ইনসাইড থট

সুশীলদের মাইনাস ফর্মুলা সফল হবে কি?


প্রকাশ: 19/08/2022


Thumbnail

আগস্ট মাস শোকের। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। বাঙালি তাকে জাতির পিতার আসনে বসিয়েছিলো। জাতির পিতা ঘাতকের বুলেটে প্রাণ দিয়ে শোধ করেছেন জীবনের সকল ঋণ। জনগণের ভালোবাসার বিনিময়ে দেশকে দিয়েছেন  স্বাধীনতা।  

১৯৪৭ সালে বাংলা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। হারিয়ে যায় বাঙালির পরিচয়। সেই হারিয়ে যাওয়ার পরিচয়কে তিনি উদ্ধার করে পাকিস্তানি ব্যারাক থেকে অকুতোভয় বাঙালির লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে। সেই যুদ্ধে ছিলেন লক্ষ লক্ষ আওয়ামী লীগের কর্মী, প্রায় তিন লাখ মুক্তিযোদ্ধা, ২ লক্ষ মা বোন যারা হারিয়েছিলেন সম্ভ্রম। আরও ছিল সাড়ে সাত কোটি বাঙালির স্বপ্ন ও সমর্থন।  

বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতার সংগ্ৰাম করেছে বাঙালি, এনেছে স্বাধীনতা, উড়িয়েছে বিজয়ের পতাকা। আমাদের সেই বিজয়ে প্রাণ দিয়ে যুদ্ধ করেছিল ভারতীয় সৈনিকেরা। সঙ্গে ছিলেন মহামতি ইন্দিরা গান্ধী। ঘাতকের বুলেটে প্রাণ দিয়েছেন ইন্দিরা গান্ধী, রাজীব গান্ধী। 

অনেক সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে রাজাকারদের দলে যোগ দেন মোশতাক, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, লেজেহোমো এরশাদ। কিন্তু বাঙালি তাদের স্বাধীনতার আকাশে আবার উড়িয়েছে পতাকা ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে।  কিন্তু দলের লোভী নেতারা যেমন মোশতাক, জিয়া ও এরশাদের হাত ধরে স্বাধীনতাকে জিম্মি করেছে তেমনি একদল সুশীল যারা ছিল ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে তারা আবার ক্ষমতায় বসায় জামায়াত-শিবির, রাজাকারদেরকে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে। জনতা যখন জেগে উঠে তখন সুশীলরা স্বাগত জানায় সেনা শাসন। ২০০৬ সালে তারা মাইনাস ফর্মুলা নিয়ে আসে। শিরোনাম ছিল মাইনাস টু - কিন্তু অন্তরে ছিল মাইনাস হাসিনা। বাঙালি সেদিন ভুল করেনি। সুশীলরা প্রথমে সফল হয়েছিল বিএনপিকে ভাঙতে। এরপর চেষ্টা চলে আওয়ামী লীগকে ভাঙতে। সুশীলদের সেই চেষ্টাকে ধুলিস্যাৎ করে দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক, জনতা। সেই শিক্ষকরা আজ আমলাদের দুই ধাপ নিচেয় স্থান পেয়েছে! বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন কমিশন গঠন করে স্থান করে দিয়েছিলেন শিক্ষকদেরকে। সেগুলো এখন আমলা পুনর্বাসন কেন্দ্রে পরিনিত হয়েছে।  

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন তাকে উৎখাতের ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি আরও বলেছেন কোথায় ছিল আওয়ামী লীগের নেতারা যখন ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলো। খুবই যৌক্তিক প্রশ্ন।  কোথায় ছিল আওয়ামী লীগ নেতারা যখন ১/১১ সরকার যখন মাইনাস হাসিনা প্রজেক্ট নিয়েছিল? আজ অনেকেই অনেক কাহিনী শোনান। কিন্তু সেসব কাহিনী দিয়ে যারা সুবিধা ভোগ করেন তারা কি এখনও সঠিক পথে আছেন? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৯৭৫ সালে যারা দল থেকে দূরে সরে গিয়েছিলো তারা কিন্তু আবার ফিরে এসেছে নতুন রূপে। তাদেরকে আপনি যে ভালোবাসা দিয়েছেন তার মূল্য কি দিচ্ছে? যাদের আপনি মন্ত্রী বানিয়েছেন তাদের আমলনামা কি আপনার কাছে নেই? আপনি কি তাদের ব্যাপারে সতর্ক আছেন কি? 

১৯৬৯ সালে গণ অভ্যুর্থানের নেতৃত্ব দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে মুক্ত করেছিলেন সেই তুখোড় ছাত্র নেতা জনাব তোফায়েল আহমেদকে দেখতে গিয়েছিলাম। তিনিই ডাকসুর নেতৃত্বে ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধু খেতাবটি বঙ্গবন্ধুকে দিয়েছিলেন। তাকে নিয়ে ষড়যন্ত্র হয়েছে অনেক। ১/১১ র সময় সুশীলরা তাকে টার্গেট করেছিলো।  তিনি কিন্তু তাদের ফাঁদে পা দেননি। সকলেই জানে রক্ষীবাহিনী প্রস্তুতি নিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদেরকে দমন, বিতাড়ন করতে। কারা রক্ষীবাহিনীকে  সেটা করতে দেয় নি? বঙ্গবন্ধু নেই তাই বলে বাংলাদেশ কি আবার পূর্ব পাকিস্তান হবে? যখন শুনলেন বাংলাদেশ বেতার থেকে রেডিও বাংলাদেশ হয়ে গেলো, জয় বাংলা থেকে জিন্দাবাদ হয়ে গেলো তখন ও কি উনারা বোঝেননি - আসলে আমাদের কি সর্বনাশ হতে চলেছে? জনাব তোফায়েল আহমেদ জয় বাংলার সঙ্গে যেমন আপোস  করেননি, তেমনি আপোস করেননি বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে ১/১১ র প্রলোভনে। দলকে অটুট রেখেছিলেন ষড়যন্ত্রের হাত থেকে।  পরাজিত হয়েছিল ১/১১ র কুশীলবরা। পরিত্যাজ্য হয়েছিল মাইনাস ফর্মুলা।  

আজ আবার সেই মাইনাস ফর্মুলা নিয়ে ঘুরছে দেশে বিদেশে ওই ১৯৭৫ সালের ঘাতক ও সুশীলদের শিষ্যরা। আর তাদেরকে লোভের বশবর্তী হয়ে সহযোগিতা করছেন দলের লোকেরাই। তারা বঞ্চিত করছে দলের ত্যাগী নেতাদেরকে হাইব্রিড আমদানি করে। লোভী হাইব্রিডদেরকে এখনই আলাদা করা এবং তাদেরকে মাইনাস করা হবে সঠিক সিদ্ধান্ত। সেটা না করলে ১৯৭৫ সালের মতই ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হবে। বাংলার স্বাধীনতা আবার শৃংখলিত হবে হায়েনাদের হাতে।  

মন্ত্রিসভার শুদ্ধি অভিযান জনগণের দাবিতে পরিনিত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সুযোগ আপনি অনেক দিয়েছেন সঠিক পথে চলবার জন্য। কিন্তু চোরে না শোনে ধর্মের কাহিনী। যে অর্জন বিগত ১৪ বছর আপনার নেতৃত্বে বাঙালি অর্জন করেছে ,তাকে খাদের কিনারে নিয়ে গেছে যারা তাদের এখন মাইনাস করবার সময় যদি মাইনাস ফর্মুলারকারীদেরকে পরাস্থ করতে হয়।  

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জনগণ আপনাকে বঙ্গবন্ধুর মতোই ভালোবাসে। জনগণ আপনাকে বাংলার নক্ষত্র মনে করে। সেটিই আপনার শক্তি। দলের ত্যাগী নেতারা যাতে আপনার থেকে অভিমানে দূরে সরে না যায়, সেজন্য আপনাকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। বঙ্গবন্ধু যাদেরকে বিশ্বাস করতেন তারাই বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেছিল। বঙ্গবন্ধু ভেবেছিলেন বাঙালি তার বুকে গুলি চালাতে পারবে না। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সেই বিশ্বাস ভুল প্রমাণিত হয়েছিল।  

আপনার সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গ করে বাণিজ্য করছে যারা, টাকা পাচার করছে যারা তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সময়ের দাবি। কাজল রেখা গল্পটা আমার মনে পড়ে।  যারা আপনাকে আগলে রেখেছে বছরের পর বছর তারাই আপনার কাজল রেখা। মোশতাকের পেতাত্মা আপনার কাছেই আছে বোধহয় - তাদের মাইনাস এর  জনদাবি আপনি মানবেন কি? 

১৯৬৯-৭১ ছাত্র নেতারা ছিল বঙ্গবন্ধুর শক্তি। ১/১১ র মাইনাস ফর্মুলা থেকে দেশকে বাঁচাতে ছাত্র -শিক্ষক কাঁধে নিয়েছিল জোয়াল। সেই জোয়াল আমলাদের কাঁধ থেকে সরিয়ে আবার জনতার কাঁধে ফিরিয়ে দেয়া হোক দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে। বরেণ্য রাজনীতিবিদ তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু ফিরে আসুক নেতৃত্বে।  

আজ দেখলাম এক মন্ত্রী নাকি ভারতের কাছে সুপারিশ করেছেন শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে। তিনি ক'দিন আগে বেহেস্ত তত্ত্ব দিয়ে সরকার ও দলকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছেন। ভারতের কাছে কেউ সুপারিশ করলেই শেখ হাসিনার সরকার টিকবে না - কারণ দেশের জনগণ ক্ষমতার মালিক। জনগণের শক্তি ও মর্যাদাকে ক্ষুন্ন করে যিনি এহেন অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন তাদের এই সব অর্বাচীন কথপোকথনে জাতি আবার বিব্রত! দ্রব্যমূল্য মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে চলেছে। সেই সময় ভর্তুকি প্ৰত্যাহার আরও সংকটে পড়েছে জনজীবন। এখন বরেণ্য নেতৃবৃন্দদেরকে জনগণ পাশে চায়। উন্নয়ন পরিকল্পনায় মৌলিক পরিবর্তন এর সঙ্গে সঙ্গে জনসংযোগ রুখে দেবে মাইনাস ফর্মুলা।  


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭