ইনসাইড টক

‘ইউরোপ, আমেরিকা এবং জাতিসংঘের দ্বিচারিতা দিবালোকের মত স্পষ্ট’


প্রকাশ: 18/08/2022


Thumbnail

অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। সাবেক চেয়ারম্যান, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের বাংলাদেশ সফর শেষে কমিশনের গঠন প্রসঙ্গ, দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে কথা বলেছেন। অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক মাহমুদুল হাসান তুহিন।

বাংলা ইনসাইডার: জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট শক্তিশালী এবং গ্রহণযোগ্য তদন্ত কমিশন গঠনের পরামর্শ দিয়েছেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বাংলাদেশ থাকার পরও তিনি এমনটি কেন বলেছেন?

অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান: জাতিসংঘের মানবাধিকার হাইকমিশনার কি বলেছে না বলেছে তাতে আমার কিছু যায় আসে না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন কি বলে না বলে কিছু যায় আসে না। কেননা ইউরোপ, আমেরিকা এবং জাতিসংঘের যে দ্বিমুখী এবং দ্বিচারিতা তাদের এটা এখন দিবালোকের মত স্পষ্ট। কেননা আমরা দেখলাম, এদের কাছে রোহিঙ্গা শরণার্থী, শরণার্থী না। ফিলিস্তিনের শরণার্থী, শরণার্থী না। সিরিয়ান শরণার্থী, শরণার্থী না। কিন্তু আপনি যদি ইউক্রেনের হন, এরকম শরণার্থী পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এদের যে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড, আমাদের এখানে খুঁজে বেড়াচ্ছেন আমাদের কি দোষ আছে না আছে। কিন্তু আমার ইচ্ছা হবে ড্রোন মেরে আন্তর্জাতিক আইনকে ভুলন্ঠিত করে, অন্যদেশের সার্বভৌমত্বকে ক্ষুণ্ণ করে, যারা আমার বিরোধী বা শত্রু তাদেরকে আমি নিশ্চিহ্ন করে দিবো, তখন তাদের আইন তাদের কোনো বাঁধা হয়ে দাঁড়ায় না। সুতরাং জাতিসংঘ কি বলছে সেটা আমার কাছে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ না। আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ যে, হ্যাঁ, আমাদের দেশে মানবাধিকারের সমস্যা রয়েছে। আমাদের গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ আছে এবং প্রত্যেকটি অভিযোগ অবশ্যই তদন্ত করে এর সত্যটা বের করে আনাটা খুবই জরুরী। কিন্তু এটির জন্য আমি মনে করি অন্য কোনো তদন্ত কমিশন বা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করার প্রয়োজন নাই। আমাদের যে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আছে, সেই জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে যদি একটু দাঁড়াতে দেয়, তীক্ষ্ণ দাঁত এবং তার ওই আঙ্গুলের নখগুলো যদি একটু বড় হতে দেয় যেন আঁচড় দিলে রক্ত বেরিয়ে আসে তাহলেই যথেষ্ট। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে যদি কার্যকর একটি প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করা যায়, সেই স্বাধীনতা এবং শক্তি যদি দেয়া হয়, সরকারের সেই স্বদিচ্ছা যদি থাকে তাহলে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে দিয়েই মানবাধিকার সুরক্ষার কাজগুলো বহুলাংশে করা সম্ভব বলে আমি বিশ্বাস করি।

বাংলা ইনসাইডার: মিশেল ব্যাচলেটের সাথে সুশীল সমাজ এবং তথাকথিত মানবাধিকারে কর্মীদের অনুষ্ঠিত বৈঠকে তাদের প্রকাশিত উদ্বেগ দেশের প্রকৃত চিত্র নাকি অতিরঞ্জিত বলে আপনি মনে করেন?

অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান: একটা দীর্ঘ সময় ধরে হলে উদ্বেগের জায়গা থাকতে পারে। অতি সাম্প্রতিককালে আমরা কিন্তু গুম বা বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের খবর গণমাধ্যমে চোখে পড়ে না। সেই দিক থেকে অবস্থার উন্নতি হয়েছে। কিন্তু অতীতে যে ঘটনা গুলো ঘটেছে বা অভিযোগ আছে সেগুলোর একটা উত্তর তো আমরা অবশ্যই প্রত্যাশা করি। যেমন- একজন মন্ত্রী বললেন যে অনেকেই নিজে থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। যদি সে নিজে থেকেও নিখোঁজ হয়ে যায় তা তার পরিবারের জন্য, আমাদের জন্য শঙ্কার। তাহলে সে কেন নিজে থেকে নিখোঁজ হয়ে গেলো সেটি খুঁজে বের করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। কারণ, রাষ্ট্র তো সেই দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না। সে কাজটি রাষ্ট্রকে করতে হবে। সে নিজ থেকে হারিয়ে গেছে, সে একজন ফরহাদ মাজহার, এটা বললে আমরা তো শুনবো না। আমরা চাই কেন লুকিয়ে রাখছে নিজেকে, কোনো অপরাধ করে লুকিয়ে থাকছে কিনা সেটা তো তদন্ত করে বের করে নিয়ে আসা উচিৎ। রাষ্ট্র তো এখানে চুপচাপ বসে থাকতে পারে না।

বাংলা ইনসাইডার: যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বছর গড়ে সাড়ে ৫ থেকে ৬ লাখ মানুষ গুম হন। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ৭ বছরে পুলিশের গুলিতে সাড়ে ৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, যার কোনো নির্দিষ্ট বিচার নেই। পরিসংখ্যান অনুযায়ী আমাদের মানবাধিকার পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার পরিস্থিতির চেয়ে ঢের ভালো। তারপরও কেন বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে জাতিসংঘসহ পশ্চিমা বিশ্বের এত উদ্বেগ?

অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান: যেহেতু আমাদের সাধারণ নির্বাচন এগিয়ে আসছে, এখন নির্বাচন যত এগিয়ে আসবে মানবাধিকার ইস্যুটি তত বেশি আলোচনা হবে। কারণ, পশ্চিমা আর ইউরোপের কাছে তো মানবাধিকার রাজনীতির হাতিয়ার। এই হাতিয়ার তারা ব্যবহার করে যখন সময় এবং সুযোগ আসে। একটা বড় সুযোগ আসে যখন জাতীয় নির্বাচন সামনে আসে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিই এটা। ইউরোপীয় ইউনিয়নও এটা করে। এই ইউরোপীয় ইউনিয়নের কারণে ইউরোপ কোনো রাষ্ট্র আর স্বাধীন আছে বলে মনে হয় না। সেখানে তো সবাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তাবেদার। এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিজস্ব কোনো বক্তব্য নেই। সবই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বক্তব্য। তাদের চেয়ে আমরা ভালো অবস্থানে আছে। আমরা নিজেরা স্বাধীন এবং স্বাধীন রাষ্ট্রে বাস করছি। আমরা যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করে এই স্বাধীনতা রক্ষা করার লড়াই করছি। সেখানে চড়াই উতরাই আছে। আমরা ইউরোপের কোনো রাষ্ট্রের কথায় উঠিবসি এমন নয়। আমরা অনেক ভালো অবস্থানে আছি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭