কালার ইনসাইড

সেন্সর বোর্ড কার জন্য?


প্রকাশ: 11/08/2022


Thumbnail

নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত ‌‘শনিবার বিকেল’ সিনেমাটি তিন বছর ধরে পড়ে রয়েছে আপিল বোর্ডে। সিনেমাটি কেন ছাড়পত্র পাবে না, তা নিয়ে এখনও কোনো বক্তব্য দেয়নি কেবিনেট সেক্রেটারির নেতৃত্বাধীন চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের আপিল বিভাগ। দীর্ঘদিনের খরা কাটিয়ে চলচ্চিত্র শিল্প যখন ঘুরে দাঁড়ানোর পথে ঠিক সে সময় দাবি উঠেছে সিনেমাটি মুক্তি দেয়ার। 

সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন ফারুকী। এরপর এই নির্মাতার স্ত্রী এবং সিনেমাটির অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশাও বিষয়টি নিয়ে স্ট্যাটাস দেন। এরপরই সিনেমাটি মুক্তির দাবিতে সামাজিকমাধ্যমে ঝড় তুলেছেন নির্মাতা, অভিনয়শিল্পী থেকে শুরু করে আরও অনেকে। এ ব্যাপারে সেন্সর বোর্ডের দিকেও অভিযোগের তীর ছুঁড়েছেন কেউ কেউ। 

শুধু ফারুকীর ‌‘শনিবার বিকেল’ নয় দীর্ঘ নয় বছর ধরে আটকে আছে ‘রানা প্লাজা’ নামের আরও একটি ছবি। ‘দেশের ভাবমূর্তি ক্ষতি হবে’ এমন যুক্তিতে সেন্সরবোর্ডের সিদ্ধান্তে অপ্রদর্শক যোগ্য ঘোষণা করা হয় ‘রানা প্লাজা’ এবং ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমা দুটি। পরবর্তীতে সেন্সরবোর্ডকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ হন রানা প্লাজার প্রযোজক সর্বশেষ নির্বাহী আদেশে ‘সাময়িকভাবে’ অপ্রদর্শনযোগ্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। অপরদিকে সেন্সরের বিরুদ্ধে আপিল করায় ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমার ভাগ্য ঝুলে আছে কেবিনেট সচিবের হাতে। 

বিষয়টি নিয়ে সেন্সরবোর্ড সচিব বলেন, এ মুহূর্তে দুটো সিনেমার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা সেন্সরবোর্ডের হাতে নেই। নির্বাহী আদেশে ‘রানা প্লাজা’ প্রদর্শনের ব্যাপার প্রজ্ঞাপন জারি আছে। সিনেমার প্রযোজক যদি উদ্যোগী হয়ে রাষ্ট্রকে বোঝাতে সক্ষম হন তাহলে নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিতে পারেন। যেহেতু নির্বাহী আদেশে সিনেমাটির ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল তাই এ নিয়ে সেন্সরবোর্ডে বলার এখতিয়ার নেই। একইভাবে ‘শনিবার বিকেল’ সিনেমার প্রযোজক সংক্ষুব্ধ হয়ে আপিল করলে এটা এখন কেবিনেট সচিবের কাছে রয়েছে। আপিল বোর্ডের অন্যতম সদস্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব। প্রদর্শনী করার অনুমতি দিবেন কি না এ ব্যাপারে আপিল বোর্ড সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। 

দুই সিনেমার মুক্তির ব্যাপারে আলোচনা নিয়ে সেন্সরবোর্ডের বর্তমান ভূমিকা প্রশ্নে সচিব বলেন,  বোর্ড পুরো বিষয়টি জানিয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় বরাবর একটি নোট দেবে আপাতত এতটুকুই।

এ ব্যাপারে তৎকালীন সেন্সরবোর্ড সদস্য ও মধুমিতা সিনেমা হলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ওই সময় আমাদের কাছে মনে হয়েছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষণ্ন হবে এমন মেসেজ রয়েছে তাই সেন্সরবোর্ড সম্মিলিত সিদ্ধান্তে প্রদর্শনের অনুমতি দেয়নি। এখন যদি রাষ্ট্র অনুমতি দেয় তাহলে কেবল ‘শনিবার বিকেল’ কেন ‘রানা প্লাজা’ও প্রদর্শনীর দাবি করতে পারে এর প্রযোজক। 

এদিকে অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন এখন এক ভিন্ন প্রসঙ্গে। দেশের অন্যতম ওটিটি প্লাটফর্ম চরকিতে নিয়মিত মুক্তি পাচ্ছে নানা কন্টেন্ট। প্রথম আলো মালিকানাধীন এই ওটিটি প্লাটফর্মটির মাধ্যমে যেন সমাজে এক ধরণের অস্থিরতা তৈরি করা, অশ্লীলতা, অশ্রাব্য গালিগালাজ শেখানো, মাদকে উৎসাহিত করা এবং মানুষের মধ্যে অপরাধী হয়ে উঠার প্রবণতাকেই উস্কে দিচ্ছে। চরকি’র বেশিরভাগ কন্টেন্ট বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মাদক, অশ্রাব্য গালাগালি, অশ্লীলতা, খুন, অপরাধের অন্ধকার জগত ছাড়া কিছুই দেখানো হয় না। এই প্লাটফর্মটির অনুমতি কে বা কারা দিয়েছে এবং এর প্রচারিত কন্টেন্টগুলো কি অনুমোদিত? এটি বর্তমান সময়ে একটি গুরুতর প্রশ্ন হয়ে উঠেছে। 

চরকি’র ১৮+ বলে প্রচারিত কন্টেন্টগুলো তরুণ সমাজের কাছে খুবই জনপ্রিয়। আর এর অধিকাংশ দর্শকের বয়স ১৮ বছরের নিচে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী। কারণ, সহজেই চরকি’র সাবক্রিপশন করে যে কেউ দেখতে পারে এই সমস্ত কন্টেন্ট। আর এই কন্টেন্টগুলো বিশেষ করে দেশের তরুণ সমাজের জন্য ভয়ঙ্কর এবং সমাজ নষ্টের একটি মিশন হিসেবে মনে করছে অনেক বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন যে, সাম্প্রতিক সময়ে সমাজে অপরাধ, মাদক, কিশোর গ্যাং ইত্যাদি বেড়ে যাওয়ার মূল কারণ এই কন্টেন্টগুলো।

মূলত একটি চলচ্চিত্রকে মুক্তি দিতে হলে সেই চলচ্চিত্রটি সেন্সর বোর্ডের কাছ থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। কিন্তু ওটিটি প্লাটফর্মে ছবি মুক্তির ক্ষেত্রে নেই কোনো অনুমতি কিংবা নিয়মকানুন। ১৮+ কোনো কন্টেন্ট প্রচারের আগে কর্তৃপক্ষের অনুমতির প্রয়োজন হয়, কিন্তু চরকিতে প্রচারিত এসব কন্টেন্টের কোনো অনুমোদন নেই। আর এই বিষয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ও এক প্রকার নীরবতা পালন করছে। 

চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন একই দেশে দুই আইন চলছে। যেখানে নিয়মিত চরকিতে  মাদক, অশ্রাব্য গালাগালি, অশ্লীলতা, খুন, অপরাধের অন্ধকার জগতের কন্টেন্ট প্রকাশ করা হচ্ছে সেই জায়গায় কেন ‘শনিবার বিকেল’র মত ছবি আটকে দেয়া হচ্ছে? 
 

উল্লেখ্য,গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে ঘটা ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সিনেমাটি বানিয়েছেন ফারুকী। সেন্সর সার্টিফিকেট না পেলেও মিউনিখ, মস্কো, সিডনি, বুসান, প্যারিস সহ বিভিন্ন ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ‘শনিবার বিকেল’ প্রদর্শিত হয়েছে। 

বাংলাদেশ, ভারত ও জার্মানির যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হয়েছে ‘শনিবার বিকেল’। প্রযোজনায় আরও আছে জাজ মাল্টিমিডিয়া, ছবিয়াল ও ভারতের শ্যাম সুন্দর দে।এতে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান, নুসরাত ইমরোজ তিশা, মামুনুর রশীদ, ইরেশ যাকের, ইন্তেখাব দিনার, নাদের চৌধুরী, ভারতের পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, ফিলিস্তিনের ইয়াদ হুরানি প্রমুখ। 

এদিকে বাংলাদেশে সাভারের রানা প্লাজা ভবন ধ্বসের ঘটনা ও আলোচিত পোশাক শ্রমিক রেশমা চরিত্রটিকে নিয়ে তৈরি হয় ‘রানা প্লাজা’। পরিচালক নজরুল ইসলাম খানের কাহিনী ও চিত্রনাট্য নিয়ে নির্মিত সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন- আবুল হায়াত, প্রয়াত অভিনেতা সাদেক বাচ্চু, কাবিলা, রেহানা জলি, শিরিন আলম, শিউলী পরীমনি প্রমুখ। সিনেমার সংলাপ লিখেছেন মুজতবা সউদ।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭