ইনসাইড বাংলাদেশ

ইতিহাসের কলঙ্কিত ও বেদনাবিধুর দিন আজ


প্রকাশ: 15/08/2022


Thumbnail

শোকাবহ ১৫ আগস্ট আজ। বাঙালি জাতির ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত ও বেদনার দিন। আজকের এই দিনটি জাতীয় শোক দিবস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের এই দিন জাতি হারিয়েছে তার বাঙালির আরাধ্য পুরুষ, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি, জাতির গর্ব জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। এই দিনে ভোর রাতে ধানমন্ডির বাসভবনে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি। রাজনীতির সঙ্গে সামান্যতম সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধু পরিবারের নারী-শিশুরাও সেদিন রেহাই পায়নি ঘৃণ্য কাপুরুষ এ ঘাতক চক্রের হাত থেকে।

সেদিন ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এ হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী মহীয়সী নারী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব, একমাত্র ভাই শেখ আবু নাসের, মুজিব দম্পতির জ্যেষ্ঠ পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, দ্বিতীয় পুত্র বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, কনিষ্ঠ পুত্র নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেল, নবপরিণিতা পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণি, স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সংগঠক ও জাতির পিতার ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, তার ছোট মেয়ে বেবী সেরনিয়াবাত, কনিষ্ঠ পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, দৌহিত্র সুকান্ত আব্দুল্লাহ বাবু, ভ্রাতুষ্পুত্র শহীদ সেরনিয়াবাত, আব্দুল নঈম খান রিন্টু, বঙ্গবন্ধুর প্রধান সামরিক সচিব কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমেদ ও কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বিদেশে থাকায় সেদিন প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বাঙালি জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করে দিনটি। 

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট খুনিরা জাতির পিতাকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, বর্বরোচিত এ হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে ঘৃণ্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। ফলে পরবর্তীকালে দীর্ঘ ২১ বছর বাঙালি জাতি বিচারহীনতার কলঙ্কের বোঝা বহন করতে বাধ্য হয়। জাতির পিতার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত সরকার বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে নিয়মতান্ত্রিক বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০১০ সালে ঘাতকদের ফাঁসির রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করে। বঙ্গবন্ধুকন্যা সব ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন।

বাংলা ও বাঙালির মুক্তির লড়াইয়ে বঙ্গবন্ধু তার সব অনুভূতি, ত্যাগ, সংগ্রাম, বীরত্বপূর্ণ নেতৃত্ব, অদম্য স্পৃহা, দৃঢ়প্রত্যয়, বাঙালি জাতির প্রতি গভীর ভালোবাসা, মমত্ববোধ, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও আদর্শের মাধ্যমে গোটা জাতিকে উজ্জীবিত করে স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত আত্মত্যাগে দীক্ষিত করে তুলেছিলেন। শেখ মুজিবের নেতৃত্বে ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি উপমহাদেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জন্ম লাভ, ’৪৮-এর মার্চে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণার প্রতিবাদে আন্দোলন, ’৪৯-এর ২৩ জুন আওয়ামী লীগের আত্মপ্রকাশ, ’৫২-এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬ দফা, ’৬৮-এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা ও ১১ দফা, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ’৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়সহ ইতিহাস সৃষ্টিকারী নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির স্বাধীনতা অর্জনের আকাঙ্ক্ষা চূড়ান্ত লক্ষ্যে এগিয়ে যায়।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্নিশপথে ঐক্যবদ্ধ হয় বাঙালি জাতি। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলে শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ। তার কালজয়ী নেতৃত্বে পাকিস্তানি দুঃশাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ২৪ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের স্ফূলিঙ্গে উজ্জীবিত নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক। তিনি বাংলার মাটি ও মানুষের পরম আত্মীয়, শত বছরের ঘোর নিশীথিনীর তিমির বিদারী অরুণ, ইতিহাসের বিস্ময়কর নেতৃত্বের কালজয়ী স্রষ্টা, বাংলার ইতিহাসের মহানায়ক, স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি বাঙালির জাতির পিতা। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। উন্নত সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্নসারথি।

বাঙালির মহান নেতা শেখ মুজিব চিরঞ্জীব, তার চেতনা অবিনশ্বর। বাঙালি জাতির অস্থিমজ্জায় মিশে আছেন মুক্তির অবিসংবাদিত এ মহানায়ক। আজ মুজিবাদর্শে উদ্ভাসিত বাংলার আকাশ-বাতাস ও জল-সমতল। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে শেখ মুজিবের অবিনাশী চেতনা ও আদর্শ চির প্রবাহমান থাকবে।

শোকাবহ ১৫ আগস্টে সমগ্র জাতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী, ভ্রাতৃপ্রতিম এবং বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক সংগঠনসমূহ যথাযোগ্য মর্যাদা, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও ভাবগম্ভীর বেদনাবিধুর পরিবেশে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে জাতীয় শোক দিবস পালন করবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭