ইনসাইড পলিটিক্স

সিরিজ বোমা হামলা ও বিএনপির ভূমিকা


প্রকাশ: 17/08/2022


Thumbnail

১৭ আগস্ট ২০০৫। বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার মধ্যে দেশের ৩০০টি স্থানে একযোগে ৫০০ বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিজেদের শক্তিমত্তার জানান দেয় জঙ্গি সঙ্গঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। শুধুমাত্র মুন্সিগঞ্জ বাদে দেশের ৬৩ জেলায় চলে এই হামলা। এতে দুজন নিহত ও দু’শতাধিক লোক আহত হয়। সিরিজ বোমা হামলার স্থান হিসেবে জঙ্গিরা হাইকোর্ট, সুপ্রিমকোর্ট, জেলা আদালত, বিমানবন্দর, বাংলাদেশে থাকা মার্কিন দূতাবাস, জেলা প্রশাসক, জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়, প্রেসক্লাব ও সরকারি-আধাসরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বেছে নিয়েছিল। হামলার স্থানসমূহে জেএমবির লিফলেট পাওয়া গিয়েছিল।  লিফলেটগুলোতে বাংলাদেশে আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠাসহ বিচারকদের প্রতি হুমকি বার্তা দেওয়া হয়েছিল। ২০০১ সালে প্রথম জেএমবির নাশকতার শুরু হলেও ২০০৫ এ সিরিজ হামলার মাধ্যমে প্রথমবারের মতো সারাদেশে নিজেদের উত্থানের কথা জানান দেয় সংগঠনটি। এরপর চলতে থাকে একের পর এক হামলা। আতঙ্কিত হয়ে পড়ে সারাদেশের মানুষ। 

সে সময় রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলো বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার। ১৭ আগস্টের ঘটনা সংঘটিত করার আগে জেএমবির সদস্যরা একের পর এক বোমা হামলার ঘটনায় অংশ নেয়। তারা শাহ এমএস কিবরিয়াকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড নিক্ষেপ করে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সে সময়ের বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে হত্যার উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় আর্জেস বোমা নিক্ষেপ করে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় জঙ্গিরা কাউকে বা কোনো স্থাপনাকে লক্ষ্য করে আক্রমণ করেছিল। তাতে কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেন, কেউ আহত হন, কিছু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এসমস্ত ঘটনাগুলো ঘটার পর দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর নিষ্ক্রিয় ছিলো কেন? সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা থাকা স্বত্বেও কিভাবে দেশব্যাপী এই ঘটনা ঘটল সেটা একটা বড় প্রশ্ন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে কি দেশে কোনো আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা গোয়েন্দা সংস্থা ছিলো না? যদি ছিলো তাহলে কীভাবে সারাদেশের ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা হামলা করা হলো। নাকি সরকার এর সুবিধা ভোগী ছিলো যেকারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো তৎপরতা ছিলো না। তারা বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করেননি।

ইতিহাস বলছে, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়টা ছিলো অন্ধকারময় সময়। ওই ৫ বছর বাংলাদেশ দুর্নীতিতে টানা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। একই সঙ্গে জঙ্গিদের ঘাঁটি হিসেবেও পরিচিতি পাচ্ছিল এদেশ। তৎকালীন বিএনপি-জামাত জোট সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে উত্থান ঘটেছিলো জঙ্গিবাদের। সরকারি এমপি মন্ত্রীদের মদদে সারা বাংলাদেশে শক্ত অবস্থান তৈরি করে জঙ্গিরা। মুছে যায় বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনা।

এই সময়ে রাজশাহী অঞ্চল থেকে উঠে আসে সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই। যিনি মানুষকে ধরে ধরে নির্যাতন করত, তাদের স্বাধীনভাবে চলা, মতপ্রকাশ করা ইত্যাদিকে বাংলা ভাই তার ইচ্ছেমতো মানুষের ওপর নির্যাতন চালিয়ে বন্ধ করে রাখত। সেখানে থানা পুলিশ বাংলা ভাইয়ের নির্যাতনী কর্মকাণ্ড স্বেচ্ছাচারিতা, আইন হাতে তুলে নেয়া ইত্যাদির বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেনি।

এমপি, মন্ত্রীসহ অনেকেই বাংলা ভাইয়ের কর্মকাণ্ডের সমর্থক ছিল। সে সময় সরকারের একটি অংশ থেকে বলা হচ্ছিল বাংলা ভাই মিডিয়ার সৃষ্টি। অবশেষে ১৭ আগস্ট ‘মিডিয়ার সৃষ্টি’ বাংলা ভাইয়ের রাজনৈতিক মতাদর্শের নেতাকর্মীরা দেশব্যাপী সিরিজ বোমা হামলা চালিয়ে নিজেরাই জানান দিলো যে, তারা মন্ত্রীর কথামতো মিডিয়ার তৈরি নন, বাস্তবেই তারা আছে।

২০০১ সালে জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশের অভ্যন্তরে বিরোধী রাজনৈতিক দল তথা অসাম্প্রদায়িক দল গোষ্ঠী ও ব্যক্তির ওপর বড় ধরনের নির্যাতন, শারীরিকভাবে উৎখাত এবং এলাকা ও দেশ থেকে বিতাড়নের যে অভিযান চলছিল সেটির মূল লক্ষ্য ছিল দেশকে সাম্প্রদায়িক জঙ্গিবাদী ও তালেবানি রাষ্ট্রে পরিণত করা। ক্ষমতায় আসার পর জামায়াতে ইসলামীর সমর্থনে জেএমবি দেশের সর্বত্র তাদের শক্তির মহড়া একের পর এক প্রদান করে। এর চূড়ান্ত মহড়া হয়েছিল ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট এবং ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭