ইনসাইড বাংলাদেশ

সড়কে বাস ভাড়া নিয়ে চলছে নৈরাজ্য


প্রকাশ: 11/08/2022


Thumbnail

ফরিদ আহমেদ। গন্তব্য ফরিদপুর। উদ্দেশ্য এক আত্মীয়ের বিয়ের অনুষ্ঠান। তাই সস্ত্রীক নিয়ে রাজধানীর আরামবাগ থেকে ওয়েলকাম বাসে উঠেছেন। নামবেন গাবতলী বাস স্ট্যান্ড। শাহবাগ অতিক্রম করতেই হঠাৎ উচ্চস্বরে বলে উঠলেন, চোর এবং ডাকাতের পার্থক্য বুঝ? চোর চুরি করে ভয়ে ভয়ে, গোপনে, কারো অজান্তে। কিন্তু ডাকাত ডাকাতি করে প্রকাশ্য দিবালোকে। তার কোনো ভয়ই থাকে না। সে কাউকে তোয়াক্কা করে না। তোমরা হচ্ছো ঠিক তেমনই! এভাবে আমাদের জিম্মি করে রাখছো আমরা কিন্তু করতে পারছি না। কথাগুলো বলছিলেন বাসের কন্ট্যাক্টরকে। নির্ধারিত ভাড়া থেকে অতিরিক্ত ভাড়া প্রসঙ্গে তিনি এই কথা বলেন কন্ট্যাক্টরকে।

ফরিদ আহমেদের মতো অভিজ্ঞতা গণ পরিবহনে চলাচলকারী প্রত্যেক যাত্রীর। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে ইচ্ছে মতো ভাড়া আদায় করা হচ্ছে গণ পরিবহনে। সরকার নির্ধারিত ভাড়া চার্ট বাসে লাগানো হলেও তা মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ যাত্রীদের। এর প্রতিবাদ করলে বাস থেকে নেমে যেতে বলা হচ্ছে তাদের।

বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) বিভিন্ন রুটে সরেজমিন ঘুরে পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে বাস নিয়ে বিভিন্ন নৈরাজ্যের চিত্র পাওয়া গেছে।

দেখা গেছে, ভাড়া নিয়ে আগের মতোই স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। প্রতিটি বাসে ভাড়ার তালিকা টাঙানোর থাকলেও তার মানা হয় না। চলন্ত বাসের দরজা বন্ধ থাকার নিয়মও কেউ মানে না। যাত্রী পেলে মাঝপথেও বাস দাঁড়াতে দ্বিধা করে না। আবার যেখানে সেখানে যাত্রী নামানো হয়। সব মিলে গণপরিবহনে নৈরাজ্য চরম আকার ধারণ করেছে।

বাড়তি ভাড়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, আগে থেকেই আমরা অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে আসছি। এখন আবার ভাড়া যে মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, জনগণের বিষয়টি দেখা হয়নি। শুধু মালিকদের সুবিধাটাই দেখা হয়েছে। ব্যয় বাড়ে কিন্তু কর্মস্থলে বেতন বাড়ে না।

কথা হয় মতিঝিল-নবীনগর রুটের ওয়েলকাম বাসের যাত্রী এনআরবিসি ব্যাংকের ক্যাশ অফিসার মো: মুক্তারুল হকের সঙ্গে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার ব্যাপারে তিনি বলেন, সরকারের সঙ্গে বাস মালিক সমিতির সম্পর্ক আতাতীয়। আপনি কোথায় অভিযোগ করবেন? তিনি বলেন, মতিঝিল থেকে বাসে উঠলেও ফার্মগেট পর্যন্ত ১৫ টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আবার যারা গুলিস্তান বা পল্টন মোড়, প্রেসক্লাব থেকে উঠছেন তাদের কাছ থেকেও একই ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। অথচ সরকার কিমি হিসেবে ভাড়া বাড়িয়েছে কিন্তু মালিক সমিতি ভাড়া আদায় করছে ওয়েবিল পদ্ধতিতে।

এব্যাপারে ওই বাসের কন্ট্যাক্টরের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোম্পানীর ভাড়া ১৭ টাকা কিন্তু কেউ ১৭ টাকা দেয় না। ১৫ টাকা ভাড়া দেয়। এ জন্য আমরা সেটা সমন্বয় করি।

মানা হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে হাফ ভাড়ার নিয়মও। ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী সানজিদা খানম। তিনি কল্যাণপুরে এম এম লাভলী পরিবহনে উঠেন। যাবেন মুগদা। নিয়মিত ভাড়া ৪০ টাকা। সে হিসেবে হায় ভাড়া হয় ২০ টাকা। কিন্তু সে কন্ট্যাক্টরকে ২০ টাকা ভাড়া দিলে কন্ট্যাক্টর সে ভাড়া নিতে অস্বীকৃত জানান। কারণ জানতে চাইলে বলেন,  স্টুডেন্ট ভাড়া ৩০ টাকা। কেন এত ভাড়া জানতে চাইলেও তিনি বাস থেকে নেমে যেতে বলেন। দেখিয়ে দেন বিআরটিসি বাস।

সড়কে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্যের কথা বলতেই যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, সরকার যখন ভাড়া নির্ধারণ করেন তখন ওই বৈঠকে শুধুমাত্র প্রশাসন এবং মালিক সমিতির লোক থাকেন। যাত্রী সাধারণ বা তাদের কোনো প্রতিনিধি থাকেন না। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই সমিতির চাওয়া প্রাধান্য পায়। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ সেখানে উপেক্ষিত হয়।

সরকারের নির্ধারিত ভাড়া চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার ঘটনা নিয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের ঢাকা বিভাগীয় (বিআরটিএ) কার্যালয়ের উপপরিচালক স্বদেশ কুমার দাসের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বাংলা ইনসাইডারকে বলেন, বাসে নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ করতে আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছি। এছাড়াও আমাদের কাছে যে সমস্ত অভিযোগ আসছে আমরা সেগুলোর নোট রাখছি। এ সমস্ত অভিযোগের ব্যাপারে আমরা  কঠোরভাবে মনিটরিং করবো।

এর আগে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে শনিবার (৬ আগস্ট) বাস ভাড়া বাড়ায় বিআরটিএ।

এতে দেখা যায়, দূরপাল্লার বাসের ভাড়া আগে ছিল প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৮০ পয়সা, যা বাড়িয়ে এখন করা হলো ২ টাকা ২০ পয়সা।

এছাড়া মহানগর পর্যায়ে আগে প্রতি কিলোমিটারে বড় বাসের ভাড়া ছিল ২ টাকা ১৫ পয়সা, এখন তা ২ টাকা ৫০ পয়সা হয়েছে। মিনি বাসের আগে ছিল ২ টাকা ৫ পয়সা যা বাড়িয়ে করা হয়েছে ২ টাকা ৪০ পয়সা।

এছাড়া সর্বনিম্ন ভাড়া বাসে ১০ টাকা, মিনিবাসে ৮ টাকা হয়েছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭