ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে এবার আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলার কেনাবেচায় দামের পার্থক্য (স্প্রেড) বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে ব্যাংকগুলো যে দামে ডলার কিনবে, তার চেয়ে সর্বোচ্চ এক টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে পারবে। ব্যাংকগুলো বলছে, এর ফলে প্রবাসী আয়ে প্রতি ডলার ১১০ টাকা ও রপ্তানি বিল নগদায়নে ১০৫ টাকা হলে আমদানিতে ডলারের দাম হবে সর্বোচ্চ ১০৮ টাকা ৫০ পয়সা।
রোববার (১৪ আগস্ট) অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) এবং বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) সদস্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ব্যাংকগুলোর পক্ষে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) নেতারা উপস্থিত ছিলেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অনুষ্ঠিত সভায় সভাপতিত্ব করেন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
ডলারে স্প্রেড সর্বোচ্চ এক টাকা হবে, এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেশ আগের সিদ্ধান্ত। বর্তমান সংকটের কারণে যা কার্যকর নেই। এখন পুরোনো সিদ্ধান্ত আবারও কার্যকর করে সংকট সমাধানের পথ দেখাচ্ছে ব্যাংকগুলো।
সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়, ব্যাংকগুলো ডলার বাজার থেকে যে অস্বাভাবিক মুনাফা করেছে, তা ব্যাংকের আয়ে নিতে পারবে না। এখন আমদানিতে কম দাম নিয়ে তা সমন্বয় করতে হবে। ডলারের বাজার কঠোরভাবে তদারকি অব্যাহত রাখা হবে।
জানা যায়, গতকালের সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে পরিস্থিতি জানতে চাওয়া হয়। ব্যাংকগুলো বেশি দামে প্রবাসী আয় আনার বিষয়টি তুলে ধরে। এ জন্য ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতায় প্রবাসী আয় আনার উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানায়। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এই প্রস্তাব নাকচ করে দেয়।
সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, রপ্তানি ও প্রবাসী আয় দিয়ে আমদানি দায় শোধ করা যাচ্ছে না। এতে যে ঘাটতি হয়েছে, সেই পরিমাণ ডলার বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে বিক্রি করা হয়েছে। এরপরও কেন এত সংকট হবে। এই সুযোগে ব্যাংকগুলো দাম বাড়িয়ে অস্বাভাবিক মুনাফা করেছে।
সভায় ব্যাংকগুলোকে বুঝেশুনে আমদানি ঋণপত্র খুলতে বলা হয়। আর জানানো হয়, আমদানি ঋণপত্র খোলা কমেছে। প্রবাসী আয়ও বাড়ছে। ফলে সংকট কেটে যাবে। যে রপ্তানি হচ্ছে, তার আয় দ্রুত সময়ে এনে নগদায়ন করতে বলা হয়।
সভা শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ডলারের বাজারে যে টানাপোড়েন চলছে, তা থামাতে পরামর্শমূলক সভা ডাকা হয়েছিল। ব্যাংকগুলো যাতে রপ্তানি বিল দ্রুত দেশে আনে ও নগদায়ন করে, এ জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে ডলার কেনাবেচা শুরু করতে বলা হয়েছে। এটা হলে এক-দুই মাসের মধ্যে ডলারের বাজার স্বাভাবিক হয়ে আসবে।
সিরাজুল ইসলাম আরও বলেন, আমদানি ঋণপত্রে সমন্বয়ে প্রতি ডলারে যত কম মুনাফা করা যায়, তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। আমদানি ঋণপত্র খোলা কমেছে, ব্যাংকগুলোকে বুঝে ঋণপত্র খুলতে বলা হয়েছে।