বুকারজয়ী লেখক সালমান রুশদি ওপর হামলার নিন্দা জানিয়েছেন বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান, লেখক-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, অধিকারকর্মী ও রাজনীতিবিদেরা।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সালমান রুশদির আরোগ্য কামনা করে বলেন, ‘রুশদিকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় আমি আতঙ্কিত। তখন তিনি এমন একটি অধিকার নিয়ে কাজ করছিলেন, যেটা রক্ষা করায় আমাদের পিছপা হওয়া উচিত নয়।’
সালমান রুশদি ওপর হামলার বিষয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেন, ‘সালমান রুশদি বিদ্বেষী ও বর্বর শক্তির হাতে কাপুরুষোচিত হামলার শিকার হয়েছেন। তিনি যে লড়াইটা করছেন, সেটা আমাদেরও লড়াই, বিশ্বের সবার লড়াই।’
এদিকে, ইরানের নির্বাসিত সাংবাদিক ও অধিকারকর্মী মাসিহ আলিনেজাদ সালমান রুশদির ওপর হামলার ফলে নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রে নিরাপদ মনে করছেন না। তিনি বলেন, ‘নিউইয়র্কে একবার অপহরণের পর বেঁচে ফিরেছি আমি। হত্যার চক্রান্তও এড়িয়েছি। এরপর যতক্ষণ না যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে শক্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে, ততক্ষণ আমি এখানে নিজেকে নিরাপদ মনে করি না।’
হামলাকারীর উদ্দেশে মাসিহ আলিনেজাদ আরও বলেন, ‘আপনি আমাদের হত্যা করতে পারবেন, কিন্তু লেখালেখির চিন্তাভাবনা ও নিজেদের মর্যাদা রক্ষার লড়াইকে হত্যা করতে পারবেন না।’
হামলার নিন্দা জানিয়ে আফগান বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের লেখক খালেদ হোসেইনি বলেছেন, ‘সালমান রুশদির ওপর এই কাপুরুষোচিত হামলায় আমি খুবই আতঙ্কিত। তাঁর সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করি।’
এ ঘটনায় দুঃখ ও ক্ষোভে অনেকটা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বলে জানান ভারতের বুকারজয়ী লেখক অরুন্ধতী রায়। তিনি বলেন, ‘তিনি (সালমান রুশদি) বিশ্বজুড়ে নানা ধরনের চাপে থাকা লেখকদের সহযোগিতা করেছেন। রুশদির মতো একজন ব্যক্তির ওপর এ ধরনের ঘটনা আমাদের অনেককে সত্যিই অস্থির করে তুলেছে।’ নির্বাসিত বাংলাদেশি লেখক তসলিমা নাসরিনও নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
রুশদির ওপর হামলাকে ‘ভয়াবহ’ আখ্যায়িত করেছেন ‘হ্যারি পটার’ সিরিজের রচয়িতা জনপ্রিয় ব্রিটিশ লেখক জে কে রাউলিং। মার্কিন লেখক স্টিফেন কিং বলেছেন, ‘আশা করি সালমান রুশদি ঠিকঠাক আছেন।’
সালমান রুশদির ওপর হামলার পর যাঁরা প্রথম সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান বলেন, ‘তাঁর (রুশদি) দ্রুত আরোগ্যের জন্য আমরা সবাই প্রার্থনা করছি। তাঁকে দ্রুত সহায়তা করার জন্য যাঁরা প্রথম এগিয়ে গিয়েছিলেন, সেসব ভালো মানুষের প্রতি আমরা কৃতজ্ঞ।’ এ ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের সংস্কৃতি বিষয়কমন্ত্রী নন্দী ডরিসও।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রে ছুরিকাহত হন সালমান রুশদি। শুক্রবার (১২ আগস্ট) নিউইয়র্কের শিটোকোয়া ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানমঞ্চে কথা বলছিলেন তিনি। এ সময় তার ঘাড়ে এক হামলাকারী ছুরিকাঘাত করেন। পরে হেলিকপ্টারে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। এই ঘটনার পর স্থানীয় পুলিশ হাদি মাতার (২৪) নামে সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে আটক করেছে।
পুলিশ বলছে, হামলাকারী মঞ্চে উঠে রুশদি ও তার সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর ওপর হামলা চালান। রুশদির ঘাড়ে ছুরি দিয়ে বেশ কয়েকটি আঘাত করা হয়েছে। পরে হামলাকারীকে ধরে নিজেদের হেফাজতে নেয় পুলিশ।
‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ বই লেখার জন্য এ ঔপন্যাসিকের নামে ১৯৮৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি মৃত্যু পরোয়ানা জারি করেছিলেন ইরানের তৎকালীন সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লা খোমেনি। এ বইয়ের জন্য ৯ বছর তাকে আত্মগোপনে থাকতে হয়েছিল।
একই বইয়ের কারণে নব্বইয়ের দশকে ইতালির মিলানে রুশদির ওপর হামলা চালানো হয়েছিল। শুধু তাই নয়, ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর জাপানি অনুবাদক হিতোসি ইগারাসিকে ছুরি মেরে খুন করা হয় টোকিয়োর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত এ ঔপন্যাসিক ১৯৮১ সালে মিডনাইট'স চিলড্রেন লিখে খ্যাতি অর্জন করেন। যুক্তরাজ্যেই এর এক মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়।