ইনসাইড আর্টিকেল

টাংগুয়ার হাওরের বিলাসবহুল বজরা


প্রকাশ: 20/08/2022


Thumbnail

বজরা! যা এক সময় জমিদার এবং প্রভাবশালীদের যাতায়াতের জন্য শখের বাহন ছিলো। জমিদার আমলে কুষ্টিয়ার শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়িতেও ছিলো  রবিঠাকুরের শখের বজরা নৌকা। রবিঠাকুর এই বজরাতেই রাত্রিযাপন করতেন, অবসরে ঘুরে বেড়াতেন পদ্মা-গড়াই নদীর বুকে। ঐতিহ্যবাহী এই বজরায় বসেই কবিগুরু নদীর শান্ত-শীতল টলটলে পানি ও বাংলার অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থেকেছেন, লিখেছেন কত-শত বিখ্যাত কবিতা। এছাড়াও ভারতের কাশ্মীর কিংবা কেরালাও বজরা বা হাউজবোটের জন্য ছিলো বেশ বিখ্যাত। তাই বাংলাদেশ থেকেও অনেক পর্যটক ভারতে যেতেন ভ্রমণে। তবে আমাদের দেশ নদীমাতৃক দেশ হওয়ার সত্ত্বেও সময়ের বিবর্তনে হারিয়ে গিয়েছিলো ঐতিহ্যবাহী বজরা নৌকা।

বর্তমানে সেই ঐতিহ্যকে আকড়ে ধরতেই বজরার দেখা মিলছে সুনামগঞ্জের হাওরের বুকে। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে হাওরে এই বজরার হাউজ বোটের যাত্রা শুরু হয়েছে।  তবে এটা এখন কোনো জমিদার বা প্রভাবশালী ব্যাক্তিদের জন্য নয়, এটা এখন প্রকৃতিপ্রেমী ও ভ্রমণবিলাশী মানুষদের জন্য। যার মাধ্যমে টাঙ্গুয়ার হাওর, নিলাদ্রী লেক, টেকেরঘাট, বারেকাটিলা, শিমুল বাগান অনায়াসে ঘুরে আসতে পারবেন। যা অন্য কোনো নৌযান বা বোটের মাধ্যমে সম্ভব নয়। সব থেকে বড় কথা হলো বজরায় রয়েছে আধুনিকতার ছোয়া।



বজরায় ঢুকতেই আপনার নজরে পড়বে কাঠের ফ্রেমে বসানো অ্যাক্রিলিকের দরজার। আর ভেতর দিয়ে লবি ও হলওয়েসহ ভেতরটা সম্পূর্ণ দেখে নিতে পারবেন। বজরার লবিতে বসে আপনি উপভোগ করতে পারবেন সূর্যাস্ত। একইসঙ্গে হাওরের অপরুপ সৌন্দর্য্য এবং দূরের সারি সারি পাহাড়-পর্বত সব মিলিয়ে আপনাকে বজরা এক নৈসর্গিক অনুভূতি দিবে। এমন একটা জায়গায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে কার না ইচ্ছে করে। 

বজরা চওড়ায় ১৪ ফুট এবং এর প্রতিটি কেবিনে একটি করে জানালা রয়েছে। বজরায় রয়েছে জেনারেটর, যা দিয়ে বজরায় ভ্রমণকারীদের প্রতিটি কেবিনে একটি করে এলইডি লাইট, ছোট ফ্যান এবং তিন-পোর্টের চার্জিং সকেটের ব্যবস্থা রয়েছে। বজরায় লাইফজ্যাকেট এবং টিউবের ব্যবস্থাও আছে। তাই আপনি চাইলেই সেখান থেকে হাওরের পানিতে সাঁতার কাটতে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারবেন।

এছাড়াও পূর্বে যারা টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণ করছেন তারা অনেকেই জানেন যে, সেখানে ভ্রমণকালে সন থেকে বেশি সমস্যায় পড়তে হতো ওয়াশরুম নিয়ে। তবে বজরায় ওয়াশরুমের সু-ব্যবস্থা রয়েছে। ওয়াশরুমে রয়েছে  হাই-কমোড এবং ওয়াশবেসিনও।

বজরায় ভ্রমণে যেসব স্থান উপভোগ করতে পারবেন-

দুই দিনের ট্রিপে বজরা টাঙ্গুয়ার হাওরজুড়ে ঘুরে বেড়াবে এবং রাতে এটি জাদুকাটা নদীতে ভিড়ানো থাকবে।  

পরদিন বজরা তাদের অতিথিদের বারিক্কা টিলা, ওয়াচ টাওয়ার এবং চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য্যের শহীদ সিরাজ লেক ঘুরিয়ে দেখাবে।  



বজরায় খাবার ব্যবস্থা-

বজরায় হাওরের মাছ ও হাঁসের মাংস রান্না, টাটকা শাকসবজি এবং নানা পদের ভর্তা খাওয়ার সুযোগও থাকছে। এর বাইরে, আলোচনা সাপেক্ষে আপনার পছন্দ অনুযায়ী খাবারের মেনুও তারা তৈরি করে দিবে।

বজরার ভ্রমণ খরচ-

বজরায় যেহেতু সুব্যবস্থা রয়েছে তাই চাহিদাও মোটামুটি বেশি থাকে। আগে থেকেই অনেকে বুক দিয়ে রাখে। অনলাইনে বুকিংয়ের ব্যবস্থা আছে। তাই বজরায় থাকতে চাইলে অন্তত কয়েক সপ্তাহ আগেই আপনাকে বুকিং দিতে হবে।

সপ্তাহের সাধারণ দিনগুলোতে মৌসুমভেদে বজরায় থাকার খরচ কমে আসতে পারে। ছুটির দিনে বজরায় ৪০ ঘণ্টার ট্রিপের জন্য ১২ সদস্যের একটি দলের প্রতিজনের খরচ পড়বে ৬,০০০ টাকা। তবে ১৫-২০ জনের দলের ক্ষেত্রে খরচ কমে ৫,০০০ টাকায় দাঁড়াবে।  

যদি শহরের কোলাহল এবং কর্মব্যস্ত জীবন থেকে খানিকটা মুক্তি পেতে চান। যদি প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে চান, ভেসে যেতে চান হিম-শীতল পানিতে, তাহলে এর উপযুক্ত জায়গা হলো সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর। আর সুনামগঞ্জের পর্যটন কেন্দ্রকে এক ধাপ উর্ধ্বে নিয়ে গেছে এই বজরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭