এডিটর’স মাইন্ড

কার পক্ষে খেলছেন মোমেন


প্রকাশ: 19/08/2022


Thumbnail

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন। তিনি ক্রমশ বিপজ্জনক হয়ে উঠেছেন। হঠাৎ বেহেস্ত পাওয়ার মতো করেই তিনি যেন মন্ত্রিত্ব পেয়েছিলেন। আগে সরকারি চাকরি করতেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেখান থেকে ভাইয়ের বদন্যতায় সিলেটের গুরুত্বপূর্ণ আসন থেকে তিনি মনোনয়ন পান। ২০১৮ এর নির্বাচনে তিনি বিজয়ী হন। কিভাবে বিজয়ী হয়েছেন সে আলোচনা এখানে প্রাসঙ্গিক নয়। কিন্তু প্রথমবার এমপি হয়েই তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। যে মন্ত্রণালয়কে ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত প্রণব মুখার্জি বলেছিলেন, রাষ্ট্রের একটি চোখ। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পর্শকাতর, গুরুত্বপূর্ণ এবং এর উপর নির্ভর করে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের নানা বিষয়গুলো। কিন্তু ড. মোমেন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করে আলোচিত-সমালোচিত হয়েছেন। কূটনীতিক ক্ষেত্রে তার সাফল্য কি আছে সেটা তিনি ভালো বলতে পারবেন। তবে বিতর্ক সৃষ্টি করা, বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটানো এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রের বিরক্তি উৎপাদনের ক্ষেত্রে তিনি যে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন এ নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই। ড. আব্দুল মোমেন একের পর এক বিতর্কিত বক্তব্য রেখেই চলেছেন। হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলেন, 'কূটনীতিতে প্রতিটি শব্দ অত্যন্ত মূল্যবান, প্রতিটি শব্দ এক একটি বোমার মতো। তাই এই শব্দ প্রয়োগে আমাকে সবসময় সচেতন থাকতে হয়।' অন্যদিকে আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এই বোমার যথেচ্ছ অপপ্রয়োগ করছেন। যখন যেভাবে পারছেন তখন সেভাবে কথা বলছেন। সর্বশেষ তিনি চট্টগ্রামে একটি অনুষ্ঠানে বলেছেন, ভারতে গিয়ে বলেছি শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম শহরের জে এম সেন হলে জন্মাষ্টমী উৎসব অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। সেই অনুষ্ঠানেই তিনি এরকম একটি বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। এই মন্তব্যের পর বাংলাদেশের রাজনীতি এবং কূটনীতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

এর ক'দিন আগেই তিনি দেশের মানুষ বেহেস্তে আছে বলে মন্তব্য করে তুমুল সমালোচিত হয়েছিলেন। তার পরপরই তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, আমারে তাে খায়া ফেলাইলেন। তারও আগে সুইজারল্যান্ড রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে অকূটনৈতিকসুলভ বক্তব্যের কারণে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিব্রত করেছিলেন। পরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নিজে সাংবাদিকদের বলেছেন, দু'দেশের সম্পর্কের মধ্যে কিছু ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিতর্কিত বক্তব্যের শেষ নেই। তিনি একসময় বলেছিলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর মতো। এটি নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা হয়। কিন্তু এখন যখন দেশে অর্থনৈতিক সঙ্কট চলছে, মানবাধিকার ইস্যু নিয়ে জাতিসংঘের এক ধরনের চাপ দৃশ্যমান হচ্ছে, তখন ড. মোমেন এই ধরনের বক্তব্য কেনো দিচ্ছেন? বিশেষ করে ভারত নিয়ে বক্তব্যটি ড. মোমেন এমন এক সময় দিলেন যখন প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে যাচ্ছেন। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে যাওয়ার কথা এবং সেখানে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে তার আনুষ্ঠানিক বৈঠক হওয়ার কথা। সেই বৈঠকের আগে ড. মোমেন ভারতকে নিয়ে এভাবে একটি বিব্রতকর বক্তব্য কেন দিলেন এই নিয়ে খোদ আওয়ামী লীগের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে। আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, তিনি কার পক্ষে খেলছেন? তার যে বক্তব্যগুলো একের পর এক দিচ্ছেন সেই বক্তব্যের তিনটি কারণ থাকতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। 

প্রথমত, তিনি অযাচিতভাবে না বুঝে শিশুসুলভ বালখিল্যতার কারণে এ ধরনের বিপজ্জনক শব্দ বোমা ছুরছেন। তবে এরকম বালখিল্যতা একটা দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বারবার দেখাবেন এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। দ্বিতীয় কারণ হতে পারে, তিনি আলোচনায় থাকার জন্য বারবার এসব বিতর্কিত বক্তব্য দিচ্ছেন। কিন্তু আলোচনায় থাকার জন্য অন্য কিছুও বলা যায়, কিন্তু বিতর্কিত বক্তব্য বলে একজন মানুষ আলোচনায় থাকতে চায় এটিও খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। কেউ কেউ মনে করছেন যে, সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য বা সরকারকে অসুবিধায় ফেলার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ ধরনের বক্তব্য ইচ্ছাকৃতভাবে দিচ্ছেন। কারণ অতীতেও দেখা গেছে, সরকারের ভেতরে যে সমস্ত চাটুকাররা অতিকথন করেছে, এই অতিকথনের কারণে সরকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেনের এখনকার বক্তব্যগুলো দেখে মনে পরে যায়, প্রয়াত পার্লামেন্টিরিয়ান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সংসদে বলেছিলেন,'মন্টু মাঠে নেমেছে। দু'পক্ষের গোলকিপাররাই সাবধান। কারণ মন্টু যেকোনো পক্ষেই গোল দিতে পারে।' মন্টু অপ্রকৃতস্থ ছিল। আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অপ্রকৃতস্থ নয়। কারণ অপ্রকৃতস্থ কোনো ব্যক্তি সংসদ সদস্য হতে পারে না। কিন্তু তিনি যে কথাগুলো বলছেন সেই কথাগুলো কোনো সুস্থ মানুষ বলতে পারে কিনা সেই প্রশ্ন উঠেছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসলে কি স্রেফ কথার ছলে এইসব কথা বলছেন নাকি এর পিছনে কারো ইশারা-ইঙ্গিত আছে? তিনি আসলে কার পক্ষে খেলছেন এটি এখন রাজনীতিতে বড় প্রশ্ন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী একের পর এক বিতর্কিত মন্তব্য করেন এবং পরে তিনি সেই দায়ভার গণমাধ্যমের ওপর চাপিয়ে দেন। চট্টগ্রামে দেওয়া বক্তব্যের পরদিন টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বললেন যে, গণমাধ্যম তার বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে। সবাইকে তিনি সংযত থাকার আহ্বান জানালেন। এর আগেও তিনি অন্যান্য দেশের তুলনায় আমরা বেহেস্তে আছি এই বক্তব্য দেওয়ার পর গণমাধ্যম তার বক্তব্য টুইস্ট করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেছিলেন। তাহলে কি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাজ হলো বারবার তিনি অযাচিত বক্তব্য দেবেন এবং সেই বক্তব্য দিয়ে যখন সমালোচিত হবেন তখন তার সব দায় গণমাধ্যমের ওপর চাপিয়ে দেবেন?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭