ইনসাইড আর্টিকেল

হারিয়ে যাচ্ছে আদিবাসী ভাষা, ধরে রাখার চেষ্টা করছেন কেউ কেউ


প্রকাশ: 22/08/2022


Thumbnail

একটি শিশু জন্মের পর যখন সে কথা বলতে শিখে তার মাধ্যম থাকে মাতৃভাষা। অর্থাৎ জন্মের পর মানুষ মায়ের মুখ থেকে কথা বলতে শেখে সেটাই মাতৃভাষা। প্রথমত বাবা-মা শব্দগুলো থেকে শুরু হলেও ধীরে ধীরে শিশুটি তাঁর মনের সকল ভাবই মাতৃভাষার মাধ্যমে প্রকাশ করে। বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষের প্রধান ভাষা বাংলা হলেও দেশের নানা প্রান্তে বিশেষ করে উপজাতিরা ব্যবহার করে থাকে ভিন্ন ধরনের ভাষা, যাদেরকে আমরা আদিবাসী হিসেবে চিনি। আদিবাসীদের ভাষা, খাদ্যভাস, সংস্কৃতি সব কিছুই অনন্য। জন্মের পর থেকেই তারা স্বাছন্দে তাদের ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করতে শিখেছে। সেইসাথে পরিচিত হয়েছে তাদের নিজস্ব সংস্কৃতির সাথে। তবে তাদের এই ভাষা আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। আমরা সর্বোক্ষেত্রে বাংলা পাশাপাশি যেমন ইংরেজীকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি ঠিক একই ভাবে তাদের ভাষাটাকে প্রাধান্য না দেওয়ায় আজ তাদের মাতৃভাষা বিবর্ণরূপ ধারণ করেছে।

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ১৫ লাখ ৮৭ হাজার। এদের মধ্যে অধিকাংশরাই বসবাস করে পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং ময়মনসিংহ , সিলেট ও রাজশাহী অঞ্চলে । বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী হল চাকমা। এছাড়া রয়েছে গারো, মারমা, ম্রো, খেয়াং, চাক, বম, লুসাই, পাংখোয়া, ত্রিপুরা, সাঁওতাল,মনিপুরী ইত্যাদি। আর এদের মধ্যে য়েকটি জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা হুমকির মুখে পড়েছে, তালিকায় রয়েছে-খাড়িয়া, কড়া, সৌরা, মুন্ডারি, কোল, মালতো, খুমি, পাংখোয়া, রেংমিটচা, চাক, খিয়াং, লুসাই ও পাত্র। এই ১৪টি জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষাকে আন্তর্জাতিক মানদন্ডানুযায়ী বিলুপ্ত প্রায় ভাষা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এইদিকে আমরা দেখতে পাই সিলেটে বিভাগের চা বাগান আর পাহাড়ি টিলার বিভিন্ন স্থানে বসবাস করা বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠি ও ভাষাভাষির মানুষ রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা বৈচিত্র্যপূর্ণ সংস্কৃতি, ইতিহাস, ধর্মীয় ঐতিহ্য, কৃষ্টি, প্রথা ও উৎসব বাঙালিদের মুগ্ধ করলেও নিজেদের নানা সমস্যার মধ্যে হারিয়ে যেতে বসেছে এসব জাতিগোষ্ঠির নিজস্ব মাতৃভাষা। এদিকে, বিলুপ্তির পথে টাঙ্গাইলের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষা। নিজস্ব ভাষা বিষয়ক শিক্ষকের অভাব যেমন রয়েছে তেমনি বাঙালি জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে নিয়মিত চর্চা না থাকায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। এছাড়াও পার্বত্য অঞ্চলের অনেক জায়গায় এখন আদিবাসীদের ভাষা প্রায় বিলুপ্তির পথে। এর একটাই প্রধান কারণ, দীর্ঘদিন ধরে এসব বর্ণমালার ব্যবহার ও সংরক্ষণের কোনও উদ্যোগ না থাকায় এবং প্রাথমিক শিক্ষায় সেগুলোর পরিচয় বা চর্চা না করায় হারিয়ে যাচ্ছে এই সম্প্রদায়ের ভাষা। তবে যদি প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় আদিবাসীদের বর্ণমালার পাঠ পরিচিতি এবং প্রযুক্তিতে এসব বর্ণমালা সংযুক্ত করা হয় তাহলে হয়তো তাদের এ মাতৃভাষাকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে।

ঠিক এমনই কয়েকজন আছেন যারা চেষ্টা ক্রে যাচ্ছেন আদিবাসীদের এ ভাষা বাঁচিয়ে রাখার জন্য। আর তাঁর জন্য বের করেছে কিছু বই। যেমন ম্রো বা মুরং সম্প্রদায় বাংলাদেশের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষুদ্র একটি সম্প্রদায়। অন্যান্য আদিবাসী সম্প্রদায়গুলোর তুলনায় পিছিয়ে থাকা এই সম্প্রদায়টির জন্য অন্যরকম এক অনুভুতি নিয়ে এবারের গ্রন্থ মেলায় হাজির হয়েছে বিদ্যানন্দ প্রকাশনী।

প্রথমবারের মত বিদ্যানন্দ ফাউন্ডেশনের বিদ্যানন্দ প্রকাশনী প্রকাশ করেছে আদিবাসী সম্প্রদায় মুরং এর নিজস্ব ভাষায় রচিত বই ‘ম্রো রূপকথা’। এটিই ম্রো ভাষায় প্রকাশিত প্রথম কোন গল্পের বই। এছাড়াও তাদের ভাষা বাঁচিয়ে রাখতে২০১২ সালে বাংলাদেশ সরকার সকল শিশুর মাতৃভাষায় শিক্ষালাভ নিশ্চিত করতে প্রথম ধাপে পাঁচটি নৃগোষ্ঠীর মাতৃভাষায় প্রাক-প্রাথমিক স্তরের পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন এবং অনুযায়ী শিশুদের পড়াশোনা শুরুর উদ্যোগ গ্রহণ করে।

প্রথমে পার্বত্য অঞ্চলের চাকমা, মারমা ও ত্রিপুরা এবং সমতলের সাদরি ও গারো এই পাঁচটি ভাষায় প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। দ্বিতীয় ভাগে ম্রো, মণিপুরি, তঞ্চঙ্গ্যা, খাসি, বমসহ ছয়টি ভাষায় এবং তৃতীয় ভাগে কোচ, ওঁরাও (কুড়–ক), হাজং, রাখাইন, খুমি ও খ্যাং ভাষার পর অন্য ভাষাতেও প্রাথমিক শিক্ষা চালু করা হবে বলে জানানো হয়।

এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে  ৫টি ভাষায় প্রাক-প্রাথমিকের আদিবাসী শিশুদের হাতে নিজ নিজ ভাষার বই তুলে দেওয়ার কথা বলা হয়। তবে তা তখন সম্ভব না হলেও ২০১৭ সালে তা সম্ভব হয়। কিন্তু ওই ভাষার শিক্ষক বা প্রশিক্ষিত শিক্ষক না থাকায় মাতৃভাষায় শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন হচ্ছে না।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭