ইনসাইড আর্টিকেল

যে দ্বীপে যাবার কথা স্বপ্নেও কল্পনা করা যায় না


প্রকাশ: 21/08/2022


Thumbnail

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার ব্রাজিলের এক দ্বীপ। গাছপালা আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এতটাই যে যেকোনো ভ্রমণপ্রেমী মানুষের কাছে এই দ্বীপ লোভনীয় হয়ে উঠতে পারে৷ কিন্তু ব্রাজিলের এই দ্বীপে মানুষের প্রবেশ নিষিদ্ধ। কেউ এই দ্বীপে গেলে বেঁচে আসার সম্ভাবনাও খুব ক্ষীণ। 

আমরা কথা বলছি, ব্রাজিলের অত্যন্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দ্বীপ ‘লা দ্যা কুইমাদা গ্রানদে’ এর কথা। এই দ্বীপে মানুষের প্রবেশ নিষেধ এখানে থাকা অত্যন্ত বিষধর সাপের কারণে। সাধারণ সাপের উপদ্রব হলে হয়ত এই দ্বীপ এত আলোচিত হতো না। কিন্তু এই দ্বীপের সাপের বিষ সাধারণ সাপের চেয়ে প্রায় পাঁচগুণ বেশি যা একটা মানুষকে সাপ কামড়ানোর কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তার মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য যথেষ্ট।  স্থানীয়দের মধ্যে এই সাপদের নিয়ে আতংক বিরাজ করে এবং মৃত্যু ঝুঁকি থাকার কারণেই এই দ্বীপে কোনো মানুষ থাকতে পারে না। নানা প্রজাতির সাপের বসবাস এবং বিচরণের কারণে এই দ্বীপের প্রচলিত নাম স্ন্যাক আইল্যান্ড। 


 ব্রাজিলের বৃহত্তম শহর সাও পাওলো থেকে প্রায় ৯৩ মাইল দূরে লা দ্যা কুইমাদা গ্রানদে দ্বীপটির অবস্থান। প্রায় ১১০ একর এলাকা জুড়ে দ্বীপটি বিস্তৃত। আর এই পুরো দ্বীপ জুড়ে নানা বিষধর সাপের বসবাস। গবেষকদের মতে, এই দ্বীপে প্রতি বর্গফুটে পাঁচ থেকে ছয়টি সাপের বিচরণ লক্ষ্য করা যায়। এই দ্বীপ আগে ব্রাজিলের মূল ভূখন্ডের সাথে যুক্ত ছিল। ধারণা করা হয় সমুদ্র তলে পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার কারণে এই দ্বীপ ব্রাজিলের থেকে আলাদা হয়ে যায় এবং বিপুল পরিমাণ সাপ এই দ্বীপে আটকা পরে। কিন্তু স্থানীয় লোকেদের অনেকেই পৌরাণিক গল্প কাহিনী অনুসারে বিশ্বাস করেন এই অঞ্চলে বহু আগে কোনো এক জলদস্যু বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদ রেখে গিয়েছিলেন,  এবং যাওয়ার আগ মুহূর্তে কিছু বিষধর সাপ ছেড়ে দিয়েছিলেন যেনো কোনো মানুষ এই দ্বীপে প্রবেশ করতে না পারে। তবে এই গল্প পৌরাণিক কল্পকাহিনি ছাড়া আর কিছুই না। বিজ্ঞানীদের মতে আটকা পড়ে যাওয়া সাপেদের পরবর্তী বংশবিস্তারে সাপের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পেয়ে ক্রমশ এই অঞ্চল সাপের রাজত্বে পরিণত হয়েছে। 

স্থানীয়দের মধ্যে এই দ্বীপ নিয়ে ভীতির কারণ হলো যারা এই দ্বীপে একবার গেছেন,  তারা কখনোই ফিরে আসেননি।  একবার এক জেলে সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। পরে খিদে পাওয়ায় খাবারের খোঁজে দ্বীপ টিতে প্রবেশ করেন। পরদিনই তার রক্তাক্ত দেহ দ্বীপটিতে পাওয়া যায়। এবং মৃত্যু ঘটেছিল বিষধর সাপের কামড়ে৷ এই ঘটনার পর থেকে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়ে যায়। এবং ‘ওই দ্বীপে গেলে জীবন্ত কেউ ফেরে না’ এই ধারণাটা আরও চেপে বসে সবার মধ্যে। 

সাধারণ বিষধর সাপের পাশাপাশি এই দ্বীপে আছে গোল্ডেন লেন্থহেড।  যা ভয়ংকর বিষধর। এই সাপের বিষ মানুষের শরীরে প্রবেশে পর মাংসপেশিতে আঘাত হানে এবং অল্প সময়ের মধ্যে ওই ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। এই সাপের বিষের  কোনো প্রতিষেধক নেই। তাই এর কামড়ে মৃত্যু নিশ্চিত।  এই ধরনের সাপের প্রজাতি কেবলমাত্র এই দ্বীপেই পাওয়া যায়। সাপগুলো লম্বায় যে খুব একটা বড় হয় তা কিন্তু নয়, ৭০ সেন্টিমিটার থেকে বড়জোড় ১১৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে পারে। 

এই সাপেদের প্রধাণ খাদ্য হলো পোকামাকড় এবং পাখি। গাছপালা এবং সবুজ প্রাকৃতিক শোভার জন্য অনেক অতিথি পাখিরা এই দ্বীপে আসে। তবে এদের অধিকাংশই সাপের শিকার হয়। এই দ্বীপের বড় আকৃতির তেলাপোকা, আর অন্যান্য কীট-পতঙ্গ এই সাপেদের খাদ্য৷ বর্তমানে এই দ্বীপে আর কোনো প্রাণীর উপস্থিতি নেই। 

এই দ্বীপে শেষ মানুষের বসতি ছিল ১৯০০-১৯২০ সালের দিকে। তাও এই দ্বীপে থাকা একটি মাত্র উঁচু লাইটহাউজ দেখাশোনা করার জন্য একজন।  লাইট হাউজের দেখভালের এবং জাহাজের দিকনির্দেশনা প্রদানের জন্য এক ব্যক্তি এই লাইট হাউজে তার পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন কিন্তু জানা যায় ওই লোকের এবং তার পুরো পরিবারের মৃত্যু ঘটে সাপের কামড়ে।  সেই থেকে এখন অবদি স্থায়ী ভাবে ওই দ্বীপে কেউ বসবাস করে না। বছরে একবার অনুমতি নিয়ে লাইটহাউজের মেরামত বা ব্যাটারি পরিবর্তন করার জন্য নৌবাহিনীর কিছু লোক এবং কিছু বিজ্ঞানী বিশেষজ্ঞরা আসেন, তাও সব ধরণের সুরক্ষা সরঞ্জাম নিয়ে। 

এই দ্বীপে যেতে প্রায় সময় লাগে ৫-৬ ঘন্টা, অর্থাৎ সাপের কামড় খেয়ে যদি হাসপাতালের উদ্দেশ্যে কেউ রওনা দেয় তাহলে পথের মাঝেই তার মৃত্যু নিশ্চিত।  তবে সাপের বিষ নিয়ে গবেষণার জন্যে একটি বায়োফার্মাসিটিকেল গবেষণা কেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছে অনেক বছর ধরে। সেই গবেষণা কেন্দ্রে কর্মরত মার্সেলো ডুয়ার্তে নামে একজন স্থানীয় বায়োলোজিস্ট গবেষণার কাজে ২০ বারের বেশি এই দ্বীপে গিয়েছেন। ধারণা করা হয়ে থাকে, এখানে দুই হাজারের উপর গোল্ডেন লেন্সহেড রয়েছে এবং দিন দিন এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কিন্তু মার্সেলোর মতে এখানে সাপের সংখ্যা দিন দিন কমেই চলেছে। বিগত ১৫ বছরে প্রায় ১৫ শতাংশ সাপ কমেছে। 

এই সাপ কমে যাওয়ার পিছনে দুইটা কারণ চিহ্নিত করেছেন গবেষকরা। প্রথমত অন্যপ্রাণীদের বসবাস না থাকায় সাপেদের খাদ্য সংকট। দ্বিতীয়ত এক দল সাপ পাচারকারী,  যারা নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই দ্বীপে আসেন সাপ শিকার করতে। এই জঙ্গলের বিষাক্ত সাপগুলো মূলত গবেষণার জন্যে ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে এবং শুধুমাত্র গবেষকরাই উপযুক্ত অনুমতি নিয়ে এই জঙ্গলে আসতে পারে। কিন্তু এই সাপের বিষের বেশ চাহিদা রয়েছে বিশ্ব বাজারে। একজন চোরাচালানকারীর মতে, একেকটি গোল্ডেন স্নেক বিশ থেকে পঁচিশ হাজার ডলার পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে আন্তর্জাতিক বাজারে। তাছাড়া গবেষণা ক্ষেত্রে সাপেদের বিষ থেকে তৈরি হচ্ছে হৃৎপিণ্ডের অসুখ এবং ক্যান্সারের মতো ভয়াবহ রোগের নানা প্রতিষেধক। 




প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭