ইনসাইড পলিটিক্স

ভারতই বিএনপির প্রধান মাথাব্যথা?


প্রকাশ: 11/08/2022


Thumbnail

বিএনপি সরকারবিরোধী আন্দোলনের চেষ্টা করছে। প্রতিদিনই নানা রকম সভা-সমাবেশের মত কর্মসূচি গ্রহণ করছে। এ সমস্ত কর্মসূচিতে বিএনপি সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র, সরকারের দিন ঘনিয়ে আসছে ইত্যাদি নানা কথা বলছে। কিন্তু মুখের কথা যাই বলুক না কেন বিএনপি নেতারা স্বস্তিতে নাই, বিএনপির কর্মীরা উদ্দীপ্ত হতে পারছে না। বিএনপি সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে যে কঠোর কর্মসূচি নেয়ার প্রত্যাশা করেছিল নেতাকর্মীরা সেই কর্মসূচি দলের শীর্ষ নেতারা দিতে পারছেন না। বরং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আগে রাজপথ দখল করতে হবে, তারপর হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি দেওয়া হবে। এই সমস্ত সভা-সমাবেশের মত কর্মসূচিতে কিছুদিন পর বিএনপি নেতাকর্মীরা হাঁপিয়ে উঠবেন বলে তারা মনে করছেন। ফলে আবার বিএনপি একটা অনিশ্চয়তা এবং হতাশার মধ্যে নিপতিত হবে বলেই দলের অধিকাংশ কর্মীদের ধারণা। বিএনপি কেন বড় ধরনের কর্মসূচি নিতে পারছে না? এটি কি তাদের সাংগঠনিক অদক্ষতা বা দলে কর্মী-সমর্থকের স্বল্পতা, নাকি অন্য কারণ?

বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন যে, এখনো বিএনপির সমর্থকের সংখ্যা কম নেই। বিএনপির পক্ষ থেকে যে বিভিন্ন সমাবেশগুলো ডাকা হয়, তাতে কর্মীদের উপস্থিতি দেখেই বোঝা যায় যে, বিএনপি এখনো দেশের অন্যতম জনপ্রিয় দল। কিন্তু বিএনপির সমস্যা অন্যরকম। বিএনপি মনে করছে যে, তারা সরকারকে যদি চাপে ফেলতে চায় তাহলে তাদের আন্তর্জাতিক সমর্থন লাগবে। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থনটা তারা জরুরি মনে করছে। কিন্তু এই দেশগুলো সরকারের বিভিন্ন ইস্যুতে সমালোচনা করলেও বিএনপিকে বিকল্প ভাবছে না। তবে বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে যে, বিএনপির এখন প্রধান মাথাব্যথা হলো ভারত। বিএনপির প্রায় সব নেতাই মনে করেন, বর্তমান সরকারের সঙ্গে ভারতের অত্যন্ত সুসম্পর্ক রয়েছে। ভারতের কারণে ২০১৪ সালের নির্বাচন বৈধতা পেয়েছিলো, ভারতের কারণে ২০১৮ সালের নির্বাচন নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তেমন কথাবার্তা হয়নি। ভারত বর্তমান সরকারকে প্রায় নিরঙ্কুশ সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে।

আগামী ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের কথা রয়েছে। সেখানে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার বৈঠক হবে। ভারতের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের চেয়ে শেখ হাসিনা অনেক বেশি আলোচিত এবং প্রশংসিত একটি নাম। ভারতের বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতারা এবং প্রায় সব দলই মনে করে যে, ভারত শান্তিতে আছে শেখ হাসিনার জন্য। বিশেষ করে, সেভেন সিস্টারে আগে যে সন্ত্রাসবাদ, বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দৌরাত্ম্য ছিলো সেটি বন্ধ করার ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বাংলাদেশে সকল ধরনের বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতা বন্ধ করেছেন এবং তাদেরকে কোনো ধরনের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেননি। ভারতের একাধিক রাজনীতিবিদ মনে করেন যে, পঁচাত্তরের পর থেকে সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ঠাঁই হয়েছে, সেখানে তারা প্রশিক্ষণ নিয়েছে এবং বাংলাদেশ থেকে তারা ভারতে গিয়ে অনাসৃষ্টি করেছে। সেই অবস্থান থেকে শেখ হাসিনা ভারতকে মুক্তি দিয়েছেন।

তাছাড়া শেখ হাসিনার শাসনামলেই বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নতুন মাত্রা পেয়েছে। ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ গুলো পুনরায় চালু হয়েছে। এই বাস্তবতায় ভারত এখন পর্যন্ত শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প ভাবছে না। আর এ কারণেই বিএনপি মনে করে যে, আন্দোলন যত তীব্র হোক না কেন, শেষ পর্যন্ত যদি ভারত বর্তমান সরকারকে সমর্থন করে সেক্ষেত্রে আন্দোলনের  ফলাফল হবে হতাশাজনক। ভারতের মন ভাঙ্গাতে বিএনপি চেষ্টার ত্রুটি করেনি কিন্তু ভারত যে সমস্ত শর্ত দিয়েছিলো সেই শর্তগুলো বিএনপি মানতে পারেনি। আর সেকারণেই শেষ পর্যন্ত হয়তো বিএনপি ভারতকেই তার প্রধান মাথাব্যথা মনে করছে। ভারত যতদিন আওয়ামী লীগকে সমর্থন করবে ততদিন বিএনপির আন্দোলন বা নির্বাচন কোনোটাতেই কোনো লাভ হবে না বলে বিএনপির অনেক নেতার ধারণা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭