লিভিং ইনসাইড

মধ্যযুগীয় কায়দায় ঘুম

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 18/01/2018


Thumbnail

ঘুম জীবনের সবচেয়ে আরামদায়ক আর অনেক ভালোলাগার বিশ্রাম। ঘুমালে দুনিয়ার যাবতীয় সব অবসাদ, মন্দলাগা দূর হয়ে যায়। কিন্তু অনেককেই বলতে শোনা যায় যে তাদের ঘুম ভালো হয়না। চোখ বুজলেই রাজ্যের চিন্তা এসে ভর করে। তাই রাতের পর রাত জেগে পার করে দেন অনেকেই।

এই পরিস্থিতিতে ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সাশা হ্যান্ডলি ইংল্যান্ডের মধ্যযুগের টিউডর সময়ের (১৪৮৫-১৬০৩) ঘুমের ধরণ নিয়ে গবেষণা করেছেন। সেই গবেষণায় তিনি এমন কিছু কৌশল বা ধরণ দেখতে পেয়েছেন ভালো ঘুমের জন্য যা মধ্যযুগে ইংল্যান্ডের টিউডর যুগের মানুষরা ব্যবহার করতো। এ থেকে হয়তো আধুনিক যুগের মানুষরাও ভালো ঘুমের কিছু পরামর্শ পেতে পারেন।

কিছু কৌশল শুনতে কিছুটা অবাক লাগলেও ঘুমে সমস্যা হলে চেষ্টা করে দেখা যেতেই পারে। আসুন দেখে নিই মধ্যযুগীয় কায়দায় ঘুম:

ড. হ্যান্ডলি বলছেন, টিউডর সময়ে মোবাইল ফোন বা টেলিভিশন না থাকলেও তারা এ সময় অন্য কোন কাজেও সময় দিতো না। কখনো কখনো বিছানায় বসে বা বিছানার পাশে তারা প্রার্থনা করতো বা শুয়ে বই পড়তো। অনেক সময় নারীরা ঘুমানোর আগে সুই সুতো বা কাটা দিয়ে উলের কাপড় বুনতেন। এ ধরনের কাজ মাথাকে ঠাণ্ডা করে যা অনেকটা ধ্যানের মতো। ঘুমের সমস্যায় রয়েছেন, এমন অনেককে এ ধরনের কাজের পরামর্শ দিচ্ছেন ঘুম বিজ্ঞানীরা।

মধ্যরাতে একবার জেগে ওঠা
মধ্যরাতে একবার ঘুম ভেঙ্গে যাওয়া ভালো লক্ষণ যা টিউডর যুগেও ছিল বলে দেখতে পেয়েছেন ড. হ্যান্ডলি। তিনি বলছেন, প্রাক শিল্প যুগে মানুষজন দুইভাগে ঘুমাতো। অনেকে মধ্যরাতে ঘুম ভেঙ্গে উঠে মোমের আলোয় বই পড়তো বা চাঁদের আলোয় হাটাহাটি করতো। তারা হয়তো রাতে জেগে চার্চের ঘণ্টা শুনতো। সুতরাং রাত ১টা কি ২টার সময় ঘুম ভেঙ্গে খানিকক্ষণ সজাগ থাকা একেবারে খারাপ কিছু নয়।

ভালো খাবার খাওয়া
ভালো ঘুমের সঙ্গে ভালো খাবারের সম্পর্ক রয়েছে। মধ্যযুগের টিউডোররা জানতো তাদের ভালো খাবার কি হওয়া উচিত এবং অতিরিক্ত খাবার ঘুমের ওপর কতটা প্রভাব ফেলবে। ড. হ্যান্ডলি বলছেন, বিশেষ করে ঘুমের আগের খাবারের বিষয়ে তারা খুব সতর্ক ছিল। তারা এমন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতেন যা খানিকটা ঠাণ্ডা ধরণের। বিশেষ করে তারা অনেক শসা খেতেন। কারো কারো মধ্যে খানিকটা অপিয়াম খাওয়ারও প্রবণতা ছিল।

শয়নকক্ষের চিন্তা ঝেড়ে ফেলা
শুধু শোবারঘরে ঘুমানোর চিন্তাটি আধুনিক যুগের একটি ব্যাপার। কিন্তু টিউডর যুগে পুরো বাড়িটি ঘুমানোর একটি জায়গা হিসাবে ভাবা হতো। ড.হ্যান্ডলি বলছেন, তারা যেকোনো কক্ষেই ঘুমাতে পারতো। নিজেদের স্বাতন্ত্র্য নিয়ে তাদের খুব বেশি চিন্তা ছিল না। তারা হয়তো তাদের বিছানা অন্য অনেকের সঙ্গে ভাগ করে নিতেন। তাতে কখনো কখনো বিপদও ঘটতো।

বিছানার কাছে গোবর রাখা!
মধ্যযুগের ঘুমের ধরণ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে ড. হান্ডলি দেখতে পেয়েছেন, তারা পোকামাকড়ের কামড়ের ব্যাপারে খুব সচেতন ছিলেন। অনেকে গোলাপের তেল শরীরে মাখিয়ে রাখতেন। আবার গ্রাম এলাকায় অনেকে বিছানার কাছে বা পায়ের দিকে গরুর শুকনো গোবর বেধে রাখতেন, যাতে পোকামাকড় তাদের শরীরে না এসে সেদিকে চলে যায়। আধুনিক যুগে গোবর প্রয়োজন নেই, শয়ণকক্ষ কিটপতঙ্গ মুক্ত হলেই চলবে।

পরিপূর্ণ বিশ্রাম নেওয়া
আধুনিক যুগের তুলনায় টিউডর যুগের মানুষরা তাদের বিশ্রামের ব্যাপারে খুবই সচেতন ছিলেন। তারা ঘুমের প্রস্তুতির জন্য অনেক সময় নিতেন। তাঁরা সব ধরনের কাজ থেকে আস্তে আস্তে গুটিয়ে নিতেন এবং শুধুমাত্র ঘুমের দিকেই মনোযোগ দিতেন। অনেকে ঘুমের আগে ধ্যানের মাধ্যমে মাথা থেকে সব চিন্তা সরিয়ে দিতেন। এখন যেমন সব যন্ত্রপাতি বন্ধ করা আর কৃত্রিম আলো থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া ভালো ঘুমের একটি উপায় হতে পারে।

বাচ্চাদের মতো ঘুমানো
রাতের বেলায় ঘুমাতে যাওয়ার সময় অন্য কাজে ব্যস্ত থাকা একদম উচিত না। কেউ প্রার্থনা করেন, কেউ লেখালেখি করেন বা পাবে-রেস্তোরায় সময় কাটান। কিন্তু এতে ঘুমানোর সময়টা কমে। তাই ড. হ্যান্ডলি পরামর্শ দিচ্ছেন, সবার শিশুদের মতো করে ঘুমানো উচিত।


সূত্র: বিবিসি।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচ/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭