ইনসাইড বাংলাদেশ

যেভাবে ক্ষমতায় যেতে চায় সুশীলরা


প্রকাশ: 19/08/2022


Thumbnail

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটের বাংলাদেশ সফরের পর সুশীলরা এখন উল্লসিত। তারা মনে করছে, তারা ক্ষমতার সিঁড়ি পেয়ে গেছে। ক্ষমতায় যাওয়ার টানেলের আলো দৃশ্যমান বলেও সুশীল সমাজের কেউ কেউ উল্লাস প্রকাশ করছেন। এ উল্লাস দেখা যায় সুশীল সমাজ নিয়ন্ত্রিত দুটি প্রথম শ্রেণীর দৈনিকে। একটি বাংলা এবং একটি ইংরেজি, এই দুইটি দৈনিকে এ নিয়ে সম্পাদকীয় লেখা হয়েছে এবং তাতে বলা হয়েছে যে, মিশেলের যে প্রস্তাব তা অগ্রাহ্য করলে তাতে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হতে পারে। অন্যদিকে, দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম তার থার্ড ভিউতে বলেছেন যে, জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধানের পরামর্শগুলো খুব ইমর্পোটেন্ট, এগুলো বাস্তবায়ন করুন। তিনি তাঁর কলামে এটিও বলেছেন, যেকোনো সরকারই আত্মসমালোচনার জন্য ক্ষমতা হারায়নি। এই বক্তব্য গুলো থেকে বুঝা যায় যে, সুশীলরা যেভাবে প্রত্যাশা করেছিলো ঘটনা সেভাবেই ঘটেছে। সুশীলরা এখন ক্ষমতার টানেলে প্রবেশ করেছে। ক্ষমতায় যাওয়ার পথের সন্ধান তারা পেয়েছে বলেই কেউ কেউ মনে করছেন। কিভাবে সুশীলরা ক্ষমতায় যেতে চায়? সুশীল সমাজের একাধিক প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করে দেখা গেছে, তারা পাঁচটি সিঁড়ি অতিক্রম করে ক্ষমতার মসনদে বসার পরিকল্পনা করছে।

এই ৫টি সিঁড়ির প্রথমটি হলো, দেশের অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে জনমনে এক ধরনের আতঙ্ক সৃষ্টি করা। দেশের অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে ইতোমধ্যে সুশীল সমাজ প্রচন্ডভাবে মাঠে নেমেছে এবং বিরামহীনভাবে তারা বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা হবে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট ভয়ঙ্কর হয়ে যাচ্ছে ইত্যাদি কথাবার্তা গণমাধ্যমে বলছে। সরকার যে বিপুল পরিমাণ টেলিভিশন এবং সংবাদপত্রের অনুমতি দিয়েছে সেই সংবাদপত্র এবং টেলিভিশনগুলো এখন সুশীল সমাজের পদভারে মুখরিত। তাদের কথাই এখন প্রধান শিরোনাম হিসেবে দেশের প্রায় সব মূলধারার গণমাধ্যমে উঠে আসছে। যদিও বিশ্বব্যাংক এবং আইএমএফ বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে উন্নত বলছে। এমনকি, গতকালও বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশের কোনো খাদ্য সংকট হবেনা। কিন্তু সুশীলরা যেকোনো ভাবেই বাংলাদেশকে অসুস্থ বানানোর এক মিশনে নেমেছেন। লক্ষণীয় যে, সুশীলরা বারবার করে বলছেন যে, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট দৃশ্যমান হবে আগামী দেড় থেকে দুই বছরের মধ্যে। অর্থাৎ নির্বাচনের আগে দেশ রসাতলে, এই একটি আওয়াজ যেন সর্বব্যাপী হয় তার নিশ্চিত করার কাজ করছে সুশীল সমাজ।

সুশীল সমাজের দ্বিতীয় লক্ষ্য হলো, সবগুলো রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা। বিএনপির সঙ্গে সুশীলদের কথাবার্তা হচ্ছে। বিএনপিকে তারা কিছু না করে নির্বাচন থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এখন জাতীয় পার্টির সঙ্গেও সুশীলদের কথা হয়েছে এবং জাতীয় পার্টি এখন ভিন্ন সুরে কথা বলছে। জিএম কাদেরের সঙ্গে একাধিক সুশীল প্রতিনিধি এমনকি ড. ইউনূসের কথা বলার খবর পাওয়া গেছে এবং তারা জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনে না যাওয়ার জন্য বলেছে। সুশীলদের কৌশল হলো দেশের সব রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে এই নির্বাচনে আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা পাবে না। তার ফলে সরকারের ওপর আন্তর্জাতিকভাবে নানারকম স্যাংশন এবং চাপ আসতে পারে।

ক্ষমতায় যাওয়ায় সুশীলদের তৃতীয় সিঁড়ি হলো যে, তারা যেকোনো মূল্যে মানবাধিকার পরিস্থিতিকে আন্তর্জাতিক ইস্যুতে পরিণত করতে চায়। বাংলাদেশের মানবাধিকার গভীর সংকটে, গুম, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ নানা মানবাধিকারের বক্তব্যগুলো দীর্ঘদিন ধরে সুশীলরা যেটা দিচ্ছিলো তা এখন পুঞ্জিভূত হয়েছে মিশেল ব্যাচেলেটের বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে। সুশীলরা মনে করছে যে, জাতিসংঘ যে পরামর্শগুলো দিয়েছে, সেই পরামর্শ সরকার গ্রহণ করবে না। আর সরকার যদি এই পরামর্শগুলো গ্রহণ না করে, সেক্ষেত্রে সুশীলরাই লাভবান হবে। তখন জাতিসংঘ বাংলাদেশের ওপর নানা রকম চাপ প্রয়োগ করা অব্যাহত রাখবে। যেটি সরকারকে নির্বাচনের আগে বিব্রত করবে।

চতুর্থত, রাজনৈতিক সহিংসতা। দেশে যেন একটা রাজনৈতিক সহিংসতা তৈরি হয়, সেজন্য সুশীলদের নিয়ন্ত্রিত রাজনীতিবিদদেরকে উস্কে দেওয়া হচ্ছে। তারা নানা রকম কথাবার্তা, বিতর্ক তৈরি করে রাজনৈতিক উস্কানি দেয়ার চেষ্টা করছেন। যদিও প্রধানমন্ত্রী সুস্পষ্টভাবে বলেছেন যে, বিরোধী দল যদি আন্দোলন করতে চায় তাদেরকে বাধা দেওয়া হবে না। কিন্তু সুশীলদের যে নেটওয়ার্ক সে নেটওয়ার্কে তারা এ ধরনের কর্মকাণ্ড গুলোকে অব্যাহত যদি রাখে, তাহলে ভবিষ্যতে যে আওয়ামী লীগ-বিএনপির রাজপথে লড়াই হবে না তা নিশ্চিত করে বলা যায় না।

পঞ্চম, নির্বাচন ভণ্ডুল এবং ক্ষমতা আহরণ। সুশীলদের ক্ষমতা আহরণের শেষ ধাপ হলো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ভণ্ডুল করা। যদি অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ না করে এবং নির্বাচনের আগে যদি সহিংসতা দানা বেঁধে ওঠে, তাহলে জাতিসংঘ হস্তক্ষেপ করবে এবং তখনই সুশীলদের ক্ষমতায় যাওয়ার দরজা খুলে যাবে বলে সুশীল সমাজ মনে করছে। এই পরিকল্পনায় এগুনো সুশীলদেরকে সরকার কিভাবে হারাবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭