ইনসাইড বাংলাদেশ

মন্ত্রীদের হতাশা: কাজ দিলেন প্রধানমন্ত্রী


প্রকাশ: 16/08/2022


Thumbnail

সাম্প্রতিক সময়ে মন্ত্রীদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। তারা মনে করছেন, মন্ত্রণালয়ে তারা কর্মহীন। তাদেরকে পাশ কাটিয়ে আমলারাই সব ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। বিভিন্ন ব্যাপারে মন্ত্রীদেরকে অন্ধকারে রেখে নানা রকম সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। মন্ত্রীরা শুধুমাত্র রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন বলে কোনো কোনো মন্ত্রী হতাশা প্রকাশ করেছেন। এই হতাশা শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকেই। বিশেষ করে করোনা প্রকোপ যখন শুরু হয় তখন থেকে আস্তে আস্তে মন্ত্রীদের বদলে সচিবদের ক্ষমতা বেড়ে যেতে থাকে। এর প্রধান কারণ হলো প্রধানমন্ত্রী যে দিকনির্দেশনাগুলো দিচ্ছেন তা প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিবকে জানানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব বিভিন্ন সচিবকে এই দিক-নির্দেশনাগুলো দেন, সচিবরা তা বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেন। ফলে এখানে মন্ত্রীদের ভূমিকা গৌণ হয়ে ওঠে। তবে সেই পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার পর স্বাভাবিক অবস্থাতেও দেখা যাচ্ছে যে, মন্ত্রীদেরকে ক্ষমতাহীন রাখার একটা নীরব প্রয়াস আমলাদের মধ্যে লক্ষ করা যাচ্ছে। তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ হিসেবে মন্ত্রীরা বলছেন যে, গত ২৩ জুলাই যে জনপ্রশাসন পদক দেওয়া হয় সে বিষয়ে। জনপ্রশাসন পদক ৩১ জন কর্মকর্তা এবং প্রতিষ্ঠানকে বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক দেয়া হয়। এর মধ্যে তিনটি পদক ছিলো মন্ত্রণালয়ের। এর মধ্যে সাধারণ প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শান্তির দর্শন বহির্বিশ্বের ছড়িয়ে দিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমির উদ্ধার ও উন্নয়নের ধারণা বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রশাসন এ পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় বঙ্গবন্ধু পদক পায়।

একটি মন্ত্রণালয়ের প্রধান নির্বাহী হলেন মন্ত্রী। আর এই প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বটি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দিয়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী প্রধানের দায়িত্ব সচিবদের হাত থেকে নিয়ে মন্ত্রীদের দেন। জনপ্রতিনিধিদেরকে ক্ষমতায়ন করার উদ্দেশ্যে এটা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দুই মন্ত্রণালয় যখন জনপ্রশাসন পদক পেল তখন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সচিব কবির বিন আনোয়ার নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন। ওই অনুষ্ঠানে অন্তত এক ডজন মন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। নেতাদেরকে বসিয়ে রেখে সচিবদের স্বীকৃতি দেওয়াতে অনেকে হতাশ হয়েছেন। আবার অনেক সচিব পুরস্কার গ্রহণ করে এসে মন্ত্রীদেরকে রীতিমত ছবি তুলতে বাধ্য করেছেন। এই পরিস্থিতিতে মন্ত্রীদের মধ্যে হতাশা আরো বেড়ে গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে যখন অর্থনৈতিক সংকট দানা বেঁধে উঠছে তখন মন্ত্রীদের কর্তব্য কি, তারা কী করবেন না করবেন ইত্যাদি নিয়ে তাদের মধ্যে নানারকম হতাশা তৈরি হয়েছে।

দেখা যাচ্ছে যে, একজন সচিব মন্ত্রীকে জানাচ্ছেন যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকেই নির্দেশ এসেছে, এভাবে আমরা কাজটা করছি। মন্ত্রীকে অন্ধকারে রেখেই অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে মন্ত্রীদের মধ্যে এক ধরনের অস্বস্তি এবং হতাশা বেরিয়েছে। কোনো কোনো মন্ত্রী এ নিয়ে বেশ হতাশা প্রকাশ করে বলেছেন যে, আমরা তাহলে কিসের জন্য। আর এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই। যে কোনভাবেই হোক প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই তথ্যগুলো হয়তো পৌঁছেছে। প্রধানমন্ত্রী একনেকের বৈঠকে বর্তমান সংকট নিয়ে মন্ত্রীদের ভাবনা এবং সংকট থেকে উত্তরণে ভূমিকা কি, এ নিয়ে মন্ত্রীদেরকে চিন্তা-ভাবনা করার আহ্বান জানিয়েছেন এবং এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট, সুনির্দিষ্ট পরামর্শ দেওয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। এটির ফলে মন্ত্রীদের মধ্যে এক ধরনের চাঙ্গাভাব লক্ষ্য করা গেছে। একনেকের বৈঠকে উপস্থিত যে সমস্ত মন্ত্রীরা ছিলেন তারা অন্যদেরকেও এটি অবহিত করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে যে, আমলাতান্ত্রিক নির্ভরতা কাটিয়ে সরকার আস্তে আস্তে সংকট মোকাবেলায় রাজনৈতিক পথেরও সন্ধান করবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭