত, অন্যান্য দেশের নির্বাচনগুলো সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুসারে হয় এবং সেই নির্বাচনকে সুষ্ঠু নিরপেক্ষই হয়। কাজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিলে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে এমন মতের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো একমত নয়। 

চতুর্থত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা দেশগুলো মনে করছে যে, দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিপক্ষে অবস্থান করছে। এছাড়া জাতীয় পার্টিও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে সমর্থন করে না। এরকম পরিস্থিতিতে শুধুমাত্র একটি বড় দলের চাপে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি অগ্রহণযোগ্য এবং গণতান্ত্রিক রীতিনীতির সাথে সাংঘর্ষিক। বরং বিএনপিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা জানিয়ে দিয়েছে যে, নির্বাচন কমিশনের সংস্কার এবং নির্বাচনকালীন সময়ে প্রশাসন যেন যথাযথ নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করে সেটি নিশ্চিত করা। আন্তর্জাতিক নজরদারির মাধ্যমে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করা সম্ভব এবং এরকম একটি নির্বাচন করার ব্যাপারে পশ্চিমা দেশগুলো বিএনপির সহযোগিতা চেয়েছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭