ইনসাইড আর্টিকেল

ঘুরে আসুন মালে আইল্যান্ড থেকে


প্রকাশ: 14/08/2022


Thumbnail

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ মালদ্বীপ। বিধাতা যেনো প্রকৃতির সকল সৌন্দর্য ঢেলে দিয়েছে দেশটিতে। দেখে মনে হবে এ যেনো কোনো বিখ্যাত শিল্পীর আঁকা বিশাল ক্যানভাস। আর এই দেশটির মধ্যে পর্যটনের মূল কেন্দ্রবিন্দু মালদ্বীপের মালে আইল্যান্ড, যা দেশটির রাজধানী। মালদ্বীপে গেলে এই দ্বীপটিতে যাবে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। বিশেষ করে কাপলদের হানিমুনে যাওয়ার জন্য উপযুক্ত যায়গা মালদ্বীপের মালে আইল্যান্ড। যা প্রায় ১২০০ টি ছোট ছোট দ্বীপের মধ্যে একটি। দ্বীপটি প্রায় ১.৫ কিলোমিটার লম্বা ও ১ কিলোমিটার চওড়া এই দ্বীপ।

মালে আইল্যান্ডের চারপাশে সারি সারি নারকেল ও সুপারি গাছগুলো যেনো সবুজের মাঝে মাথা উচু করে দাঁড়িয়ে আছে। দ্বীপজুড়ে রয়েছে এক নগরায়নের ছোঁয়া। তাই হয়তো এখানে প্রতিনিয়তই পর্যটকদের সমাগম থাকে বিপুল পরিমাণে। এই দ্বীপে আসলে ভ্রমণের ক্লান্ত সময় নিমিশিয়ে মিলিয়ে যাবে। নীল সাগর থেকে বয়ে আসা স্নিগ্ধ হাওয়া আপনার মনকে করে তুলবে প্রানবন্ত এবং সতেজ। 

আপনি যদি মালে আইল্যান্ড ছাড়াও অন্য কোথাও ঘুরতে যেতে চান তাহলে মালে আইল্যান্ডের পাশাপাশি মালে শহরের মধ্যে আরও কিছু দর্শনীয় স্থানে ঘুরতে পারবেন। যেমন আর্টিফিশিয়াল বীচ , ওল্ড ফ্রাইডে মস্কো ,ন্যাশনাল মিউজিয়াম , সুলতান পার্ক, ন্যাশনাল আর্ট গ্যালারি, চিনা মালদ্বীপ ফ্রেন্ডশিপ ব্রিজ, ফিস মার্কেট ও গ্র্যান্ড ফ্রাইডে মস্কো । মালে থেকে কাছাকাছি অবস্থিত বিভিন্ন রিসোর্ট আইল্যান্ড থেকে ঘুরে আসতে পারেন সেই সাথে সেখানে গিয়ে থাকতেও পারেন। তবে রিসোর্ট এর আইল্যান্ড গুলোতে খরচ অনেক বেশি। ডে ট্রিপ এর অপশন থাকলে প্যাকেজ আকারে ঘুরে আসতে পারেন ।


>> যেভাবে দেশ থেকে মালদ্বীপ যাবেন:

বাংলাদেশ থেকে মালদ্বীপ যাওয়ার জন্য ঢাকা থেকে ২-৩ টি ফ্লাইট আছে। তবে বাংলাদেশিরা বেশিরভাগ সময় যাতায়াত করে মালদ্বীপ এয়ারওয়ে বা শ্রীলংকা এয়ারলাইন্সের মাধ্যমে। মালদ্বীপে যাওয়ার এয়ারলাইন্স গুলো ঢাকা থেকে সরাসরি মালদীপ বিবানবন্দর গিয়ে পৌঁছায়। এছাড়াও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স সরাসরি মালে গিয়ে পৌঁছায়। মালে পৌছানোর পর ইমিগ্রেশন শেষ করে এয়ারপোর্ট থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরত্বে মালের ট্যাক্সি করে পৌঁছাতে পারবেন আপনার পছন্দের গন্তব্যে। এছারাও আপনি চাইলে ফেরি বা স্পিডবোট করে যেতে পারবেন মালে আইল্যান্ডে। 

তবে আপনি যদি আপনার ভ্রমণযাত্রা আরও দীর্ঘ করতে চান তাহলে বাংলাদেশ থেকে প্রথমে শ্রীলংকার বন্দরনায়েকে আন্তর্জাতিক এয়ারপোর্ট থেকে ট্রানজিট শেষ করে আবার অন্য ফ্লাইটে করে আপনি মালদ্বীপের মালে ইন্টারন্যাশনাল বিমান বন্দরে যেতে পারবেন। এক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা থেকে বিমানে করে মালদ্বীপ যেতে আপনার ঘন্টাখানেক সময় লাগবে এবং খরচও কম পড়বে। পাশাপাশি একই সঙ্গে দুই দেশ ভ্রমণ করা হয়ে যাবে।

>> মালদ্বীপে থাকার ব্যবস্থা: 

মালদ্বীপ শহরে থাকার জন্য বেশ কিছু রিসোর্ট রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে সামান গার্ডেন, সামারসেট হোটেল, সেন্টার রাস ফুসি রিসোর্ট। এই রিসোর্টগুলো ছারাও আরও বেশকিছু রিসোর্ট রয়েছে। তবে দেশটিতে যদি আপনি নতুন ভ্রমণে গিয়ে থাকেন তাহলে সেখানে কোথায় উঠবেন সেই জায়গা সম্পর্কে ভালভাবে জেনে নিবেন। এছাড়াও কুরুম্বা ম্লদ্বীপ, হলিডে আইল্যন্ড রিসোর্ট, প্যারাডাইস আইল্যান্ড রিসোর্ট , সান এন্ড স্পা, বন্দোস আইল্যান্ড উঠতে পারেন। 

মালদ্বীপে থাকার জন্য দুধরনের দীপ রয়েছে। ব্যক্তিগত এবং সার্বজনীন। ব্যক্তিগত দ্বীপগুলোর সাথে যে রিসোর্টগুলো থাকে সেগুলোর ভাড়া তুলমূলকভাবে একটু বেশিই থাকে। যেমন ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকাও থাকে। এই রিসোর্টগুলো বেশিরভাগ সময় সেলিব্রেটিরাই নিয়ে থাকেন। তারা একটু নিরিবিলি এবং জনসমাগম থেকে আড়ালে থাকতে চায়। তাই তাদের জন্য ব্যক্তিগত দ্বীপের রিসোর্টগুলো ভালো। এছাড়াও সাধারণ ভ্রমণকারীদের জন্য রয়েছে সার্বজনীন দ্বীপ। যেখানে প্রতি রাতের জন্য ভাড়া ৩০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকা। তবে ভারা কিছুওতা বাড়তে বা কমতে পারে। 

সেগুলি খুবই সাজানো গোছানো, পরিপাটি এবং আধুনিক। সেখানে ব্রেকফাস্ট, গরম জল সহ অন্যান্য সুবিধে মেলে। আর এই সার্বজনীন দ্বীপগুলির মধ্যে মাফুশি, ধারাভান্ধু, গুরাইধু সেরা। আবার গেস্ট হাউজ এবং ভিলার খরচও আলাদা আলাদা। ভিলার ভাড়া বেশি। গেস্ট হাউজের ভাড়া তুলনামূলক অনেক কম।

>> মালদ্বীপের খাবার ব্যবস্থা:

এখানের খাবারের তালিকায় আমিষ জাতীয় খাবারই বেশি প্রাধান্য পায়। টুনা মাছ, নারিকেল পিয়াজ ও লেবু দিয়ে তৈরি এক ধরনের বিশেষ খাবার যা রশি দিয়ে খেতে দেয়া হয় এবং খুবই মজাদার। এছাড়াও নানা ধরনের ঠান্ডা পানীয় খুবই মজাদার। মালদ্বীপে গেলে এ খাবারগুলো সবাই একবার না একবার ট্রাই করে। এছারাও যদি কেউ বাঙালিয়ান খাবার খেতে চান তার জন্য রয়েছে মালে শহরের 'ঢাকা ফুড' নামে একটি রেস্টুরেন্ট। যেখানে গেলে আপনি বাঞালিয়ান খাবার খেতে পারবেন। তবে আপনি যদি একটু ভিন্ন দেশে গিয়ে ভিন্ন রকম অভিজ্ঞতা নিতে চান তাহলে  আন্ডারওয়াটার রেস্টুরেন্টগুলোতে খেতে পারেন। দারুন এক অভিজ্ঞা পাবেন। এছারাও আপনি যদি সাধারণ মানের খাবার খেয়ে থাকেন তবে প্রতিবেলা খাবার খ্রচ পড়বে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। 

>> মাদ্বীপে যাওয়ার খরচ:

মালদ্বীপের থাকা-খাওয়ার খরচ একটু বেশি । বিমানে ঢাকা থেকে মালদ্বীপের যাওয়া-আসা ৪৩০০০-৬০০০০ টাকা মত পড়বে। তবে কত আগের টিকিট কাটবেন তার ওপরে বিমান ভাড়া নির্ভর করে । শহরের মধ্যে থাকলে এক রাতে খরচ হবে ৩০০০-৭০০০ টাকা। আর যদি আইল্যান্ড এর কাছাকাছি কোন রিসোর্টে রাতে থাকতে চান তাহলে জনপ্রতি খরচ হবে ১৬০০০-২৮০০০ টাকা। । 

আর প্যাকেজের মাধ্যমে স্পিডবোর্ড ভাড়া করে ঘুরতে চাইলে খরচ পড়বে ১৫০০০-১৭০০০টাকা। তবে খরচ কমাতে চাইলে যত আগে সম্ভব বিমানের টিকিট কেটে রাখবেন এবং থাকার জন্য লোকাল রিসোর্টে বা গেস্টহাউসে থাকার চেষ্টা করবেন সেই সাথে যাতায়াতের জন্য সরকারি ফেরি ব্যবহার করবেন।


>> মালদ্বীপে ভরমণের ক্ষত্রে অবশ্যই কিছু বিষয় খেয়াল রাখবে আর তার মধ্যে হলো-

মালদ্বীপ যাওয়ার উপযুক্ত সময় জানুয়ারি থেকে মার্চ। এসময় গেলে হয়তো খরচ একটু বেশি পড়বে। তবে যদি অফ সিজনে যান তাহলে খরচ একটু কম পড়বে। 

মালদ্বীপে যেতে হলে আগে থেকে ভিসা নেওয়ার দরকার হয়না এখানে ৩০ দিন মেয়াদে অন এ্যারাইভাল’ ভিসা নিতে হয়। আপনি যদি জব করেন তাহলে এনওসি,বিজনেস করলে ট্রেড লাইসেন্স ও স্টুডেন্ট হলে আইডি কার্ড ও দরকারে কাগজের ফটোকপি সাথে রাখবেন।

মালদ্বীপে ভ্রমনে গেলে সে ক্ষেত্রে বিমানের টিকিটের ক্ষেত্রে এক থেকে দুই মাস আগে বুকিং দেওয়ার চেষ্টা করুন তাতে বিমানের টিকিট মূল্য কিছুটা কমে পাওয়া যাবে। মালে আইল্যান্ডে যদি সিজনাল সময়ে ঘুরতে যান তাহলে বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সির সাথে যোগাযোগ করে থাকার জন্য হোটেল বুকিং দিয়ে রাখুন। এতে করে কিছু স্পেশাল অফার পাওয়া যায় এবং নানা ধরনের ঝামেলাও এড়ানো যায়।

মালদ্বীপ একটি বিলাসবহুল দেশ তাই খরচ কিছুটা বেশি। তবে বুদ্ধি ও হিসেব করে খরচ করতে পারলে আপনি ভালোভাবে পুরো ঘুরতে পারবেন।

ঢাকা থেকে পৌছাতে যদি রাত হয়ে যায় এবং আপনি পরের দিন আইল্যান্ডে পৌঁছাতে চান তাহলে রাত কাটানোর জন্য যেকোনো কম খরচের হোটেলে থাকার চেষ্টা করুন। 

রিসোর্ট থাকলে খাবার খরচ প্যাকেজের মধ্যে নেওয়ার চেষ্টা করবেন আর বাইরে খেলে মেন্যুবার থেকে লোকাল খাবার খাবেন, এখানে লোকাল খাবারের দাম অনেকটা কম।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭