ইনসাইড পলিটিক্স

সুশীল এবং পশ্চিমাদের সংকেতের অপেক্ষায় বিএনপি


প্রকাশ: 17/08/2022


Thumbnail

বিএনপি এখন নিজের উপর নির্ভরশীল নয়। বরং আন্দোলন করবে কিনা, কতদূর গভীর পর্যন্ত আন্দোলন করবে, কিভাবে আন্দোলন করবে, সরকারকে কতটুকু সমালোচনা করবে, কিভাবে সমালোচনা করবে ইত্যাদি সব বিষয়ে সুশীল এবং পশ্চিমাদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। গত কিছুদিন ধরেই সুশীল সমাজের একাংশের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ হচ্ছে এবং বিএনপি'র কি করা উচিত, কি ধরনের বক্তব্য দেয়া উচিত ইত্যাদি বিষয়ে পরামর্শ দিচ্ছে সুশীল সমাজের একাংশ। অন্যদিকে নির্বাচনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে পশ্চিমা দেশগুলোর দূতাবাসের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ করছে বিএনপি। আর এই দুই পরামর্শকের পরামর্শের দিকেই বিএনপি এখন তাকিয়ে আছে। নিজের শক্তিতে নয়, বরং সুশীল সমাজ এবং পশ্চিমা দেশগুলোর সহযোগিতা নিয়েই বিএনপি একটা বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে চায় বলে বিএনপির একাধিক নেতা মনে করছেন। বিএনপির কিছুদিন আগেই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তোলার কথা ঘোষণা করেছিল। এই আন্দোলনের প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে বিএনপি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শুরু করে এবং এই সংলাপে ২২টি রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠকও করে বিএনপি। কিন্তু এই বৈঠক শেষ হতে না হতেই বিএনপিকে বাদ দিয়েই কয়টি রাজনৈতিক দল মিলে গণতন্ত্র মঞ্চ নামে একটি মোর্চা তৈরি করে। ফলে বিএনপির নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের স্বপ্ন হোঁচট খায়। এরপর থেকেই বিএনপি এখন পশ্চিমা দেশ এবং সুশীলদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

বিশেষ করে গত মাস থেকে যখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ঘনিভূত হতে শুরু করে তখন থেকেই সুশীল সমাজের সঙ্গে বিএনপির ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। সুশীল সমাজ অর্থনৈতিক সংকটের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিএনপি নেতাদেরকে নিয়মিত সরবরাহ করছেন। কোন ভাষায় কিভাবে কথা বলতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে তারা পরামর্শ দিচ্ছেন এবং সেই পরামর্শ অনুযায়ী বিএনপি কাজ করছে। পাশাপাশি বিএনপির নেতারা মনে করেন যে, একটি অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য এবার পশ্চিমা দেশগুলো সরকারের ওপর বড় ধরনের চাপ দেবে। আর এই কারণে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের চেয়ে বিএনপি এই দাবির প্রতি পশ্চিমাদের সমর্থন আদায়ের ব্যাপারে বেশি আগ্রহী হয়ে পড়েছে। বিএনপির নেতারা বলছেন যে, বর্তমান সরকার ২০১৪ তে নির্বাচন করেছে, ২০২৩ এ সেভাবে নির্বাচন করতে পারবে না। বিএনপি নেতারা মনে করছেন যে, এবারের নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলোর নজরদারি অনেক বাড়বে। ফলে একতরফা নির্বাচন করলে সরকার বড় ধরনের নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়বে। যার ফলে এই সরকার ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। আর সেকারণেই আগামী নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপি উদাসীন।

বিএনপিকে সুশীল সমাজের একটি অংশ চুপচাপ বসে থাকার পরামর্শ দিয়েছে এবং তারা বলছেন যে, বিএনপি যেনো নির্বাচন থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্তে অটল থাকে। ধারণা করা হচ্ছে যে, একই পথে নিয়ে যাওয়া হবে জাতীয় পার্টিকে এবং শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি এবং জাতীয় পার্টি দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে নির্বাচনে আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। এই সুযোগটিকে কাজে লাগাতে চায় বিএনপি। বিএনপির একটি অংশ রাজপথের বড় ধরনের আন্দোলনের কথা বললেও বিএনপি'র শীর্ষস্থানীয় নেতারা কেউই রাজপথে বড় ধরনের আন্দোলনের পক্ষপাতী এখন নয়। বরং বিএনপি নেতারা মনে করছেন যে, বিভিন্ন ইস্যুতে সরকারের কঠোর সমালোচনা করা এবং নির্বাচনের ব্যাপারে অনড় অবস্থানে থাকাটাই হলো তাদের জন্য সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ এবং এই অবস্থায় থাকলেই নির্বাচনের আগে সরকার বড় ধরনের সংকটে পড়বে। ২০১৮ তে যেমন বিএনপির নেতা ছিলেন ড. কামাল হোসেন, এখন বিএনপি অঘোষিত নেতা হলেন সুশীল সমাজের চেনামুখ কয়েকজন। আর পশ্চিমা দেশগুলো বিএনপিকে ভরসা দিচ্ছি যে, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে তারা উদ্যোগী হবে। আর এই দুই আশায় বিএনপি এখন বসে আছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭