ইনসাইড পলিটিক্স

মিশেলের বক্তব্য, বিএনপিতে হতাশা


প্রকাশ: 18/08/2022


Thumbnail

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট চারদিনের বাংলাদেশ সফর শেষ করে গতকাল চলে গেছেন। যাওয়ার আগে তিনি সংবাদ সম্মেলনে জাতিসংঘ এবং তার অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে তিনি কী ভাবেন সে সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যায় তার বিদায়ী সংবাদ সম্মেলনে। এই সফর ছিলো নানাদিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এ সফরে মিশেল ব্যাচেলেটের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদলও সাক্ষাৎ করেছিলো কিন্তু এ নিয়ে বিএনপির মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। এ সাক্ষাতে বিএনপির পক্ষ থেকে মোটাদাগে পাঁচটি বিষয় উপস্থাপন করা হয়েছিলো। তার মধ্যে একটি ছিলো বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। মুক্তিটিকে বিএনপি নেতারা তার মানবাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছিলো। বিএনপি নেতারা মিশেল ব্যাচেলেটের সাথে বৈঠকে সরাসরিভাবে বলেছিলো যে, বেগম খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ এবং তার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়া প্রয়োজন। এ জন্য জাতিসংঘ যেন এ ব্যাপারে সরকারকে সুস্পষ্ট একটি বার্তা দেয়। বিএনপি নেতৃবৃন্দ এছাড়াও বিএনপি নেতাদের গণহারে গ্রেফতার, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রসঙ্গটি উত্থাপন করেছিলেন এবং এ ব্যাপারেও জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ চেয়েছিলেন। বিএনপির তৃতীয় ইস্যুটি ছিলো গুম এবং সেখানে ইলিয়াস আলীর পুত্র তার বাবার গুম হওয়ার অভিজ্ঞতাটি বর্ণনা করেছিলেন। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো যে, সরকারের পক্ষ থেকে যে গুমের ঘটনা গুলোকে এক ধরনের অস্বীকৃতি দেয়া হচ্ছে এ ব্যাপারে যেন জাতিসংঘ ব্যবস্থা গ্রহণ করে। বিএনপির চতুর্থ বিষয় ছিলো অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন মানবাধিকারের একটি অংশ এবং এই লক্ষ্যে যেন জাতিসংঘ আগামী নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার ব্যাপারে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে। বিএনপির পক্ষ থেকে সর্বশেষ দাবী সভা-সমাবেশ ইত্যাদি করার ক্ষেত্রে জন্য কোনরকম প্রতিবন্ধকতা না দেওয়া হয়। বিশেষ করে বিরোধী মত দমন প্রতিরোধে জাতিসংঘ যেন দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করে।

বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের পর মিশেল ব্যাচেলেট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন এবং সেই বৈঠকে মিশেল বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করেন। প্রধানমন্ত্রী তাকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ইতিহাসের নিকৃষ্টতম মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা এবং তারপর থেকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিনের সামরিক শাসনের ফলে যে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে সে সম্পর্কে বিশদ ব্যাখ্যা দেন। এই সফরে মিশেলের সঙ্গে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকটি ছিলো সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে গত ১৫ আগস্ট। ওই দিন জাতীয় শোক দিবসে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেল ওই বৈঠকে সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে মানবাধিকারের কিছু বিষয় উল্লেখিত হয়। এর মধ্যে ছিলো গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং সংখ্যালঘুদের ওপর নিপীড়ন। এই তিনটি পক্ষের বক্তব্যের পর মিশেল যে সংবাদ সম্মেলন করেন তাতে বিএনপি হতাশই হয়েছে। কারণ, বিএনপির যে প্রধান আকাঙ্ক্ষা ছিলো যে জাতিসংঘ বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে আহ্বান জানাবেন, মানবিক কারণে যেন তাকে সরকার অনুমতি দেয় সে সম্পর্কে একটি কথা থাকবে কিন্তু মিশেল তার সংবাদ সম্মেলনে বেগম খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গটি পুরোপুরি ভাবে এড়িয়ে গেছেন। বিএনপির আরেকটি প্রত্যাশা ছিলো যে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির প্রতি জাতিসংঘের সমর্থন। তবে সেই সমর্থনও মিশেল দেননি। বরং মিশেল বাংলাদেশের নির্বাচনে জন-অংশগ্রহণ যেন নিশ্চিত হয় সে ব্যাপারে তারা আকাঙ্ক্ষার কথা ব্যক্ত করেছেন। এই বৈঠকের জন্য তাই হতাশাজনক। তারা কোনোকিছুই অর্জন করতে পারেনি। বরং এই বৈঠকের মাধ্যমে সুশীল সমাজ লাভবান হয়েছে বলেই বিএনপির কোনো কোনো নেতা মনে করছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭