কালার ইনসাইড

আমির-অক্ষয় কী পারবে বলিউডের চিরচেনা রূপ ফিরিয়ে আনতে?


প্রকাশ: 10/08/2022


Thumbnail

একটা সময় ছিলো যখন বাংলা সিনেমা দেখার জন্য মুখিয়ে থাকতেন চলচ্চিত্র প্রেমীরা। মাঝে চলচ্চিত্রে অশ্লীলতা থেকে শুরু করে নানা কারণে হল বিমুখ হন তাঁরা। এরপর বলিউডের সিনেমায় সস্তি খুঁজে পান। গল্প, নির্মাণশৈলী সব কিছু মিলিয়ে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে যায় শাহরুখ খান, আমির খান, সালমান খান, অক্ষয় কুমারদের নাম। তবে কে জানত সিনেমার এ বিশ্বায়নের যুগে এসে প্রতাপশালী বলিউডক অনেকটাই পিছিয়ে যাবে দর্শকদের চাহিদা পূরণ করতে। 

বলিউডের চেনা ছবিটা গিয়েছে পাল্টে। ২০১৯ সালে একাধিক বক্স অফিস হিট ছবি মুক্তি পেয়েছিল বলিউডে। তবে সেই শেষ। তারপর থেকে বলিউড কিছুটেই বক্স অফিসের নিরিখে পায়ের তলার মাটি শক্ত করে তুলতে পারছে না। কোথাও গিয়ে যেন ছন্দ পতন ঘটছে প্রতিটা মুহূর্তে। একের পর এক স্টারদের ছবি মুক্তি পাচ্ছে, মুক্তি পাচ্ছে বিগ বাজেট প্রজেক্টও। তবে লাভের লাভ যেন কিছুই হচ্ছে না। হাতে গোনা কয়েকটি ছবি মাত্র বক্স অফিসে কিছুটা ঠাঁই পাচ্ছে। ঝড়ের গতিতে যা সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ভক্তের দরবারে। 

অক্ষয় কুমার, সালমান খান, আমির খান, এরা হলেন বক্স অফিসের জন্য তুরুপের তাস। তবে সেই সমীকরণেও ভাটা। কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। চলতি বছর বলিউডে মুক্তি পেয়েছে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র যার মাঝে অন্যতম, গঙ্গুবাঈ, ব্রহ্মাস্ত্র, পৃথ্বীরাজ, ভুল ভুলাইয়া ২, ধাকড়ও, সহ আরও বেশ কিছু চলচ্চিত্র। তবে হাতে গোনা দুই একটি চলচ্চিত্র ছাড়া তেমনভাবে ব্যবসা করতে পারেনি বাকিগুলো। 

এদিকে বলিউডের সুপারস্টারদের সিনেমাকে পিছনে ফেলে এখন দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করছে দক্ষিণী ছবি। কিন্তু কেন! এই চর্চা গত কয়েক ধরেই সকলের মুখে মুখে ফিরছে, কেন বলিউড বিমুখ দর্শকেরা! আমির খানের কথায়, বেশ কিছু ছবি আছে, যা দক্ষিণ সর্বভারতীয় স্তরে উপহার দিয়েছে। যার মধ্যে পুষ্পা, বাহুবলি, কেজিএফ প্রভৃতি রয়েছে। এই ছবির মধ্যে যে বিষয়বস্তু যে টোন রয়েছে, তা কোথাও গিয়ে যেন বলিউডে বর্তমানে নেই। একটা সময় যা বলিউডের পরিচিতি ছিল।

একসময় দক্ষিণী তারকারা মুখিয়ে থাকতেন বলিউডে ডাক পাওয়ার জন্য। সে অবস্থাও পাল্টেছে। সাইফ আলী খান, অজয় দেবগন, সুনিল শেঠি, আলিয়া ভাটদের ভিড় করতে দেখা যাচ্ছে দক্ষিণী সিনেমায়। অন্যদিকে সিনেমা হিট করতে অসিন, সামান্থা, প্রভাষদের ডাক পড়ছে বলিউডে। শুধু তা-ই নয়, সুপারস্টাররা রিমেক করছেন দক্ষিণী সিনেমা। তেলেগু ভাষার ‘অর্জুন রেড্ডি’ সিনেমার রিমেক ‘কবির সিং’। ২০১৯ সালে সবচেয়ে বেশি আয় করা ও আলোচিত সিনেমা ছিল এটি। এছাড়া শহীদ কাপুরের পরবর্তী সিনেমা ‘জার্সি’ও দক্ষিণী সিনেমার রিমেক। 

বলিউডে সেই ঘরানাকে ছুঁতে পেরেই সাফল্য দক্ষিণের বলেই মনে করেন আমির খান। সম্প্রতি কফি উইথ করণে এসে করণের প্রশ্নের সাফ উত্তর দিয়ে জানালেন, এর জন্য তুমি দায়ী। কারণ এই ঘরানার ছবি নিয়ে এখন খুব একটা কাজ হয় না। বিশেষ করে করণ জোহর তো ননই। ফলে সেই সূত্রেই বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে যায়, আমির খানের উত্তরের ইঙ্গিত। তবে আমির খান একাই নন, অতীতে বলিউডে একাধিক স্টার এই মন্তব্য করেছেন, যে বলিউডে একটা সময় যে ধাঁচের ছবি করা হত, দক্ষিণ এখন সেই স্টাইলের ওপর ভর করেই বক্স অফিসে ছক্কা হাঁকাচ্ছে।

এদিকে বিরতি ভেঙে বড় পর্দায় ফিরতে চলেছেন বলিউড সুপারস্টার আমির খান। তার অভিনীত আলোচিত ‘লাল সিং চাড্ডা’ সিনেমাটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে আগামী ১১ আগস্ট।

একই দিনে মুক্তি পাবে আরেক সুপারস্টার অক্ষয় কুমারের ‘রক্ষা বন্ধন’।

বহুদিন পর অক্ষয় ও আমিরের সিনেমা মুখোমুখি হচ্ছে! পর্দায় তাদের মধ্যে চলবে প্রতিযোগিতা। ব্যবসায়িক দিক থেকে কার সিনেমা এগিয়ে থাকে তা দেখার অপেক্ষায় দর্শক।

এদিকে, এরই মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে সিনেমা দুইটির প্রথম দিনের অগ্রিম টিকিট বুকিং। প্রথম রাতেই ৭৪ লাখ রুপির টিকিট বিক্রি হয়েছে ‘লাল সিং চাড্ডা’র। বিপরীতে অক্ষয় কুমারের ‘রক্ষা বন্ধন’র টিকিট বিক্রি হয়েছে ৬৭ লাখ রুপি। শুরুতে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছেন ‘খিলাড়ি’।

ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম জানায়, যদিও দুই তারকার সিনেমা মুক্তির ক্ষেত্রে রয়েছে একটি বিশেষত্ব। আমির খানের সিনেমা প্রাথমিকভাবে মাল্টিপ্লেক্সে বেশি চলে। অন্যদিকে অক্ষয় কুমারের দাপট সিঙ্গল স্ক্রিনে। তাই দুই সিনেমার সঠিক সংখ্যাটা পাওয়া যাবে প্রথম দিন টিকিট বিক্রির পর।

জনপ্রিয় হলিউড সিনেমা ‘ফরেস্ট গাম্প’র অফিশিয়াল রিমেক ‘লালা সিং চাড্ডা’। ‘ফরেস্ট গাম্প’র কাহিনীকে ভারতীয় দর্শকদের জন্য উপযোগী করে তৈরি করেছেন পরিচালক অদ্বৈত চন্দন। এক শিখ ব্যক্তির দেশ যাত্রার গল্প ফুটে উঠবে এই সিনেমায়। এতে আমিরের সহশিল্পী কারিনা কাপুর খান।  

অন্যদিকে অক্ষয় কুমারের বহুল প্রতীক্ষিত সিনেমা ‘রক্ষা বন্ধন’র গল্পে ভাই-বোনের সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েছে। পরিচালক আনন্দ এল রাইয়ের সিনেমাটিতে অক্ষয় কুমারের বিপরীতে অভিনয় করেছেন ভূমি পেড়নেকর।  

এদিকে সম্প্রতি আমির খানের পুরনো একটি সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে 'লাল সিং চাড্ডা' বয়কট করার ডাক দিয়েছেন নেটিজেনদের একটি অংশ। আর সেই ট্রেন্ডে সুর মিলিয়েছেন বহু মানুষ। এ প্রসঙ্গে কারিনাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এত প্ল্যাটফর্ম, মানুষের এত ধরনের বক্তব্য। সবচেয়ে ভালো হয় এ ধরনের কথাগুলো এড়িয়ে যেতে পারলে। এরকম সব কথা নিয়ে ভাবতে বসলে তো জীবন চালিয়ে নিয়ে যাওয়াই মুশকিল হয়ে পড়বে। তাই এসব ব্যাপার আমি গায়ে মাখি না।

এদিকে আমির অবশ্য কষ্টই পাচ্ছেন এসব বয়কট ট্রেন্ডে। আমিরকে প্রশ্ন করা হয়, তার ছবি নিয়ে এই বয়কটের ডাক তার মনে কষ্ট দেয় কি না! এর জবাবে তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমার খারাপ লাগে। আরও বেশি খারাপ লাগে এই ভেবে যে, যারা এই ধরনের প্রচারণা চালাচ্ছে, তাদের অনেকে সত্যিই বিশ্বাস করেন যে আমি ভারতবর্ষকে ভালোবাসি না। কিন্তু এটা সত্যি নয়। এটা ভুল এবং মিথ্যা। দুর্ভাগ্যজনক কিছু মানুষ মনে মনে এমনভাবে। দয়া করে তার সিনেমা বয়কট না করার অনুরোধ জানিয়েছেন পাশাপাশি সিনেমাটি দেখারও অনুরোধ করেছেন।

এখন অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন আমির-অক্ষয় কী পারবে বলিউডের চিরোচেনা রূপ আবারও ফিরিয়ে আনতে?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭