ইনসাইড পলিটিক্স

বিরোধী দলকে কেন ছাড় দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী?


প্রকাশ: 15/08/2022


Thumbnail

গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রোববার সকালে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সূচনা বক্তব্যে বলেছেন, চলমান পরিস্থিতিতে আমাদের বিরোধী দল একটু সুযোগ পাচ্ছে। তারা আন্দোলন করবে করুক। তাই আমি আজকেও নির্দেশ দিয়েছি, খবরদার, যারা আন্দোলন করছেন তাদের কাউকে যেন গ্রেফতার বা ডিস্টার্ব না করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে যখন আওয়ামী লীগের নেতারা বিএনপির বিরুদ্ধে লাগাতার হুমকি দিচ্ছেন এবং আগস্ট মাস যাওয়ার পর কত ধানে কত চাল এরকম মন্তব্য করছেন, তখন প্রধানমন্ত্রী যেন শান্তির ঝর্ণাধারা বইয়ে দিলেন। শুধু এটিই প্রথম নয়, এর আগেও প্রধানমন্ত্রী বিরোধী দল সম্বন্ধে একাধিক বক্তব্যে বলেছেন। প্রধানমন্ত্রী কিছুদিন আগে বলেছিলেন যে, একটি শক্তিশালী বিরোধী দল নাই, এটি বাংলাদেশের একটি বড় সমস্যা। এরপর প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে, বিরোধী দল যদি আন্দোলন করে, এমনকি আমার কার্যালয় ঘেরাও করার কর্মসূচি দেয় আমি বাধা দেব না, তাদেরকে নিয়ে এসে চা খাওয়াবো। রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রধানমন্ত্রীর বিরোধী দল প্রীতি নতুন একটি মেরুকরণ সৃষ্টি করেছে এবং এই কৌশলটি কি তা বোঝার চেষ্টা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। প্রশ্ন উঠেছে হঠাৎ করে প্রধানমন্ত্রী কেনো বিরোধী দলকে ছাড় দিচ্ছেন?

বিরোধী দলের পক্ষ থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অবশ্য দাবি করেছেন যে, আন্তর্জাতিক চাপের কারণেই এখন বিরোধী দলের সভা-সমাবেশ করতে দেয়া হচ্ছে। কারণ মানবাধিকারসহ বিভিন্ন ইস্যুতে সরকার চাপের মুখে রয়েছে। আর এ কারনেই হয়তো বিরোধীদলকে কিছুটা সুযোগ দিচ্ছেন। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মির্জা ফখরুল ইসলামের বক্তব্যকে উড়িয়ে দিয়েছেন। তারা বলছেন যে, বিরোধী দলের রাজনৈতিক আন্দোলনের ব্যাপারে সরকারের ওপর কোনো চাপ নেই এবং এ ধরনের চাপ দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তাই চাপের কাছে শেখ হাসিনা নতি স্বীকার করে বিরোধী দলকে ছাড় দেবেন, এমনটি নয়। অনেকেই মনে করছেন যে, বিরোধী দল যদি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে তাহলে সেই আন্দোলন বেশি দূর এগোতে পারবে না। আন্দোলন বেগবান হয় যখন সেই আন্দোলনে বাধা দেওয়া হয়, সংঘাত-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। তেমন পরিস্থিতি যেন না হয়, সেজন্যই হয়তো শেখ হাসিনা বিরোধী দলকে তাদের রুটিন আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য সুযোগ করে দিচ্ছেন যাতে একপর্যায়ে তারা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কারণ শুধুমাত্র সভা-সমাবেশ ইত্যাদি কর্মসূচি করে সরকারের পতন ঘটানো যাবে না। বরং এসব আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জনগণের মধ্যে একটা গা সওয়া ভাব চলে আসবে, যেটি আওয়ামী লীগের জন্য ইতিবাচক হবে।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, এটিই একমাত্র কারণ নয়। শেখ হাসিনা বিরোধী দলগুলোকে আন্দোলনের সুযোগ দিতে চাচ্ছেন সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণে। শেখ হাসিনা রাজনৈতিকভাবে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন একজন নেতা। তিনি একজন দার্শনিকও বটে। তিনি জানেন যে, রাজনীতিতে তার শত্রু-মিত্র কে। বাংলাদেশে যতগুলো রাজনৈতিক বিপর্যয় ঘটেছে, যতবার অবৈধ পন্থায় ক্ষমতা দখল হয়েছে, ততোবারই দুইটি প্রধান রাজনৈতিক দলের বিরোধের কারণেই সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সৃষ্টির পিছনে জাসদের সহিংস উত্তপ্ত রাজনীতি অবশ্যই একটি বড় কারণ ছিল। আর ২০০৭ সালে বিএনপি'র সঙ্গে আওয়ামী লীগের সহিংস রাজনীতির সুযোগ নিয়েছিল তৃতীয়পক্ষ। এখনো বাংলাদেশের সুশীল সমাজ মাঠে নেমেছে। তারা নানারকম বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছে। এই সমস্ত বক্তৃতা-বিবৃতিগুলো দিয়ে তার জনমনে এক ধরনের আতঙ্ক এবং অস্বস্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। এরকম পরিস্থিতিতে যদি আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি রাজপথে সহিংস আন্দোলন করে তাহলে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নেবে। অতীতে যেভাবে এই সুযোগ নেওয়া হয়েছিল। সেরকম বাস্তবতার কারণেই আওয়ামী লীগ সভাপতি হয়তো রাজনৈতিক শক্তিকে রাজনৈতিকভাবেই মোকাবেলা করতে চান। তিনি জানেন যে, তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দুর্বল। বরং আওয়ামী লীগ-বিএনপি'র সহিংসতায় যেন তৃতীয় পক্ষ সুযোগ না নেয় সেই জন্যই হয়তো প্রধানমন্ত্রী এরকম একটি অবস্থান গ্রহণ করেছেন। কারণ তিনি জানেন যে, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি, বিরোধী দলকে বাধাদান, বিরোধীদের ওপর নিপীড়ন ইত্যাদি রাজধানীতে সহিংসতা উসকে দেবে। যার সুযোগ নেবে তৃতীয় পক্ষ। তৃতীয় পক্ষকে ঠেকানোর জন্যই শেখ হাসিনা বিরোধী দলকে নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনগুলো করার সুযোগ দিচ্ছেন। তাহলে রাজনীতি রাজনীতিবিদদের হাতেই থাকবে। শেখ হাসিনা এই কারণেই বিরোধী দলের আন্দোলনের ব্যাপারে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছেন বলে অনেকে মনে করেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭