সোলাইমান আলী। ২৪ টি ঘণ্টা ভয়ে ভয়ে কাটে তার। কাজে মন বসে না কিন্তু কোন উপায়ও নেই। ঢাকায় তার বয়স মাত্র ৪ দিন। ১৫ আগস্ট দেবী ঘাটের যে হোটেলে আগুন লেগেছিল সেই বরিশাল হোটেল থেকে প্রায় ৫০ গজ বামে মোড় সংলগ্নে অবস্থিত একটি প্লাস্টিক কারখানায় কাজ করে। তার প্রথম কর্ম দিবসে ঘটে এই দেবী ঘাটে অগ্নিকাণ্ড। তাই আতংক নিয়ে কাজ করে সে। মনে আতংক থাকলেও সহকর্মীরা তাকে সহযোগিতা করেন অনেক। সবাই মিলে সাহস যোগান তার।
সোলাইমানের মতোই চকবাজার এলাকায় গড়ে উঠা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কারখানার প্রত্যেক শ্রমিকের অভিজ্ঞতা। রাজধানীর চকবাজারের, দেবী ঘাট, চুড়িহাট্টার, রহমতগঞ্জসহ আশেপাশের এলাকা ঘুরে কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন এই চিত্র দেখা গেছে। এসমস্ত ঘনবসতিপূর্ণ ঘিঞ্জি এলাকায় রাসায়নিকের গুদাম ও প্লাস্টিকের কারখানা যে কত বিপজ্জনক তা ইতোমধ্যে একাধিকবার প্রমাণিত হয়েছে। কিন্তু এতো কিছুর পরও ওই এলাকার কোন পরিবর্তন দেখা যায়নি। কয়েক দিন আগেই দেবী ঘাটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও আশেপাশের সব প্লাস্টিক কারখানাই চলছে আগের মতো করেই।
ঘিঞ্জি আর প্রতিটি সরু গলিতে ছোট ছোট কারখানার ছড়াছড়ি। বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিটি কারখানাই আগের মতো করেই চলছে।
শারমিন নামের এক শ্রমিক জানান, তিনি প্রায় দেড় বছর ধরে একই কারখানায় কাজ করছেন। তিনি বলেন, ঝুঁকি আছে কিন্তু আমাদের বিকল্প কিছু করার নেই। পেটের কথা চিন্তা করলে ঝুঁকির ভয়টা থাকে না। তাছাড়া এখানে কাজের পরিবেশ ভালো। এখনো কোনো সমস্যা হয়নি।
পাশের এক কারখানার কারিগর সোহেল মিয়া জানান, যখন কোনো দুর্ঘটনা ঘটে সে সময় কয়েক দিন মনের মধ্যে ভয় কাজ করে। নাহলে এই সব বিষয় আমার মাথায় থাকে না। তিনি জানান, ‘‘আমি প্রায় ১৪ বছর ধরে এ সমস্ত কাজ করছি এই এলাকায় বিভিন্ন কারখানাতে। একটু সতর্ক থাকি। তাছাড়া আগুণ লাগার ঘটনায় আমাদের কোনো অবহেলা বা দোষ থাকে না। আমরা সাবধানই কাজ করি। কিন্তু কোম্পানির মালিকদের কিছু সমস্যা থাকে।’’
এদিকে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে পুরান ঢাকার ঝুঁকিপূর্ণ অন্তত ৫০০টি গুদাম-কারখানা স্থানান্তর করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শালিমা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী রাশেদুল ইসলাম বলেন, সবাইকে যদি সরানো হয় তাহলে তো আর করার কিছু নেই। আমরা সরতে বাধ্য। ঝুঁকি থাকার পরও কেন সরছেন না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা যে ব্যবসা করি এই ব্যবসাই গড়ে উঠেছে চকবাজার কেন্দ্রিক। আমি যদি ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে এখান থেকে সরে যাই তাহলে ব্যবসা টিকিয়ে রাখা যাবে না। যখন সবাইকে সরে যেতে বলা হবে আমিও চলে যাব।
এলাকার বাসিন্দার রাজু আহমেদ বলেন, এলাকাবাসী বার বার সরকারের কাছে এসব ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিকের কারাখানা ও গুদাম আবাসিক এলাকা থেকে সরিয়ে নেয়ার দাবি জানিয়ে আসলেও আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই পাননি। তিনি আরও জানান, আমরা সরকারকে কতবার বলে আসছি আপনারা কেমিকেলগুলো সরান। সরকার ইচ্ছা করলে এক সপ্তাহের মধ্যে কেমিকেল কারখানাগুলো সরে যেতে বাধ্য। কিন্তু আমাদেরকে তারা শুধু আশ্বাসে ভাসিয়ে রাখে। বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ এখন পর্যন্ত কেউ নেয়নি।