ইনসাইড পলিটিক্স

শেখ হাসিনার কৌশলে বিভ্রান্ত বিএনপি


প্রকাশ: 15/08/2022


Thumbnail

রাজনৈতিক আন্দোলনের খুব স্বাভাবিক একটি কৌশল বাংলাদেশে চিরন্তন ভাবে চলছে। কৌশলটি হলো বিরোধীদল রাজপথে আন্দোলন করবে, সরকারি দল তাতে বাধা দেবে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে বিরোধী দলের উপর চড়াও হবে। এক পর্যায়ে বিরোধী দলের প্রাণহানি ঘটবে, রাজপথে সহিংস হয়ে উঠবে এবং জনগণ বিক্ষুব্ধ হয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে যুক্ত হবে। সন্ত্রাস-সহিংসতার মধ্য দিয়ে একটি উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। এভাবেই সহিংস রাজনীতির মাধ্যমেই বিরোধী দলগুলো জয়ী হয়েছে। বাংলাদেশে যদি আমরা এরশাদবিরোধী আন্দোলন দেখি, সেখানে আমরা দেখব যে, যখন সরকারবিরোধী জোটগুলো বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছিলো তখন এরশাদ সরকার সেই কর্মসূচিকে বাধা প্রদান করেছিলো এবং নির্মমভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে নিপীড়ন করেছিলো। ১৯৯১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পরও আওয়ামী লীগের আন্দোলনকে দমন করার জন্য একদিকে পুলিশ বাহিনীকে লেলিয়ে দেওয়া হয়েছিলো, অন্যদিকে বিএনপি ক্যাডাররা সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। এর ফলে রাজনীতির মাঠ সহিংস উঠেছিল। এমনকি ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় আসার পরপরই সারাদেশে জ্বালাও-পোড়াওয়ের মাধ্যমে বিরোধী নিধন শুরু হয়েছিল। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে বিরোধী রাজনীতিকে চিরতরে নিস্তব্ধ করে দেওয়ার কৌশল নিয়েছিল তারেক জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি-জামায়াত জোট।

পাশাপাশি আমরা যদি দেখি যে, ২০০৬ সালে বিএনপি যখন ক্ষমতা ত্যাগ করে তখনও আওয়ামী লীগ-বিএনপির সহিংসতা রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু এবার দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। যখন বিরোধী দল দীর্ঘদিন পর রাজপথে কিছু কিছু কর্মসূচি পালনের চেষ্টা করছে তখন রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছিলো। এই শঙ্কা আরও বেড়ে গিয়েছিল যখন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতারা বিএনপিকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলো। সে সময়ে অনেকেই মনে করেছিলো যে, সেপ্টেম্বর থেকেই রাজনৈতিক পরিস্থিতি হয়তো উত্তপ্ত হয়ে উঠবে। বিশেষ করে বিএনপি নেতারা এটাই চাচ্ছিলেন। যেমন- সাম্প্রতিক সময়ে ভোলার সহিংসতার কারণে বিএনপি অনেকটাই উজ্জীবিত হয়েছে। রাজনৈতিক আন্দোলনে যখন প্রাণহানি ঘটে তখন উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। এ বিবেচনা থেকেই বিএনপি অপেক্ষা ছিলো কখন আওয়ামী লীগ মাঠে নামবে, কখন পুলিশ বাধা দিবে এবং এই বাধায় আন্দোলনকে বেগবান করবে, অতীতে যা হয়েছে। কিন্তু সেই কৌশলটি একেবারেই ভোঁতা করে দিলেন প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি জানিয়ে দিলেন যে, বিরোধীদলের কর্মসূচিতে কোন ডিস্টার্ব করা হবে না। এমনকি তারা যেন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে পারে সেটা নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন বলে গতকাল জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে বিএনপির আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠার সম্ভাবনা কম।

একটা রাজনৈতিক দল যদি সভা-সমাবেশ করে, বিক্ষোভ করে কিংবা হরতালও করে, তাতে যদি কেউ বাধা না দেয় তাহলে তো সেই আন্দোলন সহিংস রূপ নেবে না এবং আন্দোলন বেগবানও হবে না। একটা সভা, একটি সমাবেশ ও একটি বিক্ষোভ মিছিল বা মানববন্ধনের কর্মসূচি কখনোই একটি সরকারকে বিব্রত করতে পারবে না। বরং এই কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার যে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করছে, বিরোধী দলকে স্পেস দিচ্ছে এটি প্রমাণিত হবে। এ কারণেই আওয়ামী লীগ সভাপতি যখন বিরোধী দলের আন্দোলনকে স্বাগত জানালেন এবং তাদেরকে আন্দোলন করার কথা বললেন তখন বিএনপি বিভ্রান্ত। কারণ, বিএনপি যে হিসেব-নিকেশ করেছিলো যে, বাধা এলেই লাশ পড়বে এবং লাশ পড়লেই আন্দোলন তীব্র হবে সেই হিসেব-নিকেশ পাল্টে গেল। বার বার বিএনপি শেখ হাসিনার কৌশলের কাছে বিভ্রান্ত হয়। শুধু যে এবার তা নয়। বিভিন্ন সময়ে শেখ হাসিনার কৌশলে বিএনপি ধরাশায়ী হয়েছে গত ১৩ বছরে।

২০১৩ সালে যখন বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও আন্দোলন করা শুরু করলো সেই সময় বেগম খালেদা জিয়াকে চায়ের নিমন্ত্রণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া সেই নিমন্ত্রণ প্রত্যাখ্যান করেন। এটি ছিলো বিএনপির একটি রাজনৈতিক বিপর্যয়। পরবর্তীতে কোকো যখন মৃত্যুবরণ করেন তখন সহানুভূতি জানাতে প্রটোকল ভেঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন যেখানে তিনি অবস্থান করছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানো তো দূরের কথা বাইরের মূল ফটক বন্ধ করে দিয়ে রাজনীতিতে একটা নিকৃষ্ট অসৌজন্যতার নজির স্থাপন করে বিএনপি। এটিও বিএনপির জন্য আরেকটি রাজনৈতিক পরাজয় ছিলো। ২০১৮ সালে যখন বিএনপি জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে তখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বলা হয় যে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তারা নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে চায়। আর এই বক্তব্য দেওয়ার পরপরই আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা বলেছিলেন যে, কীসের আলাপ, কোনো আলোচনা হবে না ইত্যাদি। কিন্তু এর পরপরই প্রধানমন্ত্রী সবাইকে চমকে দেন এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আমন্ত্রণ গ্রহণ করে রাজনৈতিক সংলাপ শুরু করেন। ওই সংলাপই বিএনপিকে নির্বাচনের পথে নিয়ে যায়। এবার আবার শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় বিএনপিকে বিভ্রান্ত করেছে, চমকে দিয়েছে। এখন বিএনপি কি করে সেটাই হলো দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭