ইনসাইড পলিটিক্স

খালেদার জন্য নির্বাচনে যাবে বিএনপি?


প্রকাশ: 19/08/2022


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি যাবে কি যাবে না, সেটি কোটি টাকার প্রশ্ন। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা কোনো নির্বাচনে যাবে না। আর নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ের জন্য তারা আন্দোলনে যাবে, প্রয়োজনে সকল দলকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিএনপি এই দাবিতে তাদের পাশে কাউকে পায়নি, ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনও গড়ে ওঠেনি। অন্যদিকে, বিএনপির কোনো কোনো নেতা বলছেন যে, আমরা সরকারের পতন ঘটাতে চাই, সরকারের পতনের পর আমরা নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করবো এবং সেই সরকারের অধীনে একটি নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা জাতীয় সরকার গঠন করবো। বিএনপির এই সমস্ত বক্তব্যের আড়ালে সরকারের সঙ্গে দেন-দরবারের খবরও পাওয়া যাচ্ছে। বিএনপির সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন মহলের কয়েকদফা বৈঠক হচ্ছে এবং নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে বলেও জানা গেছে।

সরকারের একাধিক সূত্র দাবি করেছে যে, শেষ পর্যন্ত বিএনপি আসবে এবং বিএনপি যেন নির্বাচনে আসে তার ট্রাম্পকার্ড আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে আছে। ট্রাম্পকার্ডটা কি, জানতে চাওয়া হলে সরকারের একাধিক ব্যক্তি বলেছেন যে, এই ট্রাম্পকার্ড হলো বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপির পক্ষ থেকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে আসা হচ্ছিলো। বলা হচ্ছিলো যে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি না দিলে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তোলা হবে। বেগম খালেদা জিয়ার এই মুক্তি দেয়া না দেয়া নিয়ে যে রাজনীতি, সে রাজনীতিতে বিএনপি কখনোই বিজয়ী হতে পারেনি। বরং যখন বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয় দুর্নীতির মামলায়, তখন বিএনপির সকলে মনে করছিলো যে, সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে বেশিদিন আটকে রাখতে পারবে না। কিন্তু দুই বছর বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে থাকতে হয়েছে। এই সময়ে বিএনপি বেগম খালেদা জিয়ার জন্য রাজপথে আন্দোলন করতে পারেনি। এমনকি আইনি লড়াইয়েও পরাজিত হয়েছে। পরে দেশে করোনা প্রকোপ শুরু হওয়ার পর ২০২০ সালের মার্চে বেগম খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে বিশেষ বিবেচনায় জামিন দেয়া হয়। এখন তিনি ফিরোজায় অবস্থান করছেন। ছয় মাস অন্তর অন্তর এই জামিন বাড়ানো হয়। বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার জন্য একাধিক আবেদন করা হয়েছে। আইনমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন যে, এই আবেদন গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, আইনসম্মত নয়। আইনমন্ত্রী এটিও জানিয়েছেন যে, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ যেতে হলে আবার জেলে যেতে হবে, সেখান থেকে নতুন করে আবেদন করতে হবে। এরকম টানাপোড়েনের মধ্যেই আগামী নির্বাচনের আগে বেগম খালেদাকে তুরুপের তাস হিসেবে ব্যবহার করতে চায় সরকার।

বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ যাওয়ার অনুমতি দিলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে, এরকম একটি সমীকরণের মধ্যেই এখন সংলাপ এগোচ্ছে বলে জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির এখন প্রধান এজেন্ডা নির্বাচন নয় এবং বিএনপি জানে যে নির্বাচনে যাওয়ার পরও বিএনপিকে অনেকগুলো বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে। তাই নির্বাচন নিয়ে বিএনপির মধ্যে কোনো ভাবনা নেই। বিএনপির একজন নেতা বলেছেন যে, নির্বাচনে যদি আমরা জয়ী হই আমাদের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন? কারণ, বেগম খালেদা জিয়ার এখন প্রধানমন্ত্রী হওয়া সাংবিধানিকভাবে অযোগ্য। একই অবস্থা তারেক জিয়ার ক্ষেত্রে। তারেক জিয়ার যে মামলাগুলো রয়েছে তিনি যদি দেশে আসেন তাকে প্রথমে জেলে যেতে হবে এবং তারপর এই মামলাগুলোর আইনি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হতে হবে। তাই বেগম জিয়া, তারেক জিয়া বা জিয়া পরিবারের কেউই চান না এখন নির্বাচনে বিএনপি জয়ী হোক। বরং সরকারের সঙ্গে যদি দেন-দরবার করে বেগম জিয়ার মুক্তি, তারেক জিয়ার দেশে ফেরা ইত্যাদি বিষয়গুলো ফয়সালা করা যায় তাহলে সেটি বিএনপির জন্য পরবর্তী নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক ফল দেবে বলে বিএনপির কোনো কোনো নেতা মনে করছেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, খালেদা জিয়াকে নির্বাচনের আগে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর ইস্যুটি সরকার বিবেচনা করতে পারে। যদি বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয় তাহলে তার বিনিময়ে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি সরকার দিতে পারে বলে দিতে পারে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে এবং এটিই হবে নির্বাচনের আগে সরকারের সবচেয়ে বড় চমক। কিন্তু তারেক জিয়ার ব্যাপারে সরকারের সুনির্দিষ্ট আপত্তি রয়েছে। তারেক জিয়ার ব্যাপারে সরকার কোনোরকম ছাড় দিতে রাজি নয়। আর এ কারণেই খালেদা জিয়ার বিনিময়ে নির্বাচন, এই ফর্মুলায় তারেক সম্মত হবেন কিনা সেটাই দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭