কালার ইনসাইড

ঢাকাই সিনেমায় নয়া ভিলেনের কেতন


প্রকাশ: 19/08/2022


Thumbnail

চলচ্চিত্রে একজন খলনায়ক অভিনেতা একজন নায়ক বা নায়িকাদের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। শুধু বাংলাদেশের সিনেমাতেই নয়, বিশ্বের সব ধরণের ভাষার চলচ্চিত্রের একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে খলনায়কের অভিনয়। ঢালিউডের  সূচনালগ্ন থেকে বাংলা সিনেমায় খলনায়কদের খুব গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে দেখা হতো। কিন্তু নির্মম সত্য যে বেশ লম্বা সময় ঢাকাই সিনেমাতে আর তেমন ভালো মানের খলনায়ক দেখা যায় না।

হুমায়ুন ফরিদী, রাজীব,নাসির খান,মিজু আহমেদ, খলিল, এটিএম শামসুজ্জামান, আহমেদ শরীফ, সাদেক বাচ্চু,  ডিপজল,মিশা সওদাগর, যারা একটা লম্বা সময় চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তবে তাদের মাঝে আজ অনেকেই পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে গিয়েছেন। হাতে গোনা কয়েকজন চলচ্চিত্রকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন অনেক দিন ধরে।  তিন দশক ধরে মিশা সওদাগর, ডনসহ আরও কয়েকজনকে খল চরিত্রে অভিনয়ে দেখা গেলেও ইদানীং নতুন কয়েকজন খল চরিত্রে ভালো করছেন।

রাশেদ মামুন অপু

সিনেমা কিংবা ওয়েব কনটেন্টে নতুন খল অভিনেতা হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন রাশেদ অপু। ‘নবাব এলএলবি’তে প্রথম তাঁকে খল চরিত্রে দেখা গেছে। এর পর ‘জানোয়ার’, ‘দামাল’, ‘কসাই’, ‘অমানুষ’ ছবিতে তিনি খল চরিত্রে নজর কাড়েন। তাঁর অভিনীত আরও আট থেকে দশটি সিনেমা মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। এখন নেতিবাচক চরিত্রে নির্মাতাদের ভরসার নাম তিনি। অভিনয়ের প্রথম দিকে আঞ্চলিক ভাষায় কমেডি চরিত্রে দর্শকদের হাসির খোরাক জুগিয়েছেন। এখন পর্দায় ‘খারাপ মানুষ’ হয়ে প্রশংসা কুড়াচ্ছেন। খল চরিত্রে অভিনয় বেশ উপভোগ করেন বলেই জানালেন তিনি। এ ধরনের চরিত্রে বৈচিত্র্য বেশি, দর্শকের প্রতিক্রিয়াও ভালো। তাই তিনিও বেশ আশাবাদী। ভিলেনদের দর্শকেরা যে জায়গা থেকে দেখে এসেছেন, সেখানে নতুন কিছু করে তাঁদের মনে জায়গা করে নেওয়া কঠিন বলেও মনে করছেন অপু। তিনি বলেন, ‘নতুনত্ব আনার চেষ্টা করছি। দীর্ঘদিন নাটকে পার্শ্ব অভিনেতার চরিত্র করেছি। যখন “নবাব এলএলবি” সিনেমায় প্রধান খল চরিত্রে সুযোগ পেলাম, অভিনয় করলাম, মনে হলো, এটাই আমার জায়গা।’

নাসির উদ্দিন খান

ওয়েব কনটেন্টের কল্যাণে নাসির উদ্দিন খান এখন পরিচিত মুখ। চট্টগ্রামের তীর্যক নাট্যগোষ্ঠীর সদস্য নাসির মঞ্চনাটকেই কাটিয়ে দিয়েছেন জীবনের বেশির ভাগ সময়। একসময় চাকরি করেছেন। কিন্তু অভিনয়ের ধ্যান তাঁকে এতটাই আচ্ছন্ন করে রেখেছিল, চাকরি ছেড়ে চলে আসেন ঢাকায়। চট্টগ্রামে থাকা অবস্থায় ২০১৪ সালে ওয়াহিদ তারিকের ‘আলগা নোঙর’ সিনেমায় অভিনয় করেন, আর দুটি টিভি নাটক ও পাঁচ-ছয়টি টেলিফিল্ম। ঢাকায় এসে ধীরে ধীরে নাসিরের ব্যস্ততা বাড়তে থাকে। ‘মহানগর’ ওয়েব সিরিজে অভিনয় করে পরিচিতি পান। এরপর নেতিবাচক চরিত্রে বড় চমক দেখান ‘বলি’ সিরিজে। ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘পরাণ’ ও মুক্তি প্রতীক্ষিত ‘হাওয়া’ সিনেমায়ও আছেন তিনি। শান্ত অথচ ভীষণ নিষ্ঠুর—দেশের শোবিজে খল চরিত্রে অন্য মাত্রা যোগ করেছেন নাসির।

সুমন আনোয়ার

টিভি নাটক নির্মাণ করে পরিচিতি পেয়েছেন সুমন আনোয়ার। তবে তাঁর শুরুটা হয়েছিল মঞ্চে অভিনেতা হিসেবে। পরবর্তী সময়ে কিছু টিভি নাটকেও অভিনয় করেন। নির্মাতা হিসেবে ব্যস্ত হওয়ায় অভিনয়ে আর পাওয়া যায়নি সুমন আনোয়ারকে। ইদানীং আবারও অভিনয়ে সরব হয়েছেন সুমন। বিশেষ করে খল চরিত্রে প্রশংসা পাচ্ছে তাঁর অভিনয়। রায়হান রাফীর ওয়েব ফিল্ম ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’ ও ‘সাত নাম্বার ফ্লোর’ সিরিজ ছাড়াও সুমন আনোয়ার দেখা দিয়েছেন সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘কাইজার’ সিরিজে। মুক্তি প্রতীক্ষিত ‘হাওয়া’ সিনেমায়ও গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আছেন তিনি। নেতিবাচক চরিত্রে তাঁর স্বতঃস্ফূর্ত অভিনয় দর্শকদের প্রশংসা পাচ্ছে।

শাহেদ আলী

মঞ্চ, টিভি নাটক ও চলচ্চিত্রে দীর্ঘদিন ধরে অভিনয় করছেন শাহেদ আলী। চিত্রনাট্যে খানিকটা অন্য রকম চরিত্র এলেই নির্মাতারা খোঁজেন তাঁকে। দীর্ঘ অভিনয়জীবনে অনেক ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাহেদ আলী। পেয়েছেন প্রশংসা। তবে গত কয়েক বছর তিনি আরও ব্যাপকভাবে পরিচিতি পেয়েছেন নেতিবাচক চরিত্রে অভিনয় করে। ‘মহানগর’, ‘দৌড়’ ও ‘রিফিউজি’ ওয়েব সিরিজগুলোতে তাঁর অনবদ্য অভিনয়ের প্রমাণ পাওয়া যায়। এ ছাড়া শাহেদ আলী নেতিবাচক চরিত্রে কাজ করেছেন ‘এবার তোরা মানুষ হ’, ‘চিৎকার’, ‘প্যারাসাইকোলজি’, ‘অমানুষ’, ‘পাষাণ’ ও ‘কালের পুতুল’ সিনেমায়। ‘পুনর্জন্ম’সহ অনেক নাটকেও এ ধরনের চরিত্রে অভিনয় করেছেন তিনি। শাহেদ আলী বলেন, সব ধরনের চরিত্রে তো সব সময় কাজ করার সুযোগ হয় না। ডিফরেন্ট কোনো ক্যারেক্টর হলে নির্মাতারা আমাকে ডাকেন। ডার্ক শেড বা অলটারনেটিভ চরিত্রের মধ্য দিয়ে নিজেকে ভাঙার সুযোগ হয়। এটা বেশ এনজয় করি।

ফারহান খান রিও

মডেলিংয়ের মাধ্যমে শোবিজে ক্যারিয়ার শুরু করেন রিও। অভিনয় করেছেন মিউজিক ভিডিও ও টিভি নাটকে। অনন্য মামুনের পরিচালনায় ‘কসাই’ সিনেমায় খল চরিত্রে প্রথম দেখা যায় রিওকে। এরপর তিনি অভিনয় করেন একই নির্মাতার ‘অমানুষ’ ও ‘সাইকো’ সিনেমায়। দরাজ কণ্ঠস্বর ও স্বতঃস্ফূর্ত পর্দা উপস্থিতির কারণে তরুণ ভিলেন হিসেবে প্রশংসা পাচ্ছেন রিও। তিনি নিজেও চান ভার্সেটাইল অভিনেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে। ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘সাইকো’ সিনেমায় তাঁর অনবদ্য পারফরম্যান্স দর্শকদের মন জয় করেছে। নির্মাতারাও নতুন করে ভাবছেন রিওকে নিয়ে।

রোজী সিদ্দিকী

ঢাকাই সিনেমায় পুরুষদের পাশাপাশি ছিল নারী ভিলেনদেরও আধিপত্য। রওশন জামিল, মায়া হাজারিকা, সুমিতা দেবী, রিনা খান কিংবা শবনম পারভীন—একসময় পর্দায় ছিলেন মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। এখন বাংলা সিনেমার গল্পের নারী ভিলেনরা অনেকটাই নিষ্প্রভ। তবে এ ধরনের চরিত্রে অভিনয় করে সম্প্রতি তাক লাগিয়েছেন রোজী সিদ্দিকী। ঈদে মুক্তি পাওয়া ‘পরাণ’ ও ‘সাইকো’ সিনেমায় প্রশংসিত হচ্ছে তাঁর অভিনয়। রোজী সিদ্দিকী বলেন, খল চরিত্রে আরও বেশি কাজ করতে চাই। ৩২ বছর ধরে অভিনয় করছি। আমার মনে হয়, খল ও কমেডি চরিত্রের মতো কঠিন অভিনয় আর হয় না।

খান সীমান্ত

‘নবাব এলএলবি’র খল চরিত্রে অভিনয় করে নজর কাড়েন এল আর খান সীমান্ত। ছিলেন মডেল। কিন্তু টার্গেট ছিল সিনেমা, চেয়েছিলেন ভিলেন হতে। ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। অনন্য মামুনের ‘সাইকো’তেও তাঁকে খল চরিত্রে দেখা গেছে। তাঁকে খল চরিত্রে দারুণ মানায় বলে মনে করছেন তাঁর সঙ্গে কাজ পরিচালকেরা। সীমান্ত সময়ের ব্যস্ততম খল অভিনেতাদের একজন। মুক্তির অপেক্ষায় আছে তাঁর ছবি ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘ক্যাসিনো’, ‘লিডার: আমিই বাংলাদেশ’, ‘রিভেঞ্জ’, ‘মাসুদ রানা’ ইত্যাদি। সীমান্ত বললেন, ‘সব কটি ছবিতে নেগেটিভ চরিত্রে কাজ করেছি। শুরু থেকেই ভিলেন চরিত্র টানত। অনেক আগে একটা নাটকে কাজ করেছি। সেখানেও নেগেটিভ চরিত্র ছিল। ছোটবেলা থেকে সিনেমা দেখলে নেগেটিভ চরিত্রগুলো বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হতো। তাই খল চরিত্রে অভিনয় করে আনন্দ পাচ্ছি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭