ইনসাইড পলিটিক্স

কিভাবে সুশীলদের কাছের মানুষ হলেন জিএম কাদের?


প্রকাশ: 16/08/2022


Thumbnail

জিএম কাদের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ মারা যাবার পর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হওয়ার পরপরই তিনি আস্তে আস্তে জাতীয় পার্টিকে সরকারবিরোধী একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছেন। এটিতে দোষের কিছু নয়। একটি শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে যদি জাতীয় পার্টি দাঁড়াতে পারে সেটি দেশের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য মঙ্গল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে জিএম কাদেরের ভূমিকা নিয়ে বিভিন্ন রকম প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষত বিশেষজ্ঞ অফ দেশের চিহ্নিত একটি সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা জিএম কাদেরকে নিয়ে একধরনের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে এবং সুশীলদের অত্যন্ত প্রিয় পাত্রে পরিণত হয়েছেন জিএম কাদের। যদিও হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের নয় বছরের শাসনামল ছিলো সুশীলদের সাথে রীতিমত এক যুদ্ধের মধ্য। সুশীলরাই হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদকে তার প্রাপ্য মর্যাদাটুকু দেয়নি বলে অনেকে মনে করেন। হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ জীবিত থাকা অবস্থায় কখনোই সুশীলদের প্রিয়পাত্র ছিলেন না, সুশীলদের কাছে গ্রহণযোগ্য ছিলেন না। শুধু তাই নয়, ১৯৯০ সালের এরশাদবিরোধী আন্দোলনে সুশীলরাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলো বলে অনেকে মনে করে। কিন্তু জিএম কাদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সুশীল সমাজের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং সুশীলরাও জিএম কাদেরকে তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে দিয়েছেন। যদিও জাতীয় পার্টির জন্ম সামরিক শাসনের গর্ভে এবং অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায়। জাতীয় পার্টির অভ্যুদয় ঘটেছিলো সংবিধানকে লঙ্ঘন করে এবং ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদের ক্ষমতা দখল ছিলো একটি অবৈধ-পন্থা। তারপরও এখন সুশীলরা সেই অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক একটি রাজনৈতিক দলকে কাছে টানতে চাইছেন কেন?

কেউ কেউ মনে করেন যে, জিএম কাদের যেহেতু মার্জিত, সজ্জন একজন ব্যক্তি, তার রাজনৈতিক জীবনে কালিমা নেই। বিশেষ করে ২০০৯ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি যখন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তখনও তিনি একজন সফল মন্ত্রী ছিলেন, দুর্নীতি থেকে নিজেকে দূরে রেখেছিলেন, কোনো বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়াননি। এজন্য সাধারণ মানুষের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা আছে। এ কারণেই জাতীয় পার্টির এই নেতাকে সুশীল সমাজ গ্রহণ করতে চায়। শিক্ষাজীবনেও জিএম কাদের অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। বুয়েট থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছিলেন এবং তার কথাবার্তার মধ্যে সবসময় এক ধরনের রুচিশীল, মার্জিতবোধ কাজ করে। এটি সুশীলদের আগ্রহের কারণ বলে কেউ কেউ বলতে চান। কিন্তু একটু গভীর বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, শুধুমাত্র একজন সজ্জন ব্যক্তি এ কারণেই সুশীলদের পছন্দ নন জিএম কাদের। বরং জিএম কাদেরকে দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে চান সুশীল সমাজ। আগামী নির্বাচন বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই নির্বাচনে ইতিমধ্যেই বিএনপি তার অবস্থান সুস্পষ্ট করেছে। বিএনপি বলেছে যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া তারা কোনো নির্বাচনে যাবে না। জাতীয় পার্টি মহাজোটের একটি শরীক এবং গত দুটি নির্বাচনে জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করেছে। যদিও ২০১৪ সালের নির্বাচনে খণ্ডিত জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করেছিলো। কিন্তু এবার জাতীয় পার্টি অংশগ্রহণ করবে কি করবে না, সেটি একটি কোটি টাকার প্রশ্ন। কারণ, জিএম কাদের ইতিমধ্যে বর্তমান সরকারকে কর্তৃত্ববাদী সরকার হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে তারা অনীহার কথা জানিয়েছেন। যদিও জাতীয় পার্টি আদর্শিকভাবে মনে করে যে, তারা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিকে সমর্থন করে না, এটিকে সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক মনে করে। কিন্তু জিএম কাদের নির্বাচনে কোনো একটা অজুহাত দেখিয়ে যদি না যান তাহলে আগামী নির্বাচনে একটি সংকটের মধ্যে পড়বে। আর এই সংকটটি যেন সৃষ্টি হয় সেজন্য কি সুশীল সমাজ জিএম কাদেরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা তৈরি করেছে? সুশীল সমাজের শিরোমণি হিসেবে পরিচিত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে জিএম কাদেরের সাম্প্রতিক সময়ে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের খবর পাওয়া যায়। এছাড়া দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যসহ বিভিন্ন সুশীলদের সঙ্গেও জিএম কাদেরের যোগাযোগের খবর গণমাধ্যমে চাউর হয়েছে। এই বাস্তবতায় অনেকে মনে করেন যে, আগামী নির্বাচনে জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিকে দূরে রাখা এবং একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের লক্ষেই সম্ভবত জিএম কাদেরকে কাছে টেনে নিচ্ছেন সুশীল সমাজ। এই পরিকল্পনা জিএম কাদের কতটুকু জানে সেটিই হলো একটি বড় প্রশ্ন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭