ইনসাইড টক

‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রিভিউ হওয়া উচিত’


প্রকাশ: 17/08/2022


Thumbnail

জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশের সার্বক্ষণিক সদস্য ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার বাংলাদেশ সফরে এসেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আমন্ত্রণে। আমাদের সাথে আলোচনা করে তিনি এসেছেন বিষয়টি এমন নয়। বাংলাদেশ সফরে এসে তিনি দেশের মানবাধিকার নিয়ে কাজ করেন এমন কিছু ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, সেটা তিনি করতেই পারেন। সেটা উনার স্বাধীনতা। উনি আলাদাভাবে আমাদের সময় দিয়েছেন। আমরা উনার সাথে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করব। দেশের মানবাধিকার নিশ্চিতে আমাদের কাজগুলো সম্পর্কে তাকে অবহিত করব। সকলের মানবাধিকার রক্ষা করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সে ব্যাপারে সরকার আমাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে। 

চার দিনের সফরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট। তার এই সফর এবং মানবাধিকার বিষয়ক অন্যান্য বিষয় নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ এসব কথা বলেছেন। 

ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে সবচেয়ে বড় মানবিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। তিনি নিজে যেভাবে মানবিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন, তিনি কখনো কাউকে বলার কোনো অবকাশ পাননি। তিনি কাউকে বলতে পারেননি আমি বিচার চাই, আমাকে বিচার দেওয়া হোক। বাংলাদেশের হিউম্যান রাইটস প্রতিকার মূলক ব্যবস্থা অত্যন্ত নিবিড়ভাবে নেওয়া হচ্ছে এবং নিবিড়ভাবে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রেক্ষাপটে আমরা দেখছি যে, বিভিন্ন কর্মকাণ্ড যেগুলো হিউম্যান রাইটস কমিশনের নেওয়ার কথা যেমন কমপ্লেইনস প্রসিডিউর। সেটা আমরা নিয়েছি এবং চারটি করে ৮টি ডিভিশন ভাগ করে নিয়ে কমপ্লেইনস হ্যাণ্ডেল করছি এবং ৮০ শতাংশ কমপ্লেইনস হ্যাণ্ডেল হয়েছে। যেটা এখনকার সময় সবচেয়ে বেশি। আমরা অনলাইনে এসমস্ত কাজ করেছি। যেটা আগে কখনো ছিলো না।

দেশে গুম হওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, গুম ব্যাপারটিকে যদি নির্দিষ্ট করে একটি শব্দ হিসেবে ধরা হয় তাহলে দেখা যায় যে, আমাদের প্যানেল কোর্টে এ ধরনের কোনো রকম ওয়ার্ড নেই, কোনো ব্যাখ্যা নেই। আমাদের স্থানীয় বাংলা ভাষাভাষীরা একটা ওয়ার্ড জানি এবং আমাদের মাথায় বিশেষ কিছু আসে। কিন্তু আমাদের আইনগত ভাষা হলো ফোর্স ডিসিপিয়ারেন্স এন্ড এবডাকশন এবং সেগুলোর প্রেক্ষাপটে আমরা বিচার করি এবং সেভাবে চিন্তা করি। সেভাবে কাজ করতে গিয়ে আমাদের কাছে যে সমস্ত কমপ্লেইনস এসেছে সেগুলো প্রত্যেকটি আলাদা আলাদাভাবে শুনেছি এবং সেগুলোর জন্য প্রতিবেদন চেয়েছি। যেগুলোর প্রতিবেদন আমরা পেয়েছি সেগুলোর প্রেক্ষিতে তার সমাধানও করেছি। বাকিগুলোর প্রতিবেদেনের অপেক্ষায় আছি। আমরা কোনোটাকেই কম গুরুত্বপূর্ণ মনে করি না। এক্ষেত্রে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও দায়ী হলে আমরা কোনোভাবেই নমনীয় হই না। আমরা কাউকে কাউকে শাস্তিও দিয়েছি। শাস্তি প্রদানের ক্ষেত্রে আমরা স্পষ্ট ভূমিকা রেখেছি এবং ফোর্স ডিসিপিয়ারেন্স যাতে না করে হয় সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখি।

র‌্যাবের সাত কর্মকর্তার উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে যখন কোনো একটি দেশ অন্য কোনো একটি দেশের মানবাধিকার ব্যাপারে নিয়ম লঙ্ঘনের কথা বলতে চায় সেটার জন্য জাতিসংঘের একটা ফোরাম আছে। সেটাকে বলে ইউনিভার্সেল পিউরিটি ভিউ। এটি চার বছর পর পর প্রত্যেকটা দেশের জন্য হয় আর প্রতি বছর একটা মিটিং হয় সেখানে যেকোনো দেশে অন্য একটা দেশের সম্পর্কে তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য উপস্থাপন করতে পারে সেটা উপরে তদন্তে যাওয়ার জন্য সেখানে মেকানিজম রয়েছে। কিন্তু এখানে কোনো একটা দেশে কোনো দেশকে এভাবে সরাসরি অভিযোগ করার জন্য আন্তর্জাতিক কোনো নিয়ম নেই। তারা যে সমস্ত অভিযোগগুলো এনেছেন সেক্ষত্রে তারা বলেছেন যে, দেখা গেছে, জানা গেছে, বলা হয়েছে ইত্যাদি। কিন্তু এভাবে তো অভিযোগ হয় না। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে যেই হোক সেটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্য হোন কিংবা সরকারের মদদপুষ্ট কোনো ব্যক্তি হয়েও যদি থাকে তাকে আমরা দোষারোপ করি এবং তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করি। কিন্তু এর জন্য সুস্পষ্ট অভিযোগ থাকা উচিত। অভিযোগের ব্যাখ্যা থাকার উচিত।

তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনটা শুধুমাত্র সাইবার ক্রাইমের ক্ষেত্রে এবং যেকোনো ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য বা কার্যক্রম কিংবা কোনো রকম ধর্মীয় উস্কানি দেওয়া বা সৃষ্টি করা কিংবা কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে অযথা অভিযোগ তোলা সে ধরনের যদি ব্যাপার হয়ে থাকে তাহলে সেটা সাইবার ক্রাইম হিসেবে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু  কোনোভাবে কোনো গোষ্ঠীকে নাজেহাল করার জন্য এই ধরনের আইনের ব্যবহার একদম সম্পূর্ণরুপে অনুচিত। আমরা জানি যে, এই আইনটি ক্ষেত্রবিশেষে করা হয়েছিল। আমরা এ ব্যাপারে আমাদের পক্ষে সুস্পষ্ট বক্তব্য দিয়েছি। মাননীয় আইনমন্ত্রী তিনি নিজেও এ কথা বলেছেন যে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কিছু কিছু বিষয় পরিবর্তন বা সংশোধনীর প্রয়োজন আছে। সুতরাং এটা সুস্পষ্ট ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন রিভিউ হওয়া উচিত।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭