ইনসাইড ইকোনমি

গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎতে এবার জড়িত 'দালাল প্লাস'


প্রকাশ: 14/08/2022


Thumbnail

গত বছরের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎতের বিষয়টি প্রথমে সামনে আসে। এটি নিয়ে আইনশৃখলা বাহিনী তৎপরতা শুরু করলে প্রতিষ্ঠানটির চ্যায়ারম্যান এবং এমডিকে গ্রেফতার করা হয়। এর পরপরই এ বিষয়ে নড়েচরে বসে আইনশৃখলা বাহিনী । একে একে বেড়িয়ে আসতে থাকে আলিসা মার্ট, ই-অরেঞ্জসহ নাম না জানা অনেক ই-কমার্স সাইটের গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎতের বিষয়টি। এ বিষয়ে সরকার শূন্য সহিষ্ণু নীতি গ্রহণ করেন । সে ধারাবাহিকতায় এবার বেড়িয়ে এলো আরেকটি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান দালাল প্লাসের নাম। 

জানা গেছে, এই ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের কাছ থেকে ৪১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। অনলাইনে বিজ্ঞাপণের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছে গ্রাহকদের কাছ থেকে। লোভোনীয় মূল্য ছাড়ে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন পণ্য যেমন: মুঠোফোন, গাড়ি ও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন দিতো। ফলে গ্রাহকরা পণ্য অর্ডার করতো। এভাবে ৭ মাসে প্রায় ২০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যে গ্রাহকের ৭৫ কোটি ৭২ লাখ ৯৪ হাজার টাকার পণ্য এখনো বুঝিয়ে দেয়নি তারা। 

ব্যক্তিগত ভোগবিলাসে, আত্মীয়–স্বজনের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে ও বিভিন্ন নামে প্রতিষ্ঠান খুলে গ্রাহকের পণ্যের টাকা সরিয়েছেন দালাল প্লাসের পরিচালকসহ তিনজন। তিন মাসের অনুসন্ধানে দালাল প্লাসের বিরুদ্ধে ৭৫ কোটি ৭২ লাখ ৯৪ হাজার টাকার পণ্য বুঝিয়ে না দেওয়ার তথ্য উঠে এসেছে। এর মধ্যে ৪১ কোটি ৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বাকি টাকা কী হয়েছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

শনিবার (১৩ আগস্ট) রাজধানীর ধানমন্ডি থানায় অর্থ পাচার আইনে দালাল প্লাসের চেয়ারম্যান সালেহ উদ্দিন মুরাদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজিজুল হক ও পরিচালক আবু জুবায়ের হোসেন রাব্বির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের পরিদর্শক ইব্রাহিম হোসেন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। তিনজনই বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন

সিআইডি বলছে, লোভনীয় ছাড় দেওয়ার নামে ৪৫ হাজারের বেশি অর্ডার নিয়েছিল দালাল প্লাস। সব ফরমায়েশের টাকা অবশ্য গ্রাহকেরা পরিশোধ করেননি।

প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানা যায়, মোট ৮ হাজার ২২২টি ফরমায়েশ (একটি ফরমায়েশে একাধিক পণ্য থাকতে পারে) বাবদ ১২৬ কোটি ৮৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা সংগ্রহ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।  এর মধ্যে ৩ হাজার ৬০৪টি ফরমায়েশের বিপরীতে গ্রাহকের ৭৫ কোটি ৭২ লাখ টাকার পণ্য না দিয়ে আত্মগোপনে চলে যান প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তারা। এসব টাকা আসামি ও তাঁদের আত্মীয়দের ১৯টি ব্যাংক হিসাবে সরিয়ে নেওয়া হয়। 

অর্থ পাচার আইনে করা মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়েছে, গ্রাহকের ৪১ কোটি ৭ লাখ ৩৫ হাজার টাকার মধ্যে ৩৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা বিভিন্ন সময় আসামিরা ব্যাংক থেকে তুলে আত্মসাৎ করেছেন। ৫ কোটি টাকা দালাল প্লাসের মালিকপক্ষের প্রতিষ্ঠান ‘ফ্রিডম ৭১’ ও ‘আইটি ইনস্টিটিউট’–এর একটি ব্যাংকের বরিশাল শাখার হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। এ ছাড়া দুটি ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি কেনার জন্য দালাল প্লাসের পরিচালক আবু জুবায়ের উত্তরার একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ৫০ লাখ টাকা অগ্রিম দিয়েছিলেন।

দালাল প্লাসের এক গ্রাহক জানায়, আত্মীয়দের কাছ থেকে ধার নিয়ে দালাল প্লাসে মোটরসাইকেলসহ প্রায় ১৮ লাখ টাকার বিভিন্ন পণ্যের ফরমায়েশ দিয়েছিলেন তিনি। প্রায় ৫ লাখ টাকার পণ্য পেয়েছেন। বাকি টাকার পণ্য না দিয়ে হঠাৎ অফিস বন্ধ করে দেয় দালাল প্লাস। ধারের টাকা ফেরত দিতে না পেরে তিনি এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

অনুসন্ধান শেষে অর্থ পাচার আইনে তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তদন্তে টাকার অঙ্ক ও আসামির সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালে জানুয়ারিতে রাজধানীর ধানমন্ডির জিগাতলা এলাকার এএনজেড স্কয়ারের পঞ্চম তলায় অফিস ভাড়া নিয়ে ব্যবসা শুরু করে দালাল প্লাস প্রতিষ্ঠানটি। গ্রাহকদের অনেকেই প্রতারিত হয়ে প্রতিষ্ঠানটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ধানমন্ডি ও মতিঝিল থানা এবং আদালতে একাধিক প্রতারণা মামলা করেন। তবে আবার অনেকে অর্থ ফেরত পাবেন না এমন আশঙ্কা থেকে অনেক গ্রাহক মামলা করেননি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭