ইনসাইড পলিটিক্স

'এই ছেলেই বিএনপিকে শেষ করবে'


প্রকাশ: 21/08/2022


Thumbnail

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট। বিকেলে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে। ইতিহাসের অন্যতম জঘন্যতম নারকীয় তাণ্ডব ঘটানো হয় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায়। বিএনপির অনেক নেতাই এই ঘটনা সম্বন্ধে জানতেন না। এই ঘটনার পুরো পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল হাওয়া ভবন থেকে তারেক জিয়ার একক কর্তৃত্বে। সঙ্গে ডিজিএফআইয়ের তত্কালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী এবং এনএসআইকে যুক্ত করা হয়েছিল। বিদেশ থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল মেজর ডালিম, রশিদকে। কারাগার থেকে মুক্ত করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আসামীদেরকে। আর সবাই মিলেই পরিকল্পনা নিয়েছিল শেখ হাসিনাকে হত্যাকাণ্ডের জন্য। আর এই হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য জঙ্গিদের কাছ থেকে নিয়ে আসা হয়েছিল সর্বাধুনিক গ্রেনেড এবং অন্যান্য অস্ত্রশস্ত্র। গ্রেনেড হামলার ঘটনাটি যখন ঘটে তখন বিএনপির সিনিয়র মন্ত্রীদের অনেকেই দপ্তরে ছিলেন। সাদেক হোসেন খোকা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন যে, তিনি তখন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের দায়িত্ব একই সাথে পালন করছিলেন। তিনি সেসময় মন্ত্রণালয়ে ছিলেন। মন্ত্রণালয়ে থাকা অবস্থায় তার কাছে খবর আসে যে, বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনা জানার পর পরই তিনি ছুটে আসেন নয়া পল্টনে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে। সেখানে তিনি টেলিফোন করেন সেই সময়কার মন্ত্রী তরিকুল ইসলামকে। তরিকুল ইসলাম তখন তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। সে সময় তিনি মন্ত্রণালয়ে ছিলেন। তিনিও দলীয় কার্যালয়ে আসেন মিনিট দশেকের মধ্যে।

দুইজন মিলে আলাপ-আলোচনা, পরামর্শ করেন এবং তারপরই স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরকে ডেকে পাঠানো হয় নয়া পল্টনের দলীয় কার্যালয়ে। বাবর এসে ঘটনার আদ্যোপান্ত বিবরণ দেন। বাবর জানান যে, 'ভাইয়া' এর নির্দেশে এই ঘটনাটি ঘটানো হয়েছে। তিনি ঘটনা ঘটার কিছুক্ষণ আগে বিষয়টি সম্বন্ধে জানতেন। সাদেক হোসেন খোকা মাথায় হাত দেন। তরিকুল ইসলাম বলেন, সর্বনাশ যা হওয়ার হয়েই গেছে। সেখান থেকেই সাইফুর রহমানকে ফোন করেন তরিকুল ইসলাম। সাইফুর রহমান সেই সময় একটি ব্যক্তিগত সফরে সিলেটে ছিলেন। সিলেট থেকে তিনি ঢাকায় এসে কথা বলবেন বলে জানান এবং বেগম খালেদা জিয়ার সাথে যোগাযোগ করবেন বলেও তিনি সাদেক হোসেন খোকাকে জানান। বিএনপির মহাসচিব সেসময় ছিলেন আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া। আব্দুল মান্নান ভূঁইয়া সেদিন ব্যক্তিগত কাজে নরসিংদীতে ছিলেন। তাকে ফোন করেন সাদেক হোসেন খোকা। সাদেক হোসেন খোকা তাকে ঘটনা বলার আগেই মান্নান ভূঁইয়া বলেন যে, আমি ঘটনা শুনেছি। এই ঘটনার মাশুল দিতে হবে আমাদেরকে। মান্নান ভূঁইয়া জানান যে, ম্যাডামের সাথে কথা হয়েছে। রাত ন'টায় ম্যাডামের বাসায় যেতে হবে। বেগম খালেদা জিয়া তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং শহীদ মইনুল রোডের বাসায় থাকেন। রাত ন'টায় বিএনপির এই শীর্ষস্থানীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবনে যান। এসময় সাদেক হোসেন খোকা দলীয় কার্যালয়ে ছিলেন। সাদেক হোসেন খোকা দলীয় কার্যালয়ে তরিকুল ইসলাম কে বলেন, এই ছেলেই বিএনপিকে ডোবাবে। এ ধরনের ঘটনা অবিশ্বাস্য এবং এর মাশুল বিএনপিকে দিতে হবে।

তরিকুল ইসলাম তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন এবং তিনি বলেন যে, এখন বিএনপি যদি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার না করে তাহলে বিএনপি ইতিহাস থেকে নিঃশেষিত হয়ে যাবে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেনা। পরে বেগম খালেদা জিয়ার বাসভবনে বৈঠকে মিলিত হন সাইফুর রহমান, মান্নান ভূঁইয়া, সাদেক হোসেন খোকা এবং তরিকুল ইসলাম। এ বৈঠকে বেগম খালেদা জিয়াকে পুরো পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন মান্নান ভূঁইয়া। সাদেক হোসেন খোকা বলেন যে, এই সময় তারেকের বিদেশে চলে যাওয়া উচিত এবং রাজনীতি থেকে তার এখন একটু বিরত থাকাই উচিত। এই কথায় বেগম খালেদা জিয়া ক্ষুব্ধ হয়ে যান। তিনি বলেন যে, আমার ছেলের বিচার কে করবে? বাংলাদেশে এত বড় সাহস কার হলো? সাইফুর রহমান বলেন যে, বিচারটি বড় বিষয় নয়। বিষয় হলো এই ঘটনার আঘাত বিএনপিকেই সইতে হবে। কারণ আজ-কাল হোক, এই ঘটনা জানাজানি হবে। তখন বিএনপি একটি রাজনৈতিক সঙ্কটে পড়বে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া এই সমস্ত বক্তব্য ক্ষুব্ধ রােষে নাকচ করে দেন। তিনি বলেন যে, যা করার সব আমি করবো। আপনারা এই ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন। বলেন যে, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। বাকিটা দেখার দায়িত্ব আমার। বেগম খালেদা জিয়ার এই বৈঠক চলাকালে সেখানে তারেক এবং রেজ্জাকুল হায়দার প্রবেশ করেন। বেগম খালেদা জিয়া মন্ত্রীদের বলেন, আপনাদেরকে যেটা বলছি, সেটা করেন। কাউকে কিছু বলতে হবে না। এই বলে তিনি তাদেরকে বিদায় করেন। এরপর তারেক জিয়া এবং রেজ্জাকুল হায়দারের সঙ্গে বৈঠকে বসেন বেগম খালেদা জিয়া। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনার পর সাদেক হোসেন খোকা একাধিক ব্যক্তিকে এই ঘটনার আদ্যোপান্ত বিবরণ দিয়েছিলেন এবং তিনি যে কথাটি বলেছিলেন, এই ছেলেই বিএনপিকে শেষ করবে তা এখন সত্য হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মাশুল দিতে হচ্ছে বিএনপিকে। সেই যে রাজনৈতিক বিভক্তি, সেই বিভক্তিই বাংলাদেশের রাজনীতিতে সমঝোতার সব পথ রুদ্ধ করে দিয়েছিল। সেই প্রতিহিংসার রাজনীতির আগুনে এখন পুড়ছে বিএনপি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭