ইনসাইড গ্রাউন্ড

সাকিবের ওপর আস্থা রাখা ঠিক হবে কি?


প্রকাশ: 13/08/2022


Thumbnail

বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক অবিচ্ছেদ্য নাম সাকিব আল হাসান। বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার খ্যাত এই তারকা নিজের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বজোড়া খ্যাতি লাভ করেছেন। বাইশ গজে উইলোবাজি কিংবা বাঁহাতি স্পিনে বিপক্ষ দলের ব্যাটারকে কুপোকাত করতে সাকিবের জুড়ি মেলা ভার। তবে, বিশ্বজুড়ে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখা সাকিব উজ্জ্বল মাঠের বাইরেও। খেলার মাঠের সাকিবকে ছাড়িয়ে তার ব্যক্তিজীবন পর্যন্ত মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। সাকিবও যেন পছন্দ করেন এসব। তাই বুঝি মাঝে মাঝে বিতর্ক উসকে দেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। সম্প্রতি নতুন এক বিবাদে জড়িয়েছিলেন এই তারকা। বেটিং এর সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠান বেটউইনার নিউজের পন্যদূত হয়ে চুক্তি করেছিলেন তিনি। কিন্তু জানাননি বোর্ডকে। এতেই যেন সাকিব হয়ে পড়েছিলেন কোণঠাসা। বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন তো বলেই দিয়েছিলেন, বেটউইনারের সাথে চুক্তি বাতিল না করলে ক্রিকেট থেকেই নিষিদ্ধ করা হবে সাকিবকে। অবশেষে তিনি চুক্তি বাতিল করতে রাজি হওয়ায় মন গলে বিসিবির। তাই তো শেষমেশ তাকেই অধিনায়ক করে এশিয়া কাপের দল ঘোষণা করেছে নির্বাচকরা। শনিবার বিসিবি সভাপতির বাসায় বৈঠকের পর সাংবাদিকদের সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

শুধু এশিয়া কাপ নয় বরং আসন্ন ত্রিদেশীয় সিরিজ ও অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও সাকিবকে অধিনায়ক করেছে বিসিবি। সাকিবও নাকি নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে দেশের ক্রিকেটে মনোনিবেশ করবেন বলে কথা দিয়েছেন বিসিবি সভাপতি পাপনকে।

প্রশ্ন হচ্ছে, এই সাকিবকে নিয়ে আস্থা রাখা কি ঠিক হচ্ছে বিসিবির? কেননা, এই তো নতুন নয়। সময় অসময়ে নানা বিতর্কে জড়িত ছিলেন তিনি। তাকে এখন ক্রিকেটার কম বিজনেসম্যান বেশি বলা হয়। ব্যবসায় হাতেখড়ি ২০১৫ সালে ধানমন্ডিতে সাকিব'স ডাইন নামের রেস্টুরেন্ট দিয়ে। যদিও গণমাধ্যমের মতে ২০১০ সাল থেকেই সাকিব ব্যবসায় লগ্নি শুরু করেন। এরপর একে একে তিনি বাড়িয়েছেন ব্যবসার পরিধি। শেয়ারবাজার, বিদ্যুৎকেন্দ্র, প্রসাধনী, ট্রাভেল এজেন্সি, হোটেল, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, কাঁকড়া ও কুঁচের খামারসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ রয়েছে তার। এমনকি দেশের বাইরে যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশে বড় অংকের বিনিয়োগ করেছেন সাকিব আল হাসান। এর বাহিরে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও পণ্যের দূতিয়ালী করেন সাকিব।

লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ব্যবসায় আসার পরেই সাকিব ধীরে ধীরে জাতীয় দলে অনিয়মিত হতে থাকে। ঘরের মাঠে অ্যাভেইলেবল হলেও বিদেশ সফরে সাকিবকে পাওয়া দুষ্কর হয়ে যায়। ২০১৭ সালের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে প্রথমবার সাকিব জাতীয় দল থেকে ছুটি নেন। এর পরে ইনজুরি, নিষেধাজ্ঞা ও ব্যক্তিগত ছুটিতে সাকিব বারবার এড়িয়েছেন জাতীয় দলের টেস্ট সিরিজ। ২০১৭ সালের পর থেকে মাত্র ৩০ শতাংশ টেস্টে সাকিবকে পেয়েছে জাতীয় দল। পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা যায় ২০১৭ সালের পর থেকে সাকিব জাতীয় দলের মোট ১২টি সিরিজ মিস করেছেন। যার বেশকিছু অবশ্য ইনজুরির কারণে। বাকিটা ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে নেওয়া ছুটির কারণে। এ সময়ে সাকিবকে দেখা গেছে বিশ্ব জুড়ে ফ্রাঞ্চাইজি লিগে খেলতে। ক্যারিয়ারের এ পর্যায়ে সাকিবকে ক্রিকেট খেলায় কম সময় দিয়ে বরং ব্যবসা বাড়াতেই বেশি মনোযোগী মনে হচ্ছে।

আইসিসির অলরাউন্ড র‍্যাংকিংয়ে দীর্ঘ সময় শীর্ষে থাকা বাংলাদেশের একমাত্র ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে সাপোর্ট কিংবা ব্রেক থ্রু, বাংলাদেশের ভরসার নাম সাকিব। শুধুই কি বল, ব্যাটে সাপোর্ট? মাঠে নাম্বার ওয়ান অলরাউন্ডারের বিচক্ষণতাও চোখে পড়ে ম্যাচ চলাকালীন। ১৫ বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত ওয়ানডে খেলেছেন ২২১ টা। একদিনের ম্যাচে নামের পাশে রান ৬,৭৫৫। সাদা পোশাকে ৬৩ ম্যাচে রান ৪২৫১, আর শর্টার ফরম্যাটে রান দুই হাজারের বেশি। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে সাকিব আল হাসানের রান ১৩ হাজার ৮শ’ ০৯। টেস্টে তার উইকেট সংখ্যা ২২৫, যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। ওয়ানডে ক্রিকেটে ২৮৫। যা বাংলাদেশে দ্বিতীয়। আর, টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে সাকিবের উইকেট সংখ্যা ১২১।

এ সবকিছু শুধু এক দিকেই নির্দেশ করে যে, ব্যবসায়ী বলেন আর খেলোয়াড় বলেন, মাঠের বাইরে ফর্ম সময়ে-অসময়ে হারালেও সেইখানেও দারুণ দাপুটে অবস্থান তার রয়েছে। দলে তার মত যেমন জায়গা কেউ করতে পারেনি, বিসিবিও তার বিকল্প এতদিনে তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে। এখন দেখার বিষয় বিসিবির সাকিবকে অধিনায়ক করা কতটা সুফল এনে দেয়। অন্যদিকে সাকিব নিজেও বিতর্ক ছাড়া অধিনায়কত্ব দিয়ে দলের পারফরম্যান্সে পরিবর্তন আনতে পারেন কিনা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭