ইনসাইড থট

শ্রীলংকা নয় সবুজ বাংলা চাই


প্রকাশ: 12/08/2022


Thumbnail

আমাদের নাকি “সর্বনাশ হয়ে গেছে”, আমরা উজাড় হয়ে যাওয়া বন বিদেশী একেশিয়া দিয়ে ভরে ফেলেছি। আমরা আমাদের সব প্রজাতির ধান চাষ বন্ধ করে কেবল আমদানি করা বীজ দিয়ে উৎপাদিত ধান ২৮ কে মেশিনে কেটে মিনিকেট, নাজিরশাইল বলে চালাচ্ছি। আমাদের মেয়েরা এখন আগের মতো আব্রু রক্ষা করতে জানে না। তারা এখন এমন আধুনিক হয়েছে যে ধর্মপ্রাণ মানুষ কষ্টে আছে। আজ দিল্লির মতো বাসে ধর্ষণ হচ্ছে। আমাদের সর্বনাশের তালিকা দিন দিন উন্নয়নের তালিকার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে দীর্ঘ হচ্ছে। আমাদের নাকি ৬৫ লক্ষ কোটি টাকা পাচার হয়ে গেছে। আর যারা পাচার করে তারাই ক্ষমতায় এবং বিমানবন্দরে ভিআই এবং যারা কষ্ট করে বিদেশ থেকে টাকা রোজগার করে আনে তারা নিপীড়িত, নিষ্পেষিত। এই অধর্ম আল্লাহ সহ্য করবেন কি? এখন আমাদের অনেকেই হজ থেকে ফিরে আবার পাপের পথে হাটি। আমাদের নাকি রাতের আঁধারে ভোট হয়? আমাদের সরকার দুর্নীতিকে নিয়ন্ত্রন করতে ব্যর্থ?  

অভিযোগের ডালা অনেক ভারী। সরকার তাই হিমশিম খাচ্ছে ডলার সংকট, জ্বালানি সংকট, কুইক রেন্টাল, আর দ্রব্যমূল্য নিয়ে। এখন মুখে মুখে আলোচনা বাংলাদেশ কি শ্রীলংকা হচ্ছে? শ্রীলংকার সরকার যেমন দুরবস্থা থেকে উদ্ধার পেতে বিশ্বব্যাংক আইএমএফ লোন নিতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছে তেমনি অবস্থা বাংলাদেশে বিরাজ করছে? পথে ঘাটে বাজারে বন্দরে এই কথাই মুখে মুখে।  

আরব বসন্ত ঘটার পর একদল মানুষ খুবই আশা করেছিল বাংলাদেশে তারা আরব বসন্তের মতো গণঅভ্যুর্থান ঘটাবে। আল্লাহর অশেষ রহমত সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। বরং, বাংলার জনগণ সেদিন গণজাগরণ ঘটিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন করেছিল। এখন তারা শ্রীলংকার মতো পতন দেখছে! আল্লাহ এবার তাদের স্বপ্ন পূরণ করবেন কি? 

আমরা যারা শ্রীলংকার মতো সরকার পরিবর্তনে কথা ভাবছি সেটা সম্ভব হবে না। সরকার প্রণোদনা দিয়ে পাচার হয়ে যাওয়া টাকা ফিরিয়ে আনবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার জ্বালানির ভর্তুকি সহ সবধরণের ভর্তুকি বন্ধ করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকার বৈদেশিক মুদ্রার সংকট আগামী মাসের মধ্যেই কাটিয়ে উঠবে। তেমনি জ্বালানি সংকট মেটাতে সক্ষম হবে এবং বিদ্যুতের লোডশেডিং কমিয়ে আবার শতভাগ বিদ্যুত দিতে সক্ষম হবে।  

আমাদের যে ভুলগুলো হয়েছে তা যাতে আর না হয় সেজন্য - (১) আমাদের আউশ-আমনসহ সব ধরণের দেশি পণ্য উৎপাদন করতে হবে যাতে আমরা বিদেশী আমদানি করা বীজের উপর নির্ভরশীল না হয়ে পড়ি। (২) আমাদেরকে আমাদের মাটির উপযোগী বৃক্ষ রোপন করতে হবে। (৩) আমাদের ইংলিশ মিডিয়াম রোগ নিরাময় করে কায় মনে বাঙালি হতে হবে। (৪) আমাদের প্রবাসী শ্রমিক আর কৃষকদেরকে ভিআইপি মর্যাদা দিতে হবে। (৫) আমাদেরকে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাপক পরিকল্পনা নিতে হবে। (৬) বিদেশী ঋণ নিয়ে পাতালরেল না বানিয়ে কিভাবে সুষম উন্নয়ন করা যায় সে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাতে করে নগরে মাইগ্রেশন কমবে এবং সারাদেশটা উন্নয়নের ছোঁয়া পাবে। (৭) আমাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নয়নে বেশি করে বাজেট দিতে হবে। পাশাপাশি মানবাধিকার পরিস্থিতির প্রতি নজর বাড়াতে হবে। এভাবে যদি আমরা সতর্ক হয়ে চলি তবে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের সেরা দেশ।

আমরা নতুন পন্থায় আমাদের মা বোনদেরকে এক্সপ্লয়েট করছি। তাদেরকে গার্মেন্টস এ পাঠিয়ে চায়ের দোকানে বসে টিভি দেখছি। কারণ এখন মেশিনে ধান চাষ হয়, আমাদের চা কফি এখন মেশিনে হয়। এভাবে আমাদের মেশিন নির্ভর হলে চলবে না।  আমাদের মাঝে একধরনের নিষ্ঠুরতা জন্মেছে।সেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।আর সেজন্য শিক্ষায় মনোযোগ অতীব জরুরি।

আমার একটি সংবাদ কিছুদিন আগে পড়েছি। আমাদের দেশের একজন মানুষ অন্য একটি দেশে সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি ! অনেকেই মনে করে সেটা সম্ভব হয়েছে অর্থ পাচার করে। কেন একজন মানুষ দেশে থেকে অর্থ পাচার করে, কিংবা বিদেশ চলে যায় তা গভীরভাবে অনুসন্ধান করতে হবে। দেশে সকলের জন্য বাসোপযোগী করতে হবে। এখানে পথে পথে বিশৃঙ্খলা। এখানে পদে পদে ঘুষ দুর্নীতি আর ফাঁকিবাজি। দেশকে শ্রীলংকা বানিয়ে কারোই ভালো হবে না। আসুন দেশপ্রেমিকদেরকে সন্মান করি এবং দেশের শত্রুদেরকে প্রতিহত করি। আমরা আমেরিকা কিংবা সুইৎজারল্যান্ড চাইনা - আমার আমাদের নদীমাতৃক সবুজ বাংলাদেশ চাই। 

ইংরেজি নয় আমাদের সকল শিশুর হাতে সবুজসাথী বইটি চাই। নির্মল বাসাতে নিঃস্বাস ফেলতে চাই - আমাদের নদী কাঁদছে - নদীর কান্না থামাতে সেখানে আমাদের বজ্য ফেলা বন্ধ করতে কঠোর নজরদারী চাই। আমাদের মানবিক গুণাবলীর ঘাটতি আছে সেগুলো অর্জনের শিক্ষা চাই। আমরা মানুষের মতো মানুষ হতে চাই। আমাদের নেতৃত্বের সংকট আছে- সেজন্য সৎ মানুষদেরকে খুঁজে বের করতে হবে। 

কেবল নির্বাচন ব্যবস্থায় কাটা ছেড়া করে কোনো লাভ নেই। আমাদের অবক্ষয় ঘটেছে অনেক অনেক।সেখান থেকে ফিরতে হবে। সরকারকে কঠোর হতে হবে।দুর্নীতিবাজদেরকে কোনোভাবেই ক্ষমা করা উচিত হবে না।  দেশ থেকে অর্থপাচার বন্ধ করতে হবে। যারা অর্থ ফিরিয়ে আনবে তাদের পুরস্কৃত করতে হবে। দেশে ও দলে শুদ্ধি অভিযান এখন সময়ে দাবি।সরকার নাকি ভয়ের সংস্কৃতি চালু রেখেছে- সেই অভিযোগ খণ্ডন করতে সবধরনের স্বাধীনতাকে নিশ্চিত করতে হবে। হরতাল ভাঙচুর নয় আন্দোলন হোক শান্তির ও প্রগতির জন্য।            



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭